লগইন করুন
জন্মের পর শিশু মুহাম্মাদ কিছুদিন চাচা আবু লাহাবের দাসী ছুওয়াইবার দুধ পান করেন। তাঁর পূর্বে চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এবং তাঁর পরে আবু সালামাহ তার দুধ পান করেন।[1] ফলে তাঁরা সকলে পরস্পরে দুধভাই ছিলেন।
এ সময় পিতা আব্দুল্লাহ্র রেখে যাওয়া একমাত্র মুক্তদাসী উম্মে আয়মন রাসূল (ছাঃ)-কে শৈশবে লালন-পালন করেন। এরপর ধাত্রী হালীমা সা‘দিয়াহ তাঁকে প্রতিপালন করেন। অতঃপর হালীমার গৃহ থেকে আসার পর মা আমেনা তাকে সাথে নিয়ে মদীনায় স্বামীর কবর যিয়ারত করতে যান এবং ফেরার পথে মৃত্যুবরণ করলে কিশোরী উম্মে আয়মন শিশু মুহাম্মাদকে সাথে নিয়ে মক্কায় ফেরেন। পরে খাদীজা (রাঃ)-এর মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহ্র সাথে তার বিয়ে হয়। অতঃপর তার গর্ভে উসামা বিন যায়েদের জন্ম হয়। রাসূল (ছাঃ) উম্মে আয়মানকে ‘মা’ (يَا أُمَّهْ) বলে সম্বোধন করতেন এবং নিজ পরিবারভুক্ত (بَقِيَّةُ أَهْلِ بَيْتِي) বলতেন। তিনি তাকে ‘মায়ের পরে মা’ (أُمِّي بَعْدَ أُمِّي) বলে সম্মানিত করতেন।[2]
সে সময়ে শহরবাসী আরবদের মধ্যে এই ধারণা প্রচলিত ছিল যে, শহরের জনাকীর্ণ পংকিল পরিবেশ থেকে দূরে গ্রামের নিরিবিলি উন্মুক্ত পরিবেশে শিশুদের লালন-পালন করলে তারা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হ’তে মুক্ত থাকে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুঠাম ও সবল হয়। সর্বোপরি তারা বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়। সে হিসাবে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ধাত্রী হিসাবে পরিচিত বনু সা‘দ গোত্রের হালীমা সা‘দিয়াহকে নির্বাচন করেন এবং তার হাতেই প্রাণাধিক পৌত্রকে সমর্পণ করেন। হালীমার গৃহে দু’বছর দুগ্ধপানকালীন সময়ে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। তাদের ছাগপালে এবং অন্যান্য সকল বিষয়ে আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নেমে আসে। নিয়মানুযায়ী দু’বছর পরে বাচ্চাকে ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁকে মা আমেনার কাছে আনা হয়। কিন্তু হালীমা তাকে ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। তিনি আমেনাকে বারবার অনুরোধ করেন আরও কিছুদিন বাচ্চাকে তার কাছে রাখার জন্য। ঐ সময় মক্কায় মহামারী দেখা দিয়েছিল। ফলে মা রাযী হয়ে যান এবং বাচ্চাকে পুনরায় হালীমার কাছে অর্পণ করেন (আর-রাহীক্ব ৫৬ পৃঃ)।
[2]. আল-ইছাবাহ, উম্মে আয়মন ক্রমিক সংখ্যা ১১৮৯৮; ঐ, আল-ইস্তী‘আবসহ (কায়রো ছাপা : ক্রমিক সংখ্যা ১১৪১, ১৩/১৭৭-৮০ পৃঃ, ১৩৯৭/১৯৭৭ খ্রিঃ)।
প্রসিদ্ধ আছে যে, যায়েদ বিন হারেছাহ তেহামার বনু ফাযারাহ কর্তৃক বন্দী হয়ে ওকায বাজারে বিক্রয়ের জন্য নীত হন। সেখান থেকে হাকীম বিন হিযাম তার ফুফু খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ-এর জন্য তাকে খরীদ করেন। রাসূল (ছাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে তার সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেন। অতঃপর খাদীজার সাথে বিবাহের পর তিনি তাকে তাঁর উদ্দেশ্যে হেবা করে দেন।... সেখানে এ কথাও আছে যে, যায়েদের পিতা হারেছাহ এবং তার চাচাসহ পরিবারের কিছু লোক তাকে নেওয়ার জন্য আসেন। তখন আল্লাহর নবী যায়েদকে তার পিতার সঙ্গে যাওয়ার এখতিয়ার দেন’ (ইবনু সা‘দ ৩/৪২)। ইবনু হাজার বলেন, বর্ণনাটি ‘খুবই অপরিচিত’ (منكر جدا)। (মা শা-‘আ ২৩ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, যায়েদ বিন হারেছাহ তার পিতার ৩ সন্তান জাবালাহ, আসমা ও যায়েদ-এর মধ্যে তৃতীয় ও কনিষ্ঠ ছিলেন। এক সময় যায়েদ হারিয়ে যান। পিতা তার জন্য কেঁদে আকুল হন। পরে রাসূল (ছাঃ) তাকে লালন-পালন করেন এবং তিনি ‘মুহাম্মাদের পুত্র’ (زَيْدُ ابْنُ مُحَمَّدٍ) হিসাবে পরিচিত হন (বুখারী হা/৪৭৮২)। পরবর্তীতে সন্ধান পেয়ে তার বড় ভাই জাবালাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যায়েদকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেন, এই তো যায়েদ। তুমি ওকে নিয়ে যাও। আমি মানা করব না। তখন যায়েদ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর কাউকে প্রাধান্য দিব না। জাবালাহ বলেন, (পরবর্তীতে) আমি দেখলাম আমার ভাইয়ের সিদ্ধান্ত আমার চাইতে উত্তম ছিল’ (হাকেম হা/৪৯৪৭-৪৮; তিরমিযী হা/৩৮১৫; মিশকাত হা/৬১৬৫)।