লগইন করুন
নবুঅত লাভের সময়কাল যতই ঘনিয়ে আসতে লাগল, ততই তাঁর মধ্যে নিঃসঙ্গপ্রিয়তা বাড়তে থাকল। এক সময় তিনি কা‘বাগৃহ থেকে প্রায় ৬ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্বে হেরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ১২*৫১/৪*৭ বর্গফুট আকারের ছোট গুহার নিরিবিলি স্থানকে বেছে নিলেন। বাড়ী থেকে তিনি পানি ও ছাতু নিয়ে যেতেন। ফুরিয়ে গেলে আবার আসতেন। কিন্তু বাড়ীতে তার মন বসতো না। কখনো কখনো সেখানে একটানা কয়েকদিন কাটাতেন। তাঁর এই ইবাদত কতদিন ছিল, সেটির ধরন কেমন ছিল, সে বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায় না। অতঃপর রবীউল আউয়ালের জন্ম মাস থেকে শুরু হয় ‘সত্যস্বপ্ন’ (الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ) দেখা। তিনি স্বপ্নে যাই-ই দেখতেন তাই-ই দিবালোকের ন্যায় (مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ) সত্য হয়ে দেখা দিত’ (বুখারী ফৎহসহ হা/৪৯৫৩)। এভাবে চলল প্রায় ছয় মাস। যা ছিল ২৩ বছরের নবুঅতকালের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। হাদীছে সম্ভবতঃ একারণেই সত্যস্বপ্নকে নবুঅতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে।[1]
এসে গেল রামাযান মাস। পূর্বের ন্যায় এবারেও তিনি পুরা রামাযান সেখানে ই‘তিকাফে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। স্বগোত্রীয় লোকদের পৌত্তলিক ও বস্ত্তবাদী ধ্যান-ধারণা তাঁকে পাগল করে তুলত। কিন্তু তাদের ফিরানোর কোন পথ তাঁর জানা ছিল না।
মূলতঃ হেরা গুহায় নিঃসঙ্গ অবস্থানের বিষয়টি ছিল আল্লাহর দূরদর্শী পরিকল্পনা ও মহতী ব্যবস্থাপনারই অংশ। ইবনু আবী জামরাহ (ابن أبي جَمْرَة) বলেন, এর মধ্যে তিনটি ইবাদত এক সাথে ছিল। (১) নির্জনবাস (২) আল্লাহর ইবাদত এবং (৩) সেখান থেকে কা‘বাগৃহ দেখতে পাওয়া। ইবনু ইসহাক বলেন, ‘এভাবে নিঃসঙ্গ ইবাদত জাহেলিয়াতের রীতি ছিল। তাঁর কওম পূর্ব থেকেই যেমন আশূরার ছিয়াম পালন করত, তেমনি হেরা গুহায় নিঃসঙ্গ ইবাদত করত। আব্দুল মুত্ত্বালিব এটি প্রথম করেন’।[2] বরং এটি ছিল ইবরাহীমী ইবাদতের (فَالتَّحَنُّثُ مِنْ بَقَايَا الِْإِبْرَاهِيْمِيَّةِ) অবশিষ্টাংশ’ (সীরাহ ছহীহাহ ১/১২৩-টীকা)। যার মাধ্যমে আল্লাহভীরু বান্দার মধ্যে অধ্যাত্ম চেতনার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটা সম্ভব হয়। এভাবে হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় একদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী নিয়ে জিব্রীল (আঃ) এসে হাযির হন।
[2]. বুখারী ফৎহসহ হা/৬৯৮২-এর আলোচনা; ইবনু হিশাম ১/২৩৫।