লগইন করুন
বিভিন্ন রেওয়ায়াত অনুযায়ী বায়তুল মুক্বাদ্দাস সহ সমগ্র শাম অর্থাৎ সিরিয়া অঞ্চল পবিত্র ভূমির অন্তর্গত। আমাদের রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক শাম পবিত্র ভূমি হওয়ার বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে।[41] আবহাওয়াগত দিক দিয়ে সিরিয়া প্রাচীন কাল থেকেই শস্য-শ্যামল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ এলাকা হিসাবে খ্যাত। জাহেলী যুগে মক্কার ব্যবসায়ীগণ নিয়মিত ভাবে ইয়ামন ও সিরিয়ায় যথাক্রমে শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে ব্যবসায়িক সফরে অভ্যস্ত ছিল। বলা চলে যে, এই দু’টি সফরের উপরেই মক্কাবাসীদের জীবিকা নির্ভর করত। সূরা কুরায়েশ-য়ে এ বিষয়ে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লাহ সূরা বনু ইস্রাঈলের ১ম আয়াতে এই এলাকাকে بَارَكْنَا حَوْلَهُ বা ‘বরকতময় এলাকা’ বলে অভিহিত করেছেন। এর বরকত সমূহ ছিল দ্বিবিধ: ধর্মীয় ও পার্থিব। ধর্মীয় দিকে বরকতের কারণ ছিল এই যে, এ অঞ্চলটি হ’ল, ইবরাহীম, ইয়াকূব, দাঊদ, সুলায়মান, ঈসা (আঃ) সহ কয়েক হাযার নবীর জন্মস্থান, বাসস্থান, কর্মস্থল ও মৃত্যুস্থান। মূসা (আঃ)-এর জন্ম মিসরে হ’লেও তাঁর মৃত্যু হয় এখানে এবং তাঁর কবর হ’ল বায়তুল মুক্কাদ্দাসের উপকণ্ঠে। নিকটবর্তী তীহ্ প্রান্তরে মূসা, হারূণ, ইউশা‘ প্রমুখ নবী বহু বৎসর ধরে তাওহীদের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। তাঁদের প্রচারের ফল অন্ততঃ এটুকু ছিল এবং এখনও আছে যে, আরব উপদ্বীপে কোন নাস্তিক বা কাফির নেই।
অতঃপর পার্থিব বরকত এই যে, সিরিয়া অঞ্চল ছিল চিরকাল উর্বর এলাকা। এখানে রয়েছে অসংখ্য ঝরণা, বহমান নদ-নদী এবং অসংখ্য ফল-ফসলের বাগ-বাগিচা সমূহ। বিভিন্ন সুমিষ্ট ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে বলা যায় অতুলনীয়। একটি হাদীছে এসেছে, দাজ্জাল সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করবে কিন্তু চারটি মসজিদে পৌঁছতে পারবে না; বায়তুল্লাহ, মসজিদে নববী, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে তূর’।[42]
মূসা (আঃ)-এর আগমনকালে বায়তুল মুক্বাদ্দাস সহ সমগ্র শাম এলাকা আমালেক্বা সম্প্রদায়ের অধীনস্থ ছিল। তারা ছিল কওমে ‘আদ-এর একটি শাখা গোত্র। দৈহিক দিক দিয়ে তারা ছিল অত্যন্ত সুঠাম, বলিষ্ঠ ও ভয়াবহ আকৃতি বিশিষ্ট। তাদের সাথে যুদ্ধ করে বায়তুল মুক্বাদ্দাস অধিকার করার নির্দেশ মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ দিয়েছিলেন। হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর মিসরে হিজরতের পর কেন‘আন সহ শাম এলাকা আমালেক্বাদের অধীনস্থ হয়। আয়াতে বর্ণিত ‘রাজ্যাধিপতি বানিয়েছেন’ বাক্যটি ভবিষ্যদ্বাণী হ’তে পারে, যার সম্পর্কে মূসা (আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে নিশ্চিত ওয়াদা পেয়েছিলেন। তবে শর্ত ছিল যে, তারা জিহাদ করে কেন‘আন দখল করবে। অর্থাৎ আল্লাহর উপরে ভরসা করে জিহাদে অগ্রসর হ’লে তারা অবশ্যই জয়লাভ করবে। যেভাবে ফেরাঊনের বিরুদ্ধে তারা অলৌকিক বিজয় অর্জন করেছিল মাত্র কিছুদিন পূর্বে।
অতঃপর ‘তাদেরকে এমন সব বস্ত্ত দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বের কাউকে দেওয়া হয়নি’ বলতে তাদের দেওয়া ধর্মীয় নেতৃত্ব ও সামাজিক নেতৃত্ব উভয়কে বুঝানো হয়েছে, যা একত্রে কাউকে ইতিপূর্বে দেওয়া হয়নি। এটাও ভবিষ্যদ্বাণী হ’তে পারে, যা তাদের বংশের পরবর্তী নবী দাঊদ ও সুলায়মানের সময়ে পূর্ণতা লাভ করেছিল। তাদের সময়েও এটা সম্ভব ছিল, যদি নাকি তারা নবী মূসা (আঃ)-এর নেতৃত্বে জিহাদে বেরিয়ে পড়ত। কিন্তু হতভাগারা তা পারেনি বলেই বঞ্চিত হয়েছিল।
[42]. আহমদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহু, শারহুস সুন্নাহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৩৪।