লগইন করুন
বর্ণনাকারীর বর্ণনার নির্ভুলতা যাচাইয়ের পাশাপাশি মুহাদ্দিসগণ বর্ণনার অর্থও যাচাই করেছেন। কুরআন কারীম, সুপ্রসিদ্ধ সুন্নাত, বুদ্ধি-বিবেক, ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠিত সত্য বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্যের সুস্পষ্ট বিরুদ্ধ কোনো বক্তব্য তাঁরা ‘হাদীস’ হিসাবে গ্রহণ করেন নি।
হাদীসের বিষয়বস্ত্ত, ভাব ও ভাষাও অভিজ্ঞ নাকিদ মুহাদ্দিসগণকে হাদীসের বিশুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা বুঝতে সাহায্য করে। আজীবনের হাদীস চর্চার আলোকে তাঁরা কোনো হাদীসের ভাষা, অর্থ বা বিষয়বস্ত্ত দেখেই অনুভব করতে পারেন যে, হাদীসটি বানোয়াট। বিষয়টি খুব কঠিন নয়। যে কোনো বিষয়ের গবেষক সে বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। একজন নজরুল বিশেষজ্ঞকে পরবর্তী যুগের কোনো কবির কবিতা নিয়ে নজরুলের বলে চালালে তা ধরে ফেলবেন। কবিতার ভাব ও ভাষা দেখে তিনি প্রথমেই বলে উঠবেন, এ তো নজরুলের কবিতা হতে পারে না! কোথায় পেয়েছেন এ কবিতা? কীভাবে?? অনুরূপভাবে যে কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট গবেষক সেই বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি লাভ করেন, যা দিয়ে তিনি সে বিষয়ক তথ্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক বিচারের যোগ্যতা লাভ করেন।
হাদীস শাস্ত্রের প্রাজ্ঞ ইমামগণ, যাঁরা তাঁদের পুরো জীবন হাদীস শিক্ষা, মুখস্থ, তুলনা, নিরীক্ষা ও শিক্ষাদান করে কাটিয়েছেন তাঁরাও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, পুরস্কার বর্ণনা, শাস্তি বর্ণনা, শব্দ চয়ন, বিষয়বস্ত্ত, ভাব, অর্থ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞতা ও অনুভুতি লাভ করেন। এর আলোকে তাঁরা তাঁর নামে প্রচারিত কোনো বাক্য বা ‘হাদীস’ শুনলে সাথে সাথে অনুভব করতে পারেন যে, এ বিষয়, এ ভাষা, এ শব্দ বা এ অর্থ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীস হতে পারে অথবা পারে না। এর পাশাপাশি তাঁরা অন্যান্য নিরীক্ষার মাধ্যমে এর জালিয়াতি নিশ্চিত করেন।
মুহাদ্দিসগণের হাদীস সমালোচনা সাহিত্যের সুবিশাল ভান্ডারে আমরা অগণিত উদাহরণ দেখতে পাই যে, হাদীসের বর্ণনাকারী মিথ্যাবাদী বলে গণ্য না হওয়া সত্ত্বেও হাদীসের ভাষা, ভাব ও অর্থের কারণে মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে ‘পরিত্যক্ত’, জাল বা বানোয়াট বলে গণ্য করেছেন।
মুহাদ্দিসগণের এ বিষয়ক কর্মধারা আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, এক্ষেত্রে তাঁরা সাহাবীগণের পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। আমরা দেখেছি যে, কোনো হাদীসের বিচারের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম বিবেচ্য হলো, কথাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা বলে প্রমাণিত কিনা তা যাচাই করা। প্রমাণিত হলে তা গ্রহণ করতে হবে, অপ্রমাণিত হলে তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং কোনোরূপ দ্বিধা থাকলে তা অতিরিক্ত নিরীক্ষা করতে হবে। এভাবে ভাষা ও অর্থগত নিরীক্ষায় হাদীসের তিনটি পর্যায় রয়েছে: