লগইন করুন
আবু হুরাইরা (রা)-এর নামে বর্ণিত:
رَأَيْتُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَلَنْسُوَةً خُمَاسِيَّةً طَوِيْلَةً
‘‘আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মাথায় একটি লম্বা পাঁচভাগে বিভক্ত টুপি দেখেছি।’’
হাদীসটি আল্লামা আবু নুআইম ইসপাহানী তাঁর সংকলন ‘মুসনাদুল ইমাম আবী হানীফা’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। তিনি বলেন: আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জা‘ফর ও আবু আহমাদ জুরজানী বলেছেন, আমাদেরকে আহমাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসূফ বলেছেন, আমাদেরকে আবু উসামাহ বলেছেন, আমাদেরকে দাহহাক ইবনু হাজার বলেছেন, আমাদেরকে আবু কাতাদাহ হাররানী বলেছেন যে, আমাদেরকে আবু হানীফা বলেছেন, তাঁকে আতা’ আবু হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এ হাদীস বলেছেন।[1]
এ হাদীসটি জাল। ইমাম আবু হানীফা থেকে শুধুমাত্র আবু কাতাদাহ হাররানী (মৃ: ২০৭হি:) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাররানী ছাড়া অন্য কেউ এ শব্দ বলেন নি। ইমাম আবু হানীফার (রাহ) অগণিত ছাত্রের কেউ এ হাদীসটি এ শব্দে বলেন নি। বরং তাঁরা এর বিপরীত শব্দ বলছেন। অন্যান্য ছাত্রদের বর্ণনা অনুসারে ইমাম আবু হানীফা বলেছেন, তাঁকে আতা’ আবু হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাদা শামি টুপি ছিল।[2]
তাহলে আমরা দেখছি যে, অন্যান্যদের বর্ণনা মতে হাদীসটি (قلنسوة شامية) বা ‘শামী টুপি’ এবং আবু কাতাদার বর্ণনায় (قلنسوة خماسية) বা ‘খুমাসী টুপি’। এথেকে আমরা বুঝতে পরি যে, আবু হানীফা বলেছিলেন শামী টুপি, যা তাঁর সকল ছাত্র বলেছেন, আবু কাতাদাহ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ভুল বলেছে। অথবা সে (شامية) শব্দটিকে বিকৃতভাবে (خماسية) রূপে পড়েছে।
সর্বোপরি আবূ কাতাদা পরিত্যক্ত রাবী। ইমাম বুখারী বলেছেন, আবু কাতাদাহ হাররানী ‘মুনকারুল হাদীস’। ইমাম বুখারী কাউকে ‘‘মুনকারুল হাদীস’’ বা ‘‘আপত্তিকর বর্ণনাকারী’’ বলার অর্থ সে লোকটি মিথ্যাবাদী বলে তিনি জেনেছেন। তবে তিনি কাউকে সরাসরি মিথ্যাবাদী না বলে তাকে ‘‘মুনকারুল হাদীস’’ বা অনুরূপ শব্দাবলি ব্যবহার করতেন।
এছাড়া হাদীসটি আবু কাতাদাহ হাররানীর থেকে শুধুমাত্র দাহহাক ইবনু হুজর বর্ণনা করেছেন। দাহহাক ইবনু হুজরের কুনিয়াত আবু আব্দুল্লাহ মানবিজী। তিনিও অত্যন্ত দুর্বল বর্ণনাকারী ছিলেন। তিনি মিথ্যা হাদীস বানাতেন বলে ইমাম দারাকুতনী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন।[3]
এজন্য আল্লামা আবু নু‘আইম ইসপাহানী হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন ‘‘এ হাদীসটি শুধুমাত্র দাহহাক আবু কাতাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। আর কেউই আবু হানীফা থেকে বা আবু কাতাদাহ থেকে তা বর্ণনা করেন নি।’’[4]
[2] মোল্লা আলী কারী, শারহু মুসনাদি আবী হানীফাহ, পৃ: ১৪২।
[3] ইমাম বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর ৫/২১৯; ইবনু আবী হাতিম, আল-জারহু ওয়াত তাদীল ৫/১৯১; যাহাবী, মুগনী ফী আল-দুআফা’ ১/৪৯৩, ৫৭৬; মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৩১৯, ইবনু হাজার আসকালানী, লিসানুল মীযান ৭/৭২।
[4] আবু নু‘আইম, মুসনাদুল ইমাম আবু হানীফা, পৃ: ১৩৭।