কোন ভুল থাকলে সেটি রিপোর্ট করার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন।
লগইন করুন
লগইন করুন
হাদীসের নামে জালিয়াতি ৯. জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে বাঙালী আলিমগণ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. ২. ১. যে সকল হাদীস জাল বলে চিহ্নিত করেছেন
আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী তাঁর গ্রন্থে যে সকল জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আবূ হানীফা আমার উম্মাতের প্রদীপ।
- তোমরা আলিমদের অনুসরণ করবে; কারণ তারা দুনিয়ার প্রদীপ ও আখিরাতের বাতি।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোনো হাজত-প্রয়োজনের ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর আঙটিতে একটি সুতা বেঁধে নিতেন।
- নিয়্যাত বিশুদ্ধ কর এবং বিজন মরুভূমিতে বাস কর।
- আত্মতুষ্টি সকল রোগের মূল।
- তোমরা সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, কারণ তাতে দশটি বরকত রয়েছে..
- (আল্লাহ বলেন) আমি আমার নিজের উপর শপথ করেছি যে, আহমদ ও মুহাম্মাদ নামের কাউকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো না।
- আলিম বা তালিব ইলম যখন কোনো গ্রাম-মহল্লা দিয়ে গমন করেন তখন আল্লাহ সে গ্রাম বা মহল্লার গোরস্থানের আযাব ৪০ দিনের জন্য তুলে নেন।
- মৃতব্যক্তি ৭ দিন পর্যন্ত তার বাড়ির মানুষদেরকে দেখতে পায়।
- আল্লাহ আশূরার দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন।
- জান্নাতের বাসিন্দাগণ দাড়ি বিহীন হবেন, শুধু মূসা ইবনু ইমরান (আঃ) বাদে, তার দাড়ি হবে নাভী পর্যন্ত দীর্ঘ।
- কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু যদিও সে দরবেশ হয়।
- যাবারজাদ পাথরের আঙটি ব্যবহার কর; কারণ এতে কাঠিন্য বিহীন সহজতা রয়েছে।
- যামরাদ পাথরের আঙটি ব্যবহার...কারণ তা দারিদ্র্য দূরীভূত করে।
- দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।
- মসজিদের মধ্যে কথাবার্তা নেকী বা সাওয়াব খেয়ে ফেলে....।
- নেককারদের নেককর্ম নৈকট্যপ্রাপ্তদের পাপ।
- বিবাহিতের দু রাকআত অবিবাহিতের ৭০ রাকআত থেকে উত্তম।
- মুমিনের লালা সুস্থতা বা রোগমুক্তি।
- ছয়টি কর্ম বিস্মৃতি বা স্মৃতিহীনতা জন্ম দেয়: ইঁদুরের ঝুটা ভক্ষণ, জীবন্ত উকুন আগুনে ফেলে দেওয়া, বদ্ধ পানিতে পেশাব করা, আঠা জাতীয় দ্রব্য (গাম) চেবানো, টক আপেল খাওয়া।
- বিলালের সীন আল্লাহর কাছে শীন।
- মুমিনের ওযুর অবশিষ্ট পান করার মধ্যে ৭০টি রোগের প্রতিকার...।
- দিবসের সালাত বোবা (কারণ এতে কুরআন পাঠ শোনা যায় না)।
- সাপ্তাহের প্রতি দিন ও রাতের সালাত বিষয়ক হাদীস... জুমুআর রাতে ১২ রাকআত সালাত ১০ বার করে সূরা ইখলাস ....।
- আরাফার দিনের সিয়াম ষাট বছরের সিয়ামের মত।
- কৃপণের খাদ্য ব্যাধি এবং দানশীলের খাদ্য ঔষধ।
- এক মুহূর্ত ইলম সন্ধান করা সারারাত সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম...
- ইলম সন্ধান করা আল্লাহর নিকট সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ থেকে উত্তম।
- তোমরা লবণ ব্যবহার করবে; কারণ তা ৭০টি রোগের প্রতিকার।
- ইলমু বাতিন আমার ও আমার প্রিয়পাত্র ও অলীগণের মধ্যকার গোপন বিষয়। আমি তা তাদের অন্তরের মধ্যে প্রদান করি। কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা বা কোনো নবী-রাসূলও তা জানতে পারেন না।
- আমার উম্মাতের আলিমগণ বনী ইসরাঈলের নবীগণের মত।
- সকল মাসের মধ্যে রজব মাসের মর্যাদা সকল কথার উপরে কুরআনের মর্যাদার মত।
- দারিদ্র আমার গৌরব এবং আমি তারই অহংকার করি।
- একজন আলিমের মাজলিসে উপস্থিত হওয়া এক হাজার জানাযায় শরীক হওয়া থেকে, এক হাজার রাকআত সালাত থেকে, এক হাজার হজ্জ এবং এক হাজার জিহাদ-যুদ্ধাভিযান থেকে উত্তম।
- ‘‘কুল’’ সূরাগুলি পাঠ করা দারিদ্র্য থেকে নিরাপত্তা।
- মুমিনের অন্তর (কালব) আল্লাহর গৃহ।
- সুলাইমান (আঃ)-এর আংটির নক্সা বা খোদিত কথা ছিল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
- দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়, যদিও সে পাপাচারী হয়। আর কৃপণ আল্লাহর শত্রু, যদিও সে দরবেশ হয়।
- আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম...।
- আমাকে যখন মি’রাজে নেওয়া হলো তখন প্রথম আসমানে আমি সবুজ ঝুটি ও সাদা পালক ওয়ালা একটি মোরগ দেখলাম। মোরগটির পদদ্বয় দিগন্তে ও মাথা আরশের নিকট ..... ।
- যে ব্যক্তি অমুক সূরা পাঠ করবে, সে অমুক সাওয়াব লাভ করবে...
- তুমি না হলে আমি মহাকাশসমূহ (বিশ্ব) সৃষ্টি করতাম না।
- আমার আকাশ ও আমার যমীন আমাকে ধারণ করার প্রশস্ততা পায় নি; কিন্তু আমার মুমিন বান্দার অন্তর আমাকে ধারণের প্রশস্ততা পেয়েছে
- জ্ঞানীদের কালি শহীদদের রক্ত থেকে অধিক মর্যাদাময়।
- তিন বার করে কুলি করা ও নাকের মধ্যে পানি দেওয়া নাপাক ব্যক্তির জন্য (ফরয গোসলের ক্ষেত্রে) ফরয।
- যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তার ৪০ বৎসরের আমল বিনষ্ট করে দিবেন।
- যে কোনো আলিমের কাছে বসল সে যেন একজন নবীর কাছে বসল।
- যে আলিমগণের সাথে সাক্ষাত করল সে যেন আমার সাথেই সাক্ষাত করল। যে ব্যক্তি আলিমগণের সাথে হাত মেলাল সে যেন আমার সাথেই হাত মেলাল। যে ব্যক্তি আলিমগণের কাছে বসল সে যেন আমার কাছেই বসল। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার কাছে বসল সে কিয়ামতের দিনও আমার কাছেই বসবে।
- যে নিজেকে চিনল সে তার প্রতিপালককে চিনল।
- যে ব্যক্তি তার ভাইকে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শিক্ষা দিল সে তার মালিক হয়ে গেল।
- যে ব্যক্তি তার ভাইকে ওযূ করতে এক পাত্র পানি এগিয়ে দিল সে যেন তাকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া উপহার দিল।
- যার সন্তান হলো এবং সে নামের বরকত লাভের উদ্দেশ্যে সন্তানের নাম মুহাম্মাদ রাখল সে ব্যক্তি ও তার সন্তান জান্নাতী হবে।
- যে ব্যক্তি এক রাত্রিতে সূরা সাজদা, সূরা ইয়াসীন, সূরা কামার ও সূরা মুলক পাঠ করে সূরাগুলি তার জন্য নূর ও শয়তান থেকে প্রতিরক্ষা হবে।
- যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করব।
- তোমরা মৃত্যু বরণ কর তোমাদের মৃত্যুর আগেই।
- যে ব্যক্তি আযানের সময় কথা বলে তার ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- আলিমের দোয়াতের এক ফোঁটা কালি আল্লাহর নিকট একশত শহীদের ঘামের থেকে বেশি প্রিয়।
- আলিমের নিদ্রা ইবাদত।
- আহারকারীর উপরে কোনো সালাম নেই।
- জাবিরের (রা) দাওয়াতের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ দু পুত্রকে জীবিত করেন।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ পাদুকা খুলে আরশে যাওয়া, আরশে পবিত্র কদম রাখা, আরশে দাঁড়ানো বা বসা.....।
- মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জুতা পরিহিত অবস্থায় আরশে পৌঁছালেন, তখন আরশ শান্ত হয়, এর আগে আরশ অস্থির ছিল .....।
- আলী ও ফাতিমা (রাঃ) হাসান-হুসাইনকে এক ফকীরকে দান করেছিলেন।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মসজিদে গমন, ও উকাশার প্রতিশোধ গ্রহণ...।
- বিলাল (রা)-এর একটি কাহিনী ... রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ইন্তেকালের পর তিনি মদীনা থেকে চলে যান। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে স্বপ্নে দেখে মদীনায় আগমন করেন। ... আযান দেন...ইত্যাদি।
- সালাতুর রাগাইব বিষয়ক হাদীস, রজব মাসের বিভিন্ন রাতের সালাত বিষয়ক হাদীস, ২৭ রজব রাত্রির সালাত, মধ্য শাবানের রাত বা শবে বরাতের রাতে ১০০ রাক‘আত সালাত, প্রত্যেক রাকআতে ১০ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ- এগুলি সবই জাল।
- মুজিযায়ে কদম শরীফ- পাথর মোম হয়ে পায়ের চিহ্ন ধারণ করা...।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মি’রাজ শরীফে তাশরীফ আনেন, তখন বড় পীর সাহেব কাঁধ বাড়িয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে মুহিউদ্দিন, যাও, তোমার পা সকল ওলীদের কাঁধের উপর। এটি সম্পূর্ণ অসত্য। যে এ গল্প বানিয়েছে সে মালঊন-অভিশপ্ত।
- আবূ দুজানার তদবীর...।
- বিধবা দ্বিতীয় বিবাহ করলে সে আখিরাতে লাইলি মজনুর বিবাহ দেখতে পারবে না। ... আখিরাতে লাইলি-মজনুর বিবাহ হবে...।
- রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র দাঁত উহদের যুদ্ধে শহীদ হয়, তখন তিনি হালুয়া খেয়েছিলেন। এজন্য ‘শবে বরাতে’ হালুয়া পাকানো উচিত।...
- রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘গযল’’ বা সামা-সঙ্গীত শ্রবণ করেন এবং এ সময়ে ‘‘হাল’’ বা ‘‘ইশকের উন্মত্ততা’’-র অবস্থায় তিনি তাঁর পবিত্র চাদর ছিড়ে বণ্টন করে দেন.... ইত্যাদি কাহিনী সবই জাল ও বানোয়াট।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত: উর্দু, (কলকাতা, পীরযাদা কুতুবুদ্দীন সিদ্দিকী প্রকাশিত) পৃষ্ঠা ১২-৯৯; আল-মাউযূআত: বাংলা (খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, ফুরফুরার পীর আবূ জাফর সিদ্দিকীর (রাহ) আল-মাউযূআত: একটি বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা), পৃ. ১৯৯-৩০৬।