লগইন করুন
৬ষ্ঠ হিজরী শতক পর্যন্ত এ জাতীয় গ্রন্থগুলোই ছিল হাদীসের নামে মিথ্যাচারী ও তাদের মিথ্যাচার সম্পর্কে জানার প্রধান উৎস। ৬ষ্ঠ শতকের পরেও এ জাতীয় গ্রন্থ রচনা অব্যাহত থাকে। তবে জাল হাদীস চিহ্নিত করণ প্রক্রিয়ায় নতুন ধারার সৃষ্টি হয়।
কালের আবর্তনে হাদীস চর্চাসহ জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। বর্ণনাকারীদের পরিচয় জানার আগ্রহ কমতে থাকে। স্বল্প সময়ে ও স্বল্প কষ্টে যে কোনো বিষয় শিখে নেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। রাবীদের নামের ভিত্তিতে সংকলিত গ্রন্থ থেকে মিথ্যা হাদীস জেনে নেয়ার সময় ও আগ্রহ হরাস পায়। এজন্য মুহাদ্দিসগণ বিষয়ভিত্তিক জাল ও বানোয়াট হাদীস সংকলন শুরু করেন, যেন পাঠক সহজেই কোনো বিষয়ে কোনো হাদীস জাল কিনা তা জেনে নিতে পারেন। ৫ম হিজরী শতক থেকে এ জাতীয় গ্রন্থ প্রণয়ন শুরু হয়। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ইবনুল জাওযীর কর্মের মাধ্যমে এ ধারা বিশেষভাবে গতি লাভ করে। বর্তমান যুগ পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দিকে মুহাদ্দিসগণ এ সকল মাউদূ হাদীস সনদ সহকারে উল্লেখ করে সনদ আলোচনার মাধ্যমে এগুলির মিথ্যাচার প্রমাণ করতেন। পরবর্তী সময়ে সনদ উল্লেখ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র বানোয়াট হাদীসগুলো একত্রে সংকলন করা হয়।
এ সকল গ্রন্থের মধ্যে কিছু বিষয়ভিত্তিক বিন্যস্ত। কিছু গ্রন্থে হাদীসের প্রথম অক্ষর অনুসারে (Alphabeticlly) সাজানো হয়। অধিকাংশ মুহাদ্দিস শুধুমাত্র মাউযূ হাদীস একত্রিত করেন। কোনো কোনো মুহাদ্দিস সমাজে প্রচলিত হাদীস সমূহ একত্রিত করে সেগুলোর মধ্যে কোনটি সহীহ এবং কোনটি বানোয়াট তা বর্ণনা করেন। কেউ কেউ বানোয়াট হাদীস ছাড়াও দুর্বল হাদীসও সংকলিত করেছেন। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ বিষয়ে গত ৯ শতাব্দীতে অর্ধশতাধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এখানে এ জাতীয় প্রধান গ্রন্থগুলো ও লেখকদের নাম উল্লেখ করছি।
- আল-মাউদূআত, আবু সাঈদ মুহাম্মাদ ইবনু আলী আন-নাক্কাশ (৪১৪হি)।
- যাখীরাতুল হুফ্ফায, মুহাম্মাদ ইবনু তাহির ইবনুল কাইসুরানী (৫০৭হি)।
- আল-আবাতীল ওয়াল মানাকীর ওয়াস সিহাহ ওয়াল মাশাহীর, হুসাইন ইবনু ইবরাহীম আল-হামাযানী আল-জূযকানী (৫৪৩হি)।
- কিতাবুল কুস্সাস্, আব্দুর রাহমান ইবনু আলী ইবনুল জাওযী (৫৯৭ হি)।
- আল-মাউদূআত, আবুল ফারাজ, ইবনুল জাওযী (৫৯৭ হি)।
- আল-ইলালুল মুতানাহিয়া, আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী (৫৯৭ হি)।
- আল-আহাদীসুল মাউদূআহ ফীল আহকামিল মাশরূআ, আবু হাফস উমার ইবনু বাদর আল-মাউসিলী (৬২২ হি)।
- আল-মুগনী আন হিফযিল কিতাব, উমার আল-মাউসিলী (৬২২ হি)।
- আল-উকূফ আলাল মাউকূফ, উমার আল-মাউসিলী (৬২২ হি)।
- আল-মাউদূআত, হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আস-সাগানী (৬৫০ হি)।
- আদ-দুররুল মুলতাকিত, আস-সাগানী (৬৫০ হি)।
- আহাদীসুল কুস্সাস, আহমাদ ইবনু আব্দুল হালীম, ইবনু তাইমিয়া (৭২৮ হি)।
- মুখতাসারুল আবাতীল, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ যাহাবী (৭৪৮হি)।
- তারতীবু মাউদূআতি ইবনিল যাওযী, যাহাবী (৭৪৮ হি)।
- আল-মাউদূআত ফিল মাসাবীহ, উমার ইবনু আলী কাযবীনী (৭৫০হি)।
- আল-মানারুল মুনীফ, ইবনু কাইয়িম আল-জাউযিয়্যাহ (৭৫১ হি)।
- আল-আহাদীস আল্লাতী লা আসলা লাহা ফিল এহইয়া, আব্দুল ওয়াহহাব ইবনু আলী আস-সুবকী (৭৭১ হি)।
- আত-তাযকিরা ফিল আহাদীসিল মুশতাহিরা, মুহাম্মাদ ইবনু বাহাদুর আয-যারকাশী (৭৯৪ হি)
- তাবঈনুল আজাব ফী মা ওরাদা ফী শাহরি রাজাব, ইবনু হাজর আসকালানী আহমাদ ইবনু আলী (৮৫২ হি)।
- আল-মাকাসিদুল হাসানাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রাহমান সাখাবী (৯০২হি)।
- আল-লাআলী আল-মাসনূআহ, জালালুদ্দীন আব্দুর রাহমান সুয়ূতী (৯১১হি)।
- আত-তাআক্কুবাত আলাল মাউদূআত, সুয়ূতী (৯১১ হি)।
- আদ-দুরারুল মুনতাশিরাহ, সুয়ূতী (৯১১ হি)।
- তাহযীরুল খাওয়াস মিন আহাদীসিল কুস্সাস, সুয়ূতী (৯১১ হি)।
- আল-গাম্মায আলাল লাম্মায, আলী ইবনু আব্দুল্লাহ আস-সামহূদী (৯১১হি)
- তাময়ীযুত তাইয়িবি মিনাল খাবীস, আব্দুর রাহমান আয যাবীদী (৯৪৪হি)।
- আশ-শাযারাহ ফীল আহাদীসিল মুশতাহিরাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আলী আদ-দিমাশকী (৯৫৩ হি)।
- তানযীহুশ শারীয়াহ, আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবন আর্রাক (৯৬৩ হি)।
- তাযকিরাতুল মাউদূআত, মুহাম্মাদ তাহির পাটনী (ফাতানী) (৯৮৬ হি)।
- আল-আসরারুল মারফূআহ, মোল্লা আলী কারী (১০১৪ হি)।
- আল-মাসনূ ফী মা’রিফাতিল মাউদূ, মোল্লা আলী কারী (১০১৪ হি)।
- মুখতাসারুল মাকাসিদ, মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল বাকী যারকানী (১১২২হি)।
- আল-জাদ্দুল হিস্সীস ফী বায়ানি মা লাইসা বিহাদীস, আহমাদ ইবনু আব্দুল কারীম আমিরী (১১৪৩ হি)।
- কাশফুল খাফা, ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ আল-আজলূনী (১১৬২ হি)।
- আল-কাশফুল ইলাহী আন শাদীদিদ দা’ফি ওয়াল মাউদূ ওয়াল ওয়াহী, মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আত-তারাবলুসী (১১৭৭ হি)
- আন-নাওয়াফিহুল আতিরাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আস-সান‘আনী (১১৮১ হি)
- আন-নুখবাতুল বাহিয়্যাহ, মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আস-সাবনাবী (১২৩২ হি)
- আল-ফাওয়াইদুল মাজমূআ, মুহাম্মাদ ইবনু আলী শাওকানী (১২৫০হি)।
- আসনাল মাতালিব, মুহাম্মাদ ইবনু সাইয়িদ দারবীশ (১২৭৬ হি)।
- হুসনুল আসার, মুহাম্মাদ দারবীশ (১২৭৬ হি)।
- আল-আসারুল মারফূআহ, আব্দুল হাই লাখনাবী (১৩০৪ হি)।
- আল-লু’লু আল-মারসূ, মুহাম্মাদ ইবনু খালীল আল-মাশীশী আল-কাওকাজী (১৩০৫হি)।
- তাহযীরুল মুসলিমীন, মুহাম্মাদ ইবনুল বাশীর আল-মাদানী (১৩২৯হি)।
- আল-মাউযূআত, আবূ জাফর সিদ্দিকী ফুরফুরাবী (১৪২৩হি/ ২০০২ খৃ)
বর্তমান সময়েও এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে ও হচ্ছে।
প্রিয় পাঠক, এখানে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, একই বিষয়ে এত গ্রন্থের প্রয়োজন কি? আসল বিষয় হলো, দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে শুরু হওয়ার পরে হাদীসের নামে জালিয়াতির প্রচেষ্টা কখনো থামে নি। বিভিন্ন মুসলিম দেশে নতুন নতুন কথা হাদীসের নামে প্রচারিত হয়েছে। তখন সে দেশের প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ গবেষণার মাধ্যমে সেগুলোর সত্যতা ও অসত্যতা নির্ণয় করেছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী গবেষকদের সিদ্ধান্তে কোনো ভুল থাকলে তা পরবর্তী লেখকগণ আলোচনা করেছেন। এভাবে এ বিষয়ে লেখনি ও গবেষণার ধারা অব্যাহত থেকেছে।