লগইন করুন
হাফেয ইবনু কাছীর বর্ণনা করেন যে, ইউসুফ-এর জন্মের কিছুকাল পরেই বেনিয়ামীন জন্মগ্রহণ করেন। বেনিয়ামীন জন্মের পরপরই তাদের মায়ের মৃত্যু ঘটে।[12] তখন মাতৃহীন দুই শিশুর লালন-পালনের ভার তাদের ফুফুর উপরে অর্পিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইউসুফকে এত বেশী রূপ-লাবণ্য এবং মায়াশীল ব্যবহার দান করেছিলেন যে, যেই-ই তাকে দেখত, সেই-ই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ত। ফুফু তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। একদন্ড চোখের আড়াল হ’তে দিতেন না। এদিকে বিপত্নীক ইয়াকূব (আঃ) মাতৃহীনা দুই শিশু পুত্রের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর দুর্বল এবং সর্বদা ব্যাকুল থাকতেন। ইতিমধ্যে ইউসুফ একটু বড় হ’লে এবং হাঁটাচলা করার মত বয়স হ’লে পিতা ইয়াকূব (আঃ) তাকে ফুফুর নিকট থেকে আনতে চাইলেন। কিন্তু ফুফু তাকে ছাড়তে নারায। ওদিকে পিতাও তাকে নিয়ে আসতে সংকল্পবদ্ধ। শুরু হ’ল পিতা ও ফুফুর মধ্যে মহববতের টানাপড়েন। ফলে ঘটে গেল এক অঘটন।
অধিক পীড়াপীড়ির কারণে ইউসুফকে যখন তার পিতার হাতে তুলে দিতেই হ’ল, তখন স্নেহান্ধ ফুফু গোপনে এক ফন্দি করলেন। তিনি স্বীয় পিতা হযরত ইসহাক্ব (আঃ)-এর নিকট থেকে যে একটা হাঁসুলি পেয়েছিলেন এবং যেটাকে অত্যন্ত মূল্যবান ও বরকতময় মনে করা হ’ত, ফুফু সেই হাঁসুলিটিকে ইউসুফ-এর কাপড়ের নীচে গোপনে বেঁধে দিলেন।
অতঃপর ইউসুফ তার পিতার সাথে চলে যাওয়ার পর ফুফু জোরেশোরে প্রচার শুরু করলেন যে, তার মূল্যবান হাঁসুলিটি চুরি হয়ে গেছে। পরে তল্লাশী করে তা ইউসুফের কাছে পাওয়া গেল। ইয়াকূবী শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী ফুফু ইউসুফকে তার গোলাম হিসাবে রাখার অধিকার পেলেন। ইয়াকূব (আঃ)ও দ্বিরুক্তি না করে সন্তানকে তার ফুফুর হাতে পুনরায় সমর্পণ করলেন। এরপর যতদিন ফুফু জীবিত ছিলেন, ততদিন ইউসুফ তার কাছেই রইলেন।[13]
এই ছিল ঘটনা, যাতে ইউসুফ নিজের অজান্তে চুরির অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এরপর বিষয়টি সবার কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছিল যে, তিনি ছিলেন এ ব্যাপারে একেবারেই নির্দোষ। ফুফুর অপত্য স্নেহই তাকে ঘিরে এ চক্রান্ত জাল বিস্তার করেছিল। এ সত্য কথাটি তার সৎভাইদেরও জানা ছিল। কিন্তু এটাকেই তারা ইউসুফের মুখের উপরে বলে দেয় যখন আরেক বানোয়াট চুরির অভিযোগে বেনিয়ামীনকে মিসরে গ্রেফতার করা হয়। ইউসুফ তাতে দারুণ মনোকষ্ট পেলেও তা চেপে রাখেন।
বলা বাহুল্য, শৈশবে যেমন ইউসুফ স্বীয় ফুফুর স্নেহের ফাঁদে পড়ে চোর (?) সাব্যস্ত হয়ে ফুফুর গোলামী করেন, যৌবনে তেমনি যুলায়খার চক্রান্তে পড়ে মিথ্যা অপবাদে অন্যূন সাত বছর জেল খাটেন- যে ঘটনা পরে বর্ণিত হবে।
[13]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ইউসুফ ৭৭।