লগইন করুন
‘নেককার’ বলে পরিচিত কিছু মানুষ এর চেয়েও জঘন্য কাজে লিপ্ত হতেন। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে বলতেন। হাদীস জালিয়াতিতে এরাই ছিলেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকারক। তারা যে সকল বিষয়ে হাদীস বানিয়েছেন, তার অনেক বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। কিন্তু এসকল নেককার (!) মানুষ অনুভব করেছেন যে, এ সকল সহীহ হাদীসের ভাষা ও সেগুলিতে বর্ণিত পুরস্কার বা শাস্তিতে মানুষের আবেগ আসে না। তাই তারা আরো জোরালো ভাষায়, বিস্তারিত কথায়, অগণিত পুরস্কার ও কঠিনতম শাস্তির কথা বলে হাদীস বানিয়েছেন, যেন মানুষেরা তা শুনেই প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এভাবে তাঁরা ‘ওহীর’ অপূর্ণতা (!) মানবীয় বুদ্ধি দিয়ে পূরণ (!) করতে চেয়েছেন। সবচেয়ে কঠিন বিষয়, তাদের ‘ধার্মিকতা’র কারণে সমাজের অনেক মানুষই তাদের এসকল জালিয়াতির খপ্পরে পড়তেন। তাঁরা এগুলোকে হাদীস বলে বিশ্বাস করেছেন। শুধুমাত্র ‘নাকিদ’ মুহাদ্দিসগণ তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের জালিয়াতি ধরেছেন।
শয়তান এদেরকে বুঝিয়েছিল যে, আমরা তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে নয়, পক্ষেই মিথ্যা বলছি। এ সকল মিথ্যা ছাড়া মানুষদের হেদায়েত করা সম্ভব নয়। কাজেই ভাল উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা শুধু জায়েযই নয় বরং ভাল কাজ। শয়তান তাদেরকে বুঝতে দেয় নি যে, মিথ্যা ছাড়া মানুষদেরকে ভাল পথে আনা যাবে না একথা ভাবার অর্থ হলো, ওহী মানুষের হেদায়েত করতে সক্ষম নয় বলে চিন্তা করা! কুরআন-হাদীস তার কার্যকরিতা হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই আজগুবি মিথ্যা দিয়ে মানুষকে হেদায়েত করতে হবে! কি জঘন্য চিন্তা!
তাদের এসব মনগড়া কথা যে, ওহীর পক্ষে বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) পক্ষে সে কথা দাবী করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা যে কথাকে ইসলামের পক্ষে বলে বলে মনে করেছে তা সর্বদা ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। আজগুবি গল্প, অল্প কাজের অকল্পনীয় সাওয়াব, সামান্য অন্যায়ের বা পাপের ঘোরতর শাস্তি, সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী, কাল্পনিক অলৌকিক কাহিনী, বিভিন্ন বানোয়াট ফযীলতের কাহিনী ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত করেছে। অগণিত কুসংস্কার ছড়িয়েছে তাদের মধ্যে। নফল ‘ইবাদতের’ সাওয়াবে বানানো মনগড়া সাওয়াবের কল্প কাহিনী মুসলিম উম্মাহকে ফরয দায়িত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে। অগণিত মনগড়া ‘আমল’ মুসলমানদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত কর্ম থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে বানোয়াট হাদীসগুলো আলোচনার সময় এসবের অনেক উদাহরণ দেখতে পাব।
‘ওহীর পক্ষে মিথ্যা বলার’ কারণেই যুগে যুগে সকল ধর্ম বিকৃত হয়েছে। ওহীর পক্ষে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত হওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ খৃস্টধর্মের বিকৃতিকারী পৌল নামধারী শৌল এবং তার অনুসারী খৃস্টানগণ। এরা ‘ঈশ্বরের’ মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, ‘যীশু’-র মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ও অধিক সংখ্যক মানুষকে ‘সুপথে’ আনয়ন করার জন্য ওহীর নামে মিথ্য বলেছে। এরা ভেবেছে যে, আমরা ঈশ্বরের বা যীশুর পক্ষে বলছি, কাজেই এ মিথ্যায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু তারা মূলত শয়তানের খেদমত করেছে। আল্লাহ বলেন:
قُلْ يَاأَهْلَ الْكِتَابِ لا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلا تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيرًا وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ
‘‘বল হে কেতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীন (ধর্ম) সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না; এবং যে-সম্প্রদায় ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না।’’[1]
মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও এ ধরনের পথভ্রষ্ট খেয়াল-খুশীমত ওহী বানানো সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব দেখা দিয়েছে। তবে সনদ ও সনদ নিরীক্ষা ব্যবস্থার ফলে এদের জালিয়াতি ধরা পড়ে গিয়েছে। এ সকল ‘নেককার জালিয়াত’ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাদীস তৈরি করতেন।
ক. কিছু মানুষ কুরআন এবং কুরআনের বিভিন্ন সূরা তিলাওয়াতের ‘অগণিত’ কাল্পনিক সাওয়াব বর্ণনা করে হাদীস তৈরি করতেন।
খ. অন্য অনেকে প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত বিভিন্ন নেক আমলের সাওয়াব বর্ণনায় হাদীস তৈরি করতেন। যেমন তাসবীহ, যিকির, তাহাজ্জুদ, চাশত ইত্যাদি ইবাদতের জন্য সহীহ হাদীসে অনেক সাওয়াব বর্ণিত হয়েছে। তারা মনে করতেন যে, এসকল হাদীস মানুষের চিত্তাকর্ষণ করতে পারে না। এজন্য এ সকল বিষয়ে ‘আকর্ষণীয়’ হাদীস তৈরি করতেন। অনুরূপভাবে সুন্নাতের পক্ষে ও বিদ‘আতের বিপক্ষে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। এ সকল জালিয়াত সেগুলোতে খুশি হতে পারেন নি। তাঁরা সুন্নাতের সাওয়াব, মর্যাদা এবং বিদ‘আতের পাপ ও বিদ‘আতীদের কঠিন পরিণতি ও ভয়ঙ্কর শাস্তির বিষয়ে অনেক হাদীস বানিয়েছেন।
গ. কেউ কেউ বিভিন্ন প্রকারের ‘নেক আমল’ তৈরি করে তার ফযীলতে হাদীস বানাতেন। যেমন বিভিন্ন মাসের জন্য বিশেষ পদ্ধতির সালাত, সপ্তাহের প্রত্যেক দিনের জন্য বিশেষ সালাত, আল্লাহকে স্বপ্নে দেখা, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে স্বপ্নে দেখা, জান্নাতে নিজের স্থান দেখা ইত্যাদি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিশেষ সালাত। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ‘দরুদ’, ‘যিকির’, ‘দোয়া’, ‘মুনাজাত’ ইত্যাদি বানিয়ে সেগুলোর বানোয়াট ফযীলত উল্লেখ করে হাদীস তৈরি করেছেন। এরূপ অগণিত ‘ইবাদত’ তারা তৈরি করেছেন এবং এগুলির ফযীলতে কল্পনার ফানুস উড়িয়ে অগণিত সাওয়াব ও ফযীলতের কাহিনী বলেছেন।
ঘ. অনেক মানুষের অন্তর নরম করার জন্য সংসার ত্যাগ, লোভ ত্যাগ, ক্ষুধার ফযীলত, দারিদ্রে্যর ফযীলত, বিভিন্ন কাহিনী, শাস্তি, পুরস্কার বা অনুরূপ গল্প কাহিনী বানিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে চালিয়েছেন।
এখানে এ ধরনের দু’এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি উল্লেখ করছি। এ সকল মানুষ মুহাদ্দিসগণের কাছে তাদের মিথ্যা সনদগুলো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করত। তবে তাঁদের নিরীক্ষামূলক প্রশ্নের মুখে অনেক সময় স্বীকার করতো যে, তারা হাদীস জালিয়াতি করেছে।
দ্বিতীয় হিজরী শতকের একজন প্রখ্যাত আলিম, আবিদ ও ফকীহ আবু ইসমাহ নূহ ইবনু আবু মারিয়াম (১৭৩ হি)। হাদীস, ফিকহ, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তার চৌকস পান্ডিত্যের কারণে তাকে ‘আল-জামি’ বলা হতো। খলীফা মানসূরের সময়ে (১৩৬-১৫৮ হি) তাকে খোরাসানের মারভ অঞ্চলের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। তাকে সে এলাকার অন্যতম আলিম বলে গণ্য করা হতো। মু’তাযিলা, জাহমিয়া, আহলুর রাই ফকীহ ও বিদ‘আতী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ছিলেন।
এত কিছু সত্ত্বেও তিনি হাদীসের নামে মিথ্যা কথা বলতেন। তিনি কুরআনের বিভিন্ন সূরার ফযীলতে কিছু হাদীস বর্ণনা করতেন। মুহাদ্দিসগণ তাকে প্রশ্ন করেন: আপনি ইকরিমাহ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস থেকে কুরআনের প্রত্যেক সূরার ফযীলতে যে হাদীস বলেন তা আপনি কোথায় পেলেন? ইকরিমাহ-এর ঘনিষ্ট ছাত্রগণ বা অন্য কোনো ছাত্র এ হাদীস বর্ণনা করেন না, অথচ আপনি কিভাবে তা পেলেন? তখন তিনি বলেন: আমি দেখলাম, মানুষ কুরআন ছেড়ে দিয়েছে। তারা আবু হানীফার ফিকহ এবং ইবনু ইসহাকের মাগাযী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য আমি তাদেরকে কুরআনের দিকে ফিরিয়ে আনতে এ হাদীস বানিয়েছি।[2]
তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ আবিদ, আলিম ও ওয়ায়িয আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু গালিব গুলাম খালীল (২৭৫ হি)। তিনি রাজধানী বাগদাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংসারত্যাগী আবিদ বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি সর্বদা শাক সব্জি খেতেন, অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ওয়ায করতেন। ‘আহলুর রাই’ বলে কথিত (হানাফী) ফকীহগণের বিরুদ্ধে, মু’তাযিলা, শিয়া, কাদারিয়া, জাবারিয়া ও অন্যান্য বিদআতী মতের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। সাধারণের মধ্যে তার ওয়াজের প্রভাব ছিল অনেক। শ্রোতাদের মন নরম করতে ও তাদের হেদায়েতের উদ্দেশ্যে তিনি নিত্যনতুন গল্প কাহিনী হাদীসের নামে জালিয়াতি করে বলতেন। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের নামে সনদ তৈরি করে তিনি মিথ্যা হাদীসগুলো বলতেন।
আবু জা’ফার ইবনুশ শুআইরী বলেন, একদিন গুলাম খালীল হাদীস বলতে গিয়ে বলেন, আমাকে বাকর ইবনু ঈসা (২০৪ হি) বলেছেন, তিনি আবু উওয়ানা থেকে....। আমি বললাম, বাকর ইবনু ঈসা তো অনেক পুরাতন মানুষ। ইমাম আহমাদ (২৪১ হি) ও তাঁর প্রজন্মের মানুষেরা তার কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন। আপনি তাকে জীবিত দেখেন নি। একথা বলার পরে তিনি চুপ করে চিন্তা করতে থাকেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলে ফেলেন কিনা। এজন্য আমি বললাম: হতে পারে যে, আপনার উস্তাদ বাকর ইবনু ঈসা অন্য আরেক ব্যক্তি। তিনি চুপ করে থাকলেন। পরদিন তিনি আমাকে বললেন: আমি গতরাতে চিন্তা করে দেখেছি, বসরায় আমি ‘বাকর ইবনু ঈসা’ নামের ৬০ ব্যক্তির কাছ থেকে হাদীস শুনেছি![3]
মিথ্যার বাহাদুরি দেখুন! হাদীসের ‘নকিদ’ ইমামদের কাছে এ ধরনের ‘ঠান্ডা’ মিথ্যার কোনো মূল্য নেই। বসরায় কোন্ যুগে কতজন ‘রাবী’ ছিলেন নামধামসহ তাদের বর্ণিত হাদীস তারা সংগ্রহ ও সংকলিত করেছেন। এজন্য এরা অনেক সময় এঁদের কাছে জালিয়াতি স্বীকার করতে বাধ্য হতো।
চতুর্থ শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনু আদী (৩৬৫ হি) বলেন, হাদীস সংগ্রহের সফরে যখন হার্রান শহরে ছিলাম তখন আবু আরূবার মাজলিসে আবু আব্দুল্লাহ নাহাওয়ান্দী বলেন, আমি গুলাম খালীলকে বললাম, শ্রোতাদের হৃদয়-কাড়া যে হাদীসগুলো বলছেন সেগুলো কোথায় পেলেন? তিনি বলেন: মানুষের হৃদয় নরম করার জন্য আমি এগুলো বানিয়েছি।[4]
এ সকল নেককার মানুষের জালিয়াতির ক্ষতি সম্পর্কে হাদীস শাস্ত্রের সকল ইমামই আলোচনা করেছেন। ইতোপূর্বে আমরা এ বিষয়ে ইবনুস সালাহ, নাবাবী ও ইরাকীর বক্তব্য দেখেছি। এ বিষয়ে আল্লামা সাইয়্যেদ শরীফ জুরজানী হানাফী (৮১৬ হি.) লিখেছেন: ‘‘মাওযূ বা বানোয়াট হাদীসের প্রচলনে সবচেয়ে ক্ষতি করেছেন দুনিয়াত্যাগী দরবেশগণ, তাঁরা অনেক সময় সাওয়াবের নিয়্যাতেও মিথ্যা হাদীস বানিয়ে বলেছেন।’’[5]
ইবন হাজার আসকালানী (৮৫২ হি.) বলেন : ‘‘বর্ণিত আছে যে, কোনো কোনো সূফী সাওয়াবের বর্ণনায় ও পাপাচারের শাস্তির বর্ণনায় মিথ্যা হাদীস বানানো ও প্রচার করা জায়েয বলে মনে করতেন।’’[6]
সুয়ূতী (৯১১ হি) বলেন, জালিয়াতির উদ্দেশ্য অনুসারে মিথ্যাবাদী জালিয়াতগণ বিভিন্ন প্রকারের। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর ছিলেন কিছু মানুষ যাদেরকে সংসারত্যাগী নির্লোভ নেককার বলে মনে করা হতো। তাঁরা তাঁদের বিভ্রান্তির কারণে আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাওয়ার আশায় মিথ্যা হাদীস বানাতেন।... (২য় শতকের প্রখ্যাত দরবেশ) আবু দাউদ নাখয়ী সুলাইমান ইবনু আমর রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ে ও দিনের পর দিন নফল সিয়াম পালনে ছিলেন অতুলনীয়। তা সত্ত্বেও তিনি মিথ্যা হাদীস বানিয়ে প্রচার করতেন।... আবু বিশর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মারওয়াযী খোরাসানের অন্যতম ফকীহ, আবিদ ও সুন্নাতের সৈনিক ছিলেন। সুন্নাতের পক্ষে এবং বিদ‘আত ও বিদ‘আতপন্থীদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন খড়গহস্ত। কিন্তু তিনি মিথ্যা কথাকে হাদীসের নামে প্রচার করতেন। ... ওয়াহ্ব ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাফস (২৫০ হি) তার যুগের অন্যতম নেককার আবিদ ও ওয়ায়িয ছিলেন। ২০ বছর তিনি কারো সাথে কোনো জাগতিক কথা বলেন নি। তিনিও হাদীসের নামে জঘন্য মিথ্যা কথা বলতেন।[7]
আল্লামা আলী কারী (১০১৪ হি.) লিখেছেন: অত্যধিক ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত সংসারত্যগী দরবেশগণ শবে-বরাতের নামায, রজব মাসের নামায ইত্যাদি বিভিন্ন ফযীলতের বিষয়ে অনেক বানোয়াট কথা হাদীস নামে প্রচার করেছেন। তাঁরা মনে করতেন এতে তাঁদের সাওয়াব হবে, দীনের খেদমত হবে। বানোয়াট হাদীসের ক্ষেত্রে নিজেদের এবং অন্যান্য মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন এ সকল মানুষ। তাঁরা এ কাজকে নেককাজ ও সাওয়াবের কাজ মনে করতেন, কাজেই তাঁদেরকে কোনো প্রকারেই বিরত রাখা সম্ভব ছিল না। অপরদিকে তাঁদের নেককর্ম, সততা, ইবাদত বন্দেগি ও দরবেশীর কারণে সাধারণ মুসলিম ও আলিমগণ তাঁদের ভালবাসতেন ও অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁদের কথাবার্তা আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতেন ও বর্ণনা করতেন। অনেক সময় ভালো মুহাদ্দিসও তাঁদের আমল আখলাকে ধোঁকা খেয়ে তাঁদের বানোয়াটি ও মিথ্যা হাদীস অসতর্কভাবে গ্রহণ করে নিতেন।[8]
[2] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত ১/১৮; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ৭/৫৫-৫৭।
[3] যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ১/২৮৫।
[4] ইবনু আদী, আল-কামিল ১/১৯৫।
[5] আব্দুল হাই লাখনবী, যাফরুল আমানী ফী মুখতাসারিল জুরজানী, ৪৩৩ পৃ:।
[6] মোললা আলী কারী, শারহু শারহি নুখবাতিল ফিকার, পৃ: ৪৫১।
[7] সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৮১-২৮৩।
[8] মোললা আলী কারী, শারহু শারহি নুখবাতুল ফিকর, পৃ: ৪৪৭-৪৪৮।