লগইন করুন
নিজামুদ্দীন আউলিয়ার (রাহ) নামে প্রচলিত ‘রাহাতিল কুলুব’ পুস্তকে রয়েছে: ‘‘একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাগণ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বসেছিলেন... এমন সময় একজন আরবী এসে জমিনে আদব-চুমু খেয়ে আরজ করলেন।’’[1]
কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। আমরা আগেই বলেছি যে, এ বইটি পুরোটাই জালিয়াতদের রচিত বলেই প্রতীয়মান হয়। যমিন-বুসী তো দূরের কথা কদমবুসীর রীতিও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে প্রচলিত ছিল না। রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর দরবারে তাঁর ২৩ বছরের নবুয়তী যিন্দেগিতে তাঁর লক্ষাধিক সাহাবীর কেউ কেউ দু-একবার এসেছেন। কেউ কেউ সহস্রা্ধিকবার এসেছেন। এসকল ক্ষেত্রে তাঁদের সুন্নাত ছিল সালাম প্রদান। কখনো কখনো দেখা হলে তাঁরা সালামের পরে হাত মিলিয়েছেন, বা মুসাফাহা করেছেন। দু’একটি ক্ষেত্রে তাঁরা একজন আরেক জনের হাতে বা কপালে চুমু খেয়েছেন বা কোলাকুলি করেছেন। কয়েকটি যয়ীফ বর্ণনায় দেখা যায় কেউ রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর পায়ে চুমু খেয়েছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ২৩ বছরের নবুয়তী যিন্দেগিতে লক্ষ মানুষের অগণিতবার আগমনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ৪/৫টি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ সকল ঘটনায় কোনো সুপরিচিত সাহাবী তাঁর পদচুম্বন করেন নি, করেছেন নতুন ইসলাম গ্রহণ করতে আসা বেদুঈন বা ইহুদী, যারা দরবারে থাকে নি বা দরবারের আদব জানত না।[2] আবু বাকর, উমার, উসমান, আলী, ফাতিমা, বিলাল () ও তাঁদের মতো প্রথম কাতারের শত শত সাহাবী প্রত্যেকে ২৩ বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার বার তাঁর দরবারে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু কেউ কখনো একবারও তাঁর কদম মুবারকে চুমু খান নি বা সেখানে হাত রেখে সে হাতে চুমু খান নি, তাঁর সামনে মাটিতে চুমু খাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
হিন্দুগণ মানুষকে সাজদা, গড় বা প্রণাম করতে অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলামের আগমনের পরে ভারতের মুসলমানদের মধ্যেও পীর, মুরববী বা রাজা-বাদশাহকে সাজদা করা, তাদের পায়ে মুখ দিয়ে চুমু খাওয়া বা তাদের সামনে মাটিতে চুমু খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। এ রীতিটি নিঃসন্দেহে ইসলাম বিরোধী। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, একে হাদীস বলে মনে করা।
[2] বিস্তারিত দেখুন: ইবনুল মুকরি’, আবু বাকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম, আর রুখসাতু ফী তাকবীলিল ইয়াদ, ৫৫-৮০ পৃ।