লগইন করুন
কুছাইয়ের পর পর্যায়ক্রমে যখন রাসূল (ছাঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব মক্কার নেতা হন। তিনি পরপর চার রাত্রি স্বপ্নে দেখেন যে, এক ব্যক্তি এসে তাঁকে কূয়া খনন করতে বলছে। চতুর্থ রাত্রিতে তাঁকে কূয়ার নাম ‘যমযম’ ও তার স্থান নির্দেশ করে দেওয়া হয়। তখন আব্দুল মুত্ত্বালিব তাঁর একমাত্র পুত্র হারেছকে সাথে নিয়ে স্থানটি খনন করেন। এ সময় তার অন্যকোন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেনি। কুরায়েশদের সকল গোত্র এই মহান কাজে তাঁর সাথে শরীক হ’তে চায়। তারা বলে যে, এটি পিতা ইসমাঈল-এর কূয়া। অতএব এতে আমাদের সবার অধিকার আছে। আব্দুল মুত্ত্বালিব বললেন, স্বপ্নে এটি কেবল আমাকেই খাছভাবে করতে বলা হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের দাবী মেনে নিতে পারি না’। তখন ঝগড়া মিটানোর জন্য তারা এক গণৎকার মহিলার কাছে বিচার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হেজায ও শামের মধ্যবর্তী উক্ত দূরবর্তী স্থানে পৌঁছার আগেই যখন গোত্রনেতারা পানির সংকটে পড়ে যায় এবং তৃষ্ণায় মৃত্যুর আশংকায় পতিত হয়ে নিজেরা নিজেদের কবর খুঁড়তে শুরু করে, তখন আল্লাহর রহমতে আব্দুল মুত্ত্বালিবের উটের পায়ের তলার মাটি দিয়ে মিষ্ট পানি উথলে ওঠে। যা কওমের সকলে পান করে বেঁচে যায়। এতে তারা কূয়ার উপরে আব্দুল মুত্ত্বালিবের মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যায় এবং তারা সকলে মিলে তার নিকটেই এটি সোপর্দ করে। ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ ছিল যা হযরত আলী (রাঃ) হ’তে ‘হাসান’ সনদে ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেছেন।[1]
এভাবে পানির মালিকানার সাথে সাথে বনু হাশিমের উচ্চ মর্যাদা ও নেতৃত্ব সকলের অন্তরে দৃঢ় আসন লাভ করে। তারা সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং গণৎকার মহিলার কাছে না গিয়েই ফিরে আসেন। যমযম কূপের মালিকানা নিয়ে আর কখনোই ঝগড়া করবেন না বলে তারা প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর থেকে হাজীদের পানি পান করানো (সিক্বায়াহ) ও তাদের খাওয়ানো সহ আপ্যায়ন (রিফাদাহ) করার মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব স্থায়ীভাবে বনু হাশেম-এর উপর ন্যস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কুরায়েশগণ কা‘বা থেকে দূরে বিভিন্ন কূপ খনন করে পানির চাহিদা মিটাতেন (ইবনু হিশাম ১/১৪২-৪৭)।
বনু জুরহুম মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় যমযম কূয়ায় দু’টি সোনার হরিণ, বর্ম, তরবারি ইত্যাদি ফেলে যায়। অতঃপর উক্ত তরবারি উঠিয়ে আব্দুল মুত্ত্বালিব কা‘বাগৃহের দরজা ঢালাই করেন এবং হরিণ দু’টিকে দরজার সামনে রেখে দেন বলে যে সব কথা চালু আছে, তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।[2]
[2]. ইবনু হিশাম ১/১৪৭; বর্ণনাটি যঈফ, তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৪৪; সীরাহ ছহীহাহ ১/৯২; আর-রাহীক্ব ২৮ পৃঃ।