লগইন করুন
কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে মাতৃগণের মর্যাদার জন্য বিশেষভাবে সন্তানধারণ, দুগ্ধপান ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে সাধারণভাবে সংসার-পালন, সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদির সাধারণ সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জালিয়াতগণ তাদের অভ্যাস মত প্রত্যেক কর্ম বা অবস্থার জন্য পৃথক পৃথক আজগুবি ফযীলত ও সাওয়াবের বর্ণনা দিয়ে অনেক হাদীস বানিয়েছে। আমাদের সমাজে এগুলো প্রচলিত। এমনকি এ সকল ভিত্তিহীন কথা দিয়ে বিভিন্ন ছাপানো পোস্টার, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ছাপা হয়।
প্রচলিত একটি পুস্তকে রয়েছে: ‘‘হুজুর (ﷺ) একদিন স্ত্রীলোকদের লক্ষ্য করিয়া বলিয়াছিলেন, যখন কোন স্ত্রীলোক তাহার স্বামী কর্তৃক হামেলা (গর্ভবর্তী) হইয়া থাকে, তখন হইতে প্রসব বেদনা উপস্থিত হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সর্বদা সে স্ত্রীলোকটি দিনে রোযা রাখার ও রাত্রি বেলা নফল নামায পড়ার ছওয়াব পাইবে। আর যখন প্রসব বেদনা উপস্থিত হয় তখন খোদা তায়ালা তাহার জন্য বেহেশতের মধ্যে এমন বস্ত্তসমূহ গচ্ছিত রাখিয়া দেন যে, তাহার সন্ধান পৃথিবী, আকাশ, বেহেশত, দোজখবাসী কেহই অবগত নহেন। আর যখন সন্তান প্রসব করে তখন হইতে দুগ্ধ ছাড়ান পর্যন্ত প্রতি ঢোক দুগ্ধের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তাহাকে একটি করিয়া নেকী দান করিয়া থাকেন। এবং সেই সময়ের মধ্যে তাহার মৃত্যু হইলে শহীদের দরওয়াজা প্রাপ্ত হইবে। আর যদি তাহাকে তাহার সন্তানের জন্য কোন রাত্রি জাগিয়া থাকিতে হয় তবে আল্লাহ তায়ালা তাহাকে ঐ রাত্রি জাগরণের পরিবর্তে ৭০টি গোলাম আজাদ করার ছওয়াব দিয়া থাকেন। তৎপর তিনি ইহাও বলিয়া ছিলেন যে, এই ছওয়াব সমূহ কেবল মাত্র ঐ সমস্ত স্ত্রী লোকদেরকে দেওয়া হইবে যাহারা সর্বদাই খোদার হুকুম ও আপন স্বামীর হুকুম পালন করিয়া আওরাতে হাছীনার অন্তর্ভূক্ত হইতে পারিয়াছে। আল্লাহ ও স্বামীর নাফরমান স্ত্রীলোকদিগকে কখনও ঐ সমস্ত ছওয়াব দেওয়া হইবে না।’’[1]
এ ‘কথাগুলো’ একটি জাল হাদীসের ‘ইচ্ছামাফিক’ অনুবাদ।[2] এছাড়া আরো অনেক আজগুবি, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা হাদীসের নামে লিখে এ সকল পুস্তকের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মসীলিপ্ত করা হয়েছে। এ সকল পুস্তকে ‘হাদীস’ নামে লেখা অধিকাংশ কথাই বানোয়াট ও জাল।
[2] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/১৭৮; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১৭৪-১৭৫; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/২০৩-২০৪, ২১১।