লগইন করুন
১৩শ শতকের মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনুস সাইয়িদ দরবেশ হূত বলেন,
مَا يُذْكَرُ فِيْ السِّيَرِ مِنْ نَبَاتِ شَجَرَةٍ عِنْدَ فَمِ الْغَارِ وَقْتَ هِجْرَتِهِ ﷺ وَأَنَّهُ فُتِحَ بَابٌ فِيْ ظَهْرِ الْغَارِ وَظَهَرَ عِنْدَهُ نَهْرٌ وَأَنَّ الْحَيَّةَ لَدَغَتْ أَبَا بَكْرٍ فِيْ الْغَارِ- بَاطِلٌ لاَ أَصْلَ لَهُ
‘‘সীরাতুন্নবী লেখকগণ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হিজরতের সময়ে গুহার মুখে গাছ জন্মেছিল, গুহার পিছনে দরজা প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেখানে একটি নদী দেখা গিয়েছিল, এবং গুহার মধ্যে আবূ বাকরকে (রা) সাপে কামড় দিয়েছিল- এগুলো সবই বাতিল কথা, যার কোনো ভিত্তি নেই।’’[1]
বস্ত্তত গুহার পিছনে দরজা প্রকাশ হওয়া, নদী দেখতে পাওয়া ইত্যাদি বিষয় একেবারেই ভিত্তিহীন ও সনদবিহীন গল্প বলে প্রতীয়মান। আর গুহার মুখে গাছ জন্মানো, মাকড়াসার জাল বোনা, কবুতরের বাসা বানানো এবং আবূ বাকর (রা)-কে সাপে কামড়ানো বিষয়ে কিছু হাদীস সনদ-সহ বর্ণিত।
(ক) আবূ বাকরকে সাপে কামড়ানোর কাহিনীটি ইমাম বাইহাকী দালাইলুন নুবুওয়াত গ্রন্থে সংকলন করেছেন। এ হাদীসের সারমর্ম যে, আবূ বাকর (রা) সাওর গুহায় প্রবেশের পর আবূ বাকর (রা) দেখেন যে সেখানে ফাটল বা গর্ত রয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিরাপত্তার জন্য ফাটলটির মুখে নিজের পা রাখেন। তখন ফাটলের মধ্যে অবস্থানরত সাপ তাঁকে দংশন করে এবং বেদনায় তাঁর চক্ষু দিয়ে অশ্রু পড়তে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বলেন: তুমি ব্যথিত হয়ো না; আল্লাহ তো আমাদের সাথে। এ কথার পর আল্লাহ আবূ বাকর (রা)-এর উপর প্রশান্তি নাযিল করেন।
বাইহাকী বর্ণিত হাদীসে এতটুকুই বলা হয়েছে, যদিও আমাদের সমাজে এ গল্পের সাথে অনেক কিছু সংযুক্ত হয়েছে। ইমাম যাহাবী ও ইমাম ইবন হাজার আসকালানী হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করেছেন। হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী আব্দুর রাহমান ইবনু ইবরাহীম রাসিবী জালিয়াত বলে গণ্য। তাঁর উস্তাদ ফুরাত ইবনুস সায়িবও অত্যন্ত দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী।[2]
(খ) গুহার মুখের গাছ, মাকড়াসার জাল ও কবুতরের বাসা বিষয়ে মুসনাদ আহমাদ, তাবাকাত ইবন সা’দ, বাইহাকীর দালাইলুন নুবুওয়াত ও অন্যান্য গ্রন্থে অত্যন্ত দুর্বল সনদে কয়েকটি হাদীস সংকলিত। অনেক মুহাদ্দিস পুরো বিষয়টিকেই ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন। মাকড়াসার জাল বিষয়ক একটি হাদীসকে ইবন কাসীর ও ইবন হাজার হাসান বলে গণ্য করেছেন।[3]
[2] বাইহাকী, দালাইলুন নুবুওয়াত ২/৪৭৬-৪৭৭; যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ২/৪৫৪, ৪/৫০৩-৫০৪; ইবন হাজার, লিসানুল মীযান ৪/৩৯৭, ৬/৯-১০।
[3] ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১৮১, ২২২-২২৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/২৭; ইবন হাজার, ফাতহুল বারী ৭/২৭৮; আলবানী, যায়ীফাহ ৩/২৫৯-২৬৪; ৩৩৭-৩৩৯।