লগইন করুন
ইবনু উমরের (রা:) সূত্রে প্রচারিত একটি জাল কথা:
صَلاَةٌ [صَلاَةُ تَطَوُّعٍ أَوْ فَرِيْضَةٍ] [إنَّ الصَّلاَةَ] بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ خَمْساً وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً وَجُمُعَةٌ بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ سَبْعِيْنَ جُمُعَةً إِنَّ المَلاَئِكَةَ لَيَشْهَدُوْنَ الْجُمُعَةَ مُعْتَمِّيْنَ وَلاَ يَزَالُوْنَ يُصَلُّوْنَ عَلَى أَصْحَابِ الْعَمَائِمِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ
‘‘পাগড়ি সহ (ফরয অথবা নফল যে কোনো) একটি সালাত পচিশ সালাতের সমান এবং পাগড়ি সহ একটি জুমু‘আ ৭০ টি জুমু‘আর সমতুল্য। ফিরিশতাগণ পাগড়ি পরিধান করে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হন এবং সূযাস্ত পর্যন্ত তাঁরা পাগড়ি পরিধানকারীদের জন্য দোয়া করতে থাকেন।’’
ইবনু হাজার আসকালানী, সাখাবী, সুয়ূতী, ইবন আর্রাক, যারকানী প্রমুখ মুহাদ্দিস একে বাতিল ও বানোয়াট হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন।[1]
উল্লেখ্য যে, আল্লামা সুয়ূতী তাঁর সংকলিত ‘আল-জামিউস সাগীর’-এর ভূমিকায় দাবি করেছেন যে, মাউযূ হাদীস তিনি এতে উল্লেখ করবেন না। অথচ তিনি এ গ্রন্থে এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। আবার তিনি নিজেই ‘যাইলুল লাআলী’ বা ‘যাইলুল আহাদীসিল মাউদূ‘আহ’ নামক তাঁর জাল হাদীস বিষয়ক গ্রন্থে এ হাদীসটি সংকলন করেছেন এবং হাদীসটি জাল বলে নিশ্চিত করেছেন।[2] এজন্য হাদীসের সনদবিচার ও জালিয়াতি নির্ণয়ে মুহাদ্দিসগণের সুস্পষ্ট মতামত ছাড়া শুধু ‘উল্লেখ’ করার উপর নির্ভর করা যায় না। মেল্লা আলী কারী তাঁর জাল হাদীস বিষয়ক ‘আল-মাসনূ’ নামক গ্রন্থে উপর্যুক্ত হাদীসটি জাল বলে উদ্ধৃত করেছেন। জাল হাদীস বিষয়ক ‘আল-আসরার আল-মারফূআ’ নামক অন্য গ্রন্থে তিনি হাদীসটির বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যে, আল্লামা আবুল খাইর মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রাহমান সাখাবী (৯০২ হি) এবং আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মানূফী (৯৩ হি) উভয়ে হাদীসটিকে মাউযূ ও বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর এ বিষয়ে নিজের দ্বিধা প্রকাশ করে বলেছেন: ‘‘ইবনু উমারের (রা) এ হাদীসটি সুয়ূতী ‘আল-জামিয়ুস সাগীর’ গ্রন্থে ইবনু আসাকিরের সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন এবং এ গ্রন্থে কোনো মাউযূ হাদীস উল্লেখ করবেন না বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।’’[3]
স্বভাবতই ইমাম সুয়ূতীর প্রতি সু-ধারণা বশত মোল্লা আলী কারী দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছেন। সম্ভবত তিনি ‘যাইলুল লাআলী’ গ্রন্থে হাদীসটির বিষয়ে সুয়ূতীর নিজের মতামত লক্ষ্য করেন নি। শুধু তাই নয়, মোল্লা আলী কারী তার ‘মিরকাত’ গ্রন্থে ‘পাগড়ি’ বিষয়ক আলোচনায় এ হাদীসটি প্রমাণ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। এমনকি এর দুর্বলতা বা এ বিষয়ে ইমাম সাখাবী ও মানূফীর মতামতও উল্লেখ করেন নি।[4]
[2] সুয়ূতী, যাইলুল লআলী, পৃ. ১১০; আল-জামিউস সাগীর ২/১০৮।
[3] মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার আল-মারফূ‘আ, পৃ: ১৪৭।
[4] মোল্লা আলী কারী, মিরকাত ৮/১৪৭।