লগইন করুন
আমাদের দেশে কুরআন কারীমের বিভিন্ন সূরা বা আয়াত বিষয়ক দু প্রকারের কথা প্রচলিত। এক প্রকারের কথা ফযীলত বা আখিরাতের মর্যাদা, সাওয়াব, আল্লাহর দয়া ইত্যাদি বিষয়ক। দ্বিতীয় প্রকারের কথা ‘তদবীর’ বা দুনিয়ায় বিভিন্ন ফলাফল লাভ বিষয়ক।
উমার আল-মাউসিলীর আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের ফযীলতে কিছু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া প্রচলিত বাকি হাদীসগুলো অধিকাংশই যয়ীফ অথবা বানোয়াট। বিশেষত, তাফসীর কাশ্শাফ ও তাফসীর বায়যাবীর প্রতিটি সূরার শেষে সে সূরার ফযীলত বিষয়ক যে সকল কথা বলা হয়েছে তা মূলত এ বিষয়ক দীর্ঘ জাল হাদীসটি থেকে নেওয়া হয়েছে। আমাদের সমাজে প্রচলিত পাঞ্জ-সূরার ফযীলত বিষয়ক অধিকাংশ কথাই যয়ীফ অথবা জাল। এ বিষয়ক যয়ীফ ও মাউযূ হাদীসের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এগুলোর বিস্তারিত আলোচনার জন্য পৃথক পুস্তকের প্রয়োজন। এ বইয়ের কলেবর ইতোমধ্যেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এজন্য আমরা এ বইয়ে ফযীলত বিষয়ক যয়ীফ ও জাল হাদীসগুলো আর আলোচনা করছি না। বরং এখানে আমল-তদবীর বিষয়ক কিছু কথা উল্লেখ করছি।
কুরআনের আয়াত দ্বারা ঝাড়ফুঁক দেওয়া বা এগুলোর পাঠ করে রোগব্যাধি বা বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য ‘আমল’ করা বৈধ। হাদীস শরীফে ‘কুরআন’ দ্বারা ‘রুক্ইয়া’ বা ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাদীসের দোয়া বা যে কোনো ভাল অর্থের বাক্য দ্বারা ঝাড়ফুঁক দেয়া বৈধ।
ঝাড়ফুঁক বা তদবীর দুই প্রকারের। কিছু ঝাড়ফুঁক বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ প্রকারের ঝাড়ফুঁক ও আমল সীমিত। আমাদের সমাজে অধিকাংশ ঝাড়ফুঁক, আমল ইত্যাদি পরবর্তী যুগের বুযুর্গদের অভিজ্ঞতার আলোকে বানানো। যেমন, অমুক সূরা বা অমুক আয়াতটি এত বার বা এত দিন বা অমুক সময়ে পাঠ করলে অমুক ফল লাভ হয় বা অমুক রোগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এইরূপ সকল আমল বা তদবীরই বিভিন্ন বুযুর্গের অভিজ্ঞতা প্রসূত।
কেউ ব্যক্তিগত আমল বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ‘তদবীর’ বা ‘রুকইয়া শরঈয়্যা’ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলির কোনো খাস ফযীলত আছে বা এগুলি হাদীস-সম্মত এরূপ ধারণা করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে মিথ্যা বলা হবে। এছাড়া তদবীর বা আমল হিসেবেও আমাদের উচিত সহীহ হাদীসে উল্লিখিত তদবীর, দোয়া ও আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। ঝাড়ফুঁক, ও দুআ-তাবীজ, যাদু-জিন ইত্যাদি বিষয়ক মাসনূন, জায়েয ও নিষিদ্ধ বিষয়াদি বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘রাহে বেলায়াত’ বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে।