লগইন করুন
এখানে আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার। তা হলো, হাদীসের নামে জালিয়াতির ন্যায় নেককার বুযুর্গ ও ওলী-আল্লাহগণের নামে জালিয়াতি হয়েছে প্রচুর। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়:
(১) জালিয়াতগণ ‘ধর্মের’ ক্ষতি করার জন্য অথবা ধর্মের ‘উপকার’ করার জন্য ‘জালিয়াতি’ করত। বিশেষ করে যারা ধর্মের অপূর্ণতা দূর করে ধর্মকে আরো বেশি ‘জননন্দিত’ ও ‘আকর্ষণীয়’ করতে ইচ্ছুক ছিলেন তাদের জালিয়াতিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। আর উভয় দলের জন্য এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় দলের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে জালিয়াতি করার চেয়ে ওলী-আল্লাহগণের নামে জালিয়াতি করা অধিক সহজ ও অধিক সুবিধাজনক ছিল।
(২) বুযুর্গদের নামে জালিয়াতি অধিকতর সুবিধাজনক এজন্য যে, সাধারণ মানুষদের মধ্যে তাঁদের নামের প্রভাব ‘হাদীসের’ চেয়েও বেশি। অনেক সাধারণ মুসলমানকে ‘হাদীস’ বলে বুঝানো কষ্টকর। তাকে যদি বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অমুক কাজ করেছেন, করতে বলেছেন ... তবে তিনি তা গ্রহণ করতেও পারেন আবার নাও পারেন। কিন্তু যদি তাকে বলা যায় যে, আব্দুল কাদির জীলানী বা খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বা ... অমুক ওলী এ কাজটি করেছেন বা করতে বলেছেন তবে অনেক বেশি সহজে তাকে ‘প্রত্যায়িত’ (convinced) করা যাবে এবং তিনি খুব তাড়াতাড়ি তা মেনে নেবেন। ইসলামের প্রথম কয়েক শতাব্দীর সোনালী দিনগুলোর পরে যুগে যুগে সাধারণ মুসলিমদের এ অবস্থা। কাজেই বুযুর্গদের নামে জালিয়াতি বেশি কার্যকর ছিল।
(৩) ওলী-আল্লাহদের নামে জালিয়াতি সহজতর ছিল এজন্য যে, হাদীসের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর নিবেদিত প্রাণ মুহাদ্দিসগণ যেভাবে সর্তক প্রহরা ও নিরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছিলেন, এক্ষেত্রে তা কিছুই ছিল না বা নেই। কোনো নিরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই, সনদ নেই, মতন নেই, ঐতিহাসিক বা অর্থগত নিরীক্ষা নেই... যে যা ইচ্ছা বলছেন। কাজেই অতি সহজে জালিয়াতগণ নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারতেন।
(৪) হাদীস জালিয়াতির জন্যও এ সকল বুযুর্গের নাম ব্যবহার ছিল খুবই কার্যকর। এ সকল বুযুর্গের নামে বানোয়াট কথার মধ্যে অগণিত জাল হাদীস ঢুকিয়ে দিয়েছে তারা। এ সকল বুযুর্গের প্রতি ‘ভক্তির প্রাবল্য’-র কারণে অতি সহজেই ভক্তিভরে এ সকল বিষ ‘গলাধঃকরণ’ করেছেন মুসলমানরা। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পেরেছে জালিয়াতগণ।