লগইন করুন
উক্ত গারানীক্ব কাহিনী পুরাপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। এর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে মিথ্যা তোহমত চাপানো হয়েছে মাত্র। কেননা আল্লাহর ‘অহি’ ব্যতীত তিনি কুরআনের কোন কিছুই বর্ণনা করেননি (নাজম ৫৩/৩-৪)। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এরূপ মিথ্যা বর্ণনা থেকে তিনি সর্বদা নিরাপদ ও মা‘ছূম (হামীম সাজদাহ ৪১/৪১)। অতএব উক্ত বিষয়ে তাঁর নামে প্রচলিত কাহিনী পবিত্র কুরআন ও ইসলামের তাওহীদী আক্বীদার বিরোধী হওয়ায় পরিত্যক্ত। ছহীহ হাদীছ সমূহে এসবের কোনই ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয় বিষয়টি এই যে, মুবারকপুরীর বক্তব্য অনুযায়ী ৫ম হিজরীর রামাযান মাসে (আর-রাহীক্ব ৯৩ পৃঃ) এই ঘটনা কিভাবে সম্ভব? অথচ পঠিত সূরা নাজম ১৩-১৮ আয়াতে মে‘রাজের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যা হিজরতের কিছুদিন পূর্বে ১৩ নববী বর্ষে সংঘটিত হয় বলে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে প্রমাণিত।
বস্ত্ততঃ শয়তানের এ ধোঁকাবাজি মক্কা ও মদীনায় সর্বদা চালু ছিল। যেমন মাদানী সূরা হাজ্জ-এর ৫২ আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُوْلٍ وَلاَ نَبِيٍّ إِلاَّ إِذَا تَمَنَّ أَلْقَى الشَّيْطَانُ فِي أُمْنِيَّتِهِ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ آيَاتِهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ‘আমরা তোমার পূর্বে যেসব রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই লোকদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হ’তে কিছু পাঠ করেছে, তখনই শয়তান তার পাঠে নতুন কিছু নিক্ষেপ করেছে। অতঃপর শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। অতঃপর আল্লাহ তার আয়াতসমূহকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (হাজ্জ ২২/৫২)।
অনেক মুফাসসির গারানীক্ব কাহিনীকে সূরা হজ্জ ৫২ আয়াতের শানে নুযূল হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা ঠিক নয়। কেননা উক্ত কাহিনী ছিল মক্কার এবং অত্র আয়াত নাযিল হয়েছে মদীনায়। জিন শয়তান সরাসরি অথবা তাদের দোসর মানুষ শয়তান এগুলি করে থাকে। তারা সর্বদা ইলাহী বিধানের বিরুদ্ধে তাদের চাকচিক্যময় কথার মাধ্যমে সন্দেহবাদ আরোপ করে ও মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব থেকে বের করে শয়তানের তথা নিজেদের দাসত্বে ফিরিয়ে নেয়। এ বিষয়ে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে মক্কাতেই সাবধান করেছেন। যেমন মাক্কী সূরা আন‘আমের ১১২ আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ ‘এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথা দ্বারা প্ররোচনা দেয়। যদি তোমার প্রভু চাইতেন, তাহ’লে তারা এটা করতে পারতো না। অতএব তুমি ওদেরকে ও ওদের মিথ্যা অপবাদসমূহকে ছেড়ে চল’ (আন‘আম ৬/১১২)। আজও ইসলামের সত্যিকারের খাদেমদেরকে উক্ত নীতি মেনে চলতে হবে এবং বাতিল হ’তে দূরে থেকে দ্বীনী দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। কেননা বাতিলের সঙ্গে মিশে থেকে বা আপোষ করে কখনো হক পালন বা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।[1]