লগইন করুন
আব্দুল কাদির জীলানীর (রাহ) নামে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ একটি পুস্তক ‘সির্রুল আসরার’। পুস্তকটিতে কুরআন-হাদীসের আলোকে অনেক ভাল কথা রয়েছে। পাশাপাশি অনেক জাল হাদীস ও বানোয়াট কথা পুস্তকটিতে বিদ্যমান। অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যায় যে, পরবর্তী যুগের কেউ এ বইটি লিখে তাঁর নামে চালিয়েছে। কয়েকটি বিষয় এই জালিয়াতি প্রমাণ করে:
১. এ পুস্তকের বিভিন্ন স্থানে লেখক ‘ফরীদ উদ্দীন আত্তার-এর বিভিন্ন বাণী ও কবিতার উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন। যেমন এক স্থানে বলেছেন: ‘‘হযরত শাইখ ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেন...’’[1]। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ফরীদ উদ্দীন আত্তার ৫১২ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬২৬ হিজরীতে (১২২৯ খৃ) ইন্তেকাল করেন। আর আব্দুল কাদির জীলানী ৪৭১ হিজরীতে জন্মগহণ করেন এবং ৫৬১ হিজরীতে (১১৬৬ খৃ) ইন্তেকাল করেন। ফরীদ উদ্দীন আত্তার বয়সে তাঁর চেয়ে ৪০ বছরের ছোট এবং তাঁর ইন্তেকালের সময় ফরীদ উদ্দীন আত্তারের কোনো প্রসিদ্ধি ছিল না। কাজেই ‘হযরত শাইখ ...’ ইত্যাদি বলে তিনি আত্তারের উদ্ধৃতি প্রদান করবেন একথা কল্পনা করা যায় না।
২. এ পুস্তকে শামস তাবরীয-এর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। লেখক বলেন: ‘‘হযরত শামস তাবরীয (রঃ) বলেছেন...’’[2]। উল্লেখ্য যে, শামস তাবরীয ৬৪৪ হিজরীতে (১২৪৭ খৃ) ইন্তেকাল করেন। তাঁর জন্ম তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় নি। তবে ৫৬০ হিজরীর পরে তাঁর জন্ম বলে মনে হয়। অর্থাৎ আব্দুল কাদির জীলানীর মৃত্যুর সময় শামস তাবরীযের জন্মই হয় নি! অথচ তিনি তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করছেন!
৩. এ পুস্তকে বারংবার জালাল উদ্দীন রুমীর উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়েছে। যেমন লেখক বলছেন: ‘‘আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী তাঁর অমর কাব্য মসনবীতে বলেছেন...।’’[3] লক্ষ্যণীয় যে, জালাল উদ্দীন রুমী (৬০৪- ৬৭৬ হি) আব্দুল কাদির জীলানীর (রাহ) ইন্তেকালের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে জন্মগ্রহণ করেন! রুমীর জন্মের অর্ধ শত বছর আগে তাঁর মসনবীর উদ্ধৃতি প্রদান করা হচ্ছে!!
এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, এ পুস্তকটি পুরোটিই জাল, অথবা এর মধ্যে অনেক জাল কথা পরবর্তীকালে ঢুকানো হয়েছে। এ পুস্তকটির মধ্যে অগণিত জাল হাদীস ও জঘন্য মিথ্য কথা লিখিত রয়েছে। আর আব্দুল কাদির জীলানীর (রাহ) নামে এগুলো অতি সহজেই বাজার পেয়েছে।
[2] আব্দুল কাদের জীলানী, সিররুল আসরার, পৃ. ২৭।
[3] আব্দুল কাদের জীলানী, সিররুল আসরার, পৃ. ২৫, ২৯।