লগইন করুন
কোনো সাক্ষ্য বা বক্তব্যের নির্ভুলতা নির্ণয়ের জন্য অন্য একটি পদ্ধতি হলো তাকে একই বিষয়ে একাধিক সময়ে প্রশ্ন করা। যদি দ্বিতীয় বারের উত্তর প্রথম বারের উত্তরের সাথে হুবহু মিলে যায় তবে তার নির্ভুলতা প্রমাণিত হয়। আর উভয়ের বৈপরীত্য অগ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে। সাহাবীগণ হাদীসের নির্ভুলতা নির্ণয়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। একটি উদাহরণ দেখুন।
তাবিয়ী উরওয়া ইবনু যুবাইর বলেন:
قَالَتْ لِي عَائِشَةُ: يَا ابْنَ أُخْتِي، بَلَغَنِي أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو مَارٌّ بِنَا إِلَى الْحَجِّ فَالْقَهُ فَسَائِلْهُ فَإِنَّهُ قَدْ حَمَلَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ عِلْمًا كَثِيرًا. قَالَ: فَلَقِيتُهُ فَسَاءَلْتُهُ عَنْ أَشْيَاءَ يَذْكُرُهَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ، قَالَ عُرْوَةُ: فَكَانَ فِيمَا ذَكَرَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ لا يَنْتَزِعُ الْعِلْمَ مِنَ النَّاسِ انْتِزَاعًا وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعُلَمَاءَ فَيَرْفَعُ الْعِلْمَ مَعَهُمْ وَيُبْقِي فِي النَّاسِ رُءُوسًا جُهَّالا يُفْتُونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَيَضِلُّونَ وَيُضِلُّونَ. قَالَ عُرْوَةُ: فَلَمَّا حَدَّثْتُ عَائِشَةَ بِذَلِكَ أَعْظَمَتْ ذَلِكَ وَأَنْكَرَتْهُ، قَالَتْ: أَحَدَّثَكَ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ هَذَا؟! قَالَ عُرْوَةُ: حَتَّى إِذَا كَانَ قَابِلٌ قَالَتْ لَهُ: إِنَّ ابْنَ عَمْرٍو قَدْ قَدِمَ فَالْقَهُ ثُمَّ فَاتِحْهُ حَتَّى تَسْأَلَهُ عَنِ الْحَدِيثِ الَّذِي ذَكَرَهُ لَكَ فِي الْعِلْمِ. قَالَ: فَلَقِيتُهُ فَسَاءَ لْتُهُ فَذَكَرَهُ لِي نَحْوَ مَا حَدَّثَنِي بِهِ فِي مَرَّتِهِ الأُولَى. قَالَ عُرْوَةُ: فَلَمَّا أَخْبَرْتُهَا بِذَلِكَ قَالَتْ: "مَا أَحْسَبُهُ إِلا قَدْ صَدَقَ، أَرَاهُ لَمْ يَزِدْ فِيهِ شَيْئًا وَلَمْ يَنْقُصْ.
‘‘আমার খালাম্মা আয়েশা (রা) আমাকে বলেন: ভাগ্নে,শুনেছি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র ইবনুল আস (রা) আমাদের এলাকা দিয়ে হজ্জে গমন করবেন। তুমি তাঁর সাথে দেখা কর এবং তার থেকে প্রশ্ন করে শিখ। কারণ তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন। উরওয়া বলেন: আমি তখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করি। তিনি সে সব বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি যে সকল কথা বলেন, তার মধ্যে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নিবেন না। কিন্তু তিনি জ্ঞানীদের কব্জা করবেন (মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের গ্রহণ করবেন), ফলে তাদের সাথে জ্ঞানও উঠে যাবে। মানুষের মধ্যে মুর্খ নেতৃবৃন্দ অবশিষ্ট থাকবে, যারা ইলম ছাড়াই ফাতওয়া প্রদান করবে এবং এভাবে নিজেরা বিভ্রান্ত হবে এবং অন্যদেরও বিভ্রান্ত করবে।’’ উরওয়া বলেন: আমি যখন আয়েশাকে (রা) একথা বললাম তখন তিনি তা গ্রহণ করতে আপত্তি করলেন। তিনি বলেন: তিনি কি তোমাকে বলেছেন যে, একথা তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন?
উরওয়া বলেন: পরের বছর আয়েশা (রা) আমাকে বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনু আমর আগমন করেছেন। তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করে তাঁর সাথে কথাবার্তা বল। কথার ফাঁকে ইলম উঠে যাওয়ার হাদীসটির বিষয়েও কথা তুলবে। উরওয়া বলেন: আমি তখন তাঁর সাথে সাক্ষাত করি এবং তাঁকে প্রশ্ন করি। তিনি তখন আগের বার যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই হাদীসটি বললেন। উরওয়া বলেন: আমি যখন আয়েশা (রা) কে বিষয়টি জানালাম তখন তিনি বলেন: আমি বুঝতে পারলাম যে, আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র ঠিকই বলেছেন। আমি দেখছি যে, তিনি একটুও বাড়িয়ে বলেন নি বা কমিয়ে বলেন নি।[1]
এখানেও আমরা হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহাবীগণের অকল্পনীয় সাবধানতার নমুনা দেখি। আয়েশা (রা) আব্দুল্লাহ (রা)-এর সত্যবাদিতায় সন্দেহ করেন নি। কিন্তু সত্যবাদী ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে। কাজেই বিনা নিরীক্ষায় তাঁরা কিছুই গ্রহণ করতে চাইতেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে কথিত কোনো হাদীস তারা নিরীক্ষার আগেই ভক্তিভরে হৃদয়ে স্থান দিতেন না।