লগইন করুন
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, لم يَكْذِبْ إبراهيمُ عليه الصلاةُ والسلام إلاّ ثلاثَ كَذَباتٍ، ‘ইবরাহীম (আঃ) তিনটি ব্যতীত কোন মিথ্যা বলেননি’। উক্ত তিনটি মিথ্যা ছিল- (১) মেলায় না যাবার অজুহাত হিসাবে তিনি বলেছিলেন إِنِّيْ سَقِيْمٌ ‘আমি অসুস্থ’ (ছাফফাত ৩৭/৮৯)। (২) মূর্তি ভেঙ্গেছে কে? এরূপ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَذَا ‘বরং এই বড় মূর্তিটাই এ কাজ করেছে’ (আম্বিয়া ২১/৬৩)। (৩) মিসরের লম্পট রাজার হাত থেকে বাঁচার জন্য স্ত্রী সারা-কে তিনি বোন হিসাবে পরিচয় দেন।[15]
হাদীছে উক্ত তিনটি বিষয়কে ‘মিথ্যা’ শব্দে উল্লেখ করা হ’লেও মূলতঃ এগুলির একটাও প্রকৃত অর্থে মিথ্যা ছিল না। বরং এগুলি ছিল আরবী অলংকার শাস্ত্রের পরিভাষায় ‘তাওরিয়া’ (الةورية) বা দ্ব্যর্থ বোধক পরিভাষা। যেখানে শ্রোতা বুঝে এক অর্থ এবং বক্তার নিয়তে থাকে অন্য অর্থ। যেমন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন হযরত আয়েশার কাছে তার এক বৃদ্ধা খালাকে দেখে বললেন, কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। একথা শুনে খালা কান্না শুরু করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তারা তখন সবাই যুবতী হয়ে যাবে’।[16] হিজরতের সময় পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জওয়াবে আবুবকর (রাঃ) বলেন, هذا الرجلُ يَهْديني الطريقَ ‘ইনি আমাকে পথ দেখিয়ে থাকেন’।[17] এতে লোকটি ভাবল, উনি একজন সাধারণ পথপ্রদর্শক ব্যক্তি মাত্র। অথচ আবুবকরের উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাদের নবী অর্থাৎ ধর্মীয় পথপ্রদর্শক (يهديني الى طريق الجنة)। অনুরূপভাবে যুদ্ধকালে রাসূল (ছাঃ) একদিকে বেরিয়ে অন্য দিকে চলে যেতেন। যাতে তাঁর গন্তব্য পথ গোপন থাকে। এগুলি হ’ল উক্তিগত ও কর্মগত তাওরিয়ার উদাহরণ।
[16]. শামায়েলে তিরমিযী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৮৭।
[17]. বুখারী (দেওবন্দ ১৯৮৫) ১/৫৫৬ পৃঃ হা/৩৯১১ ‘নবীর হিজরত’ অনুচ্ছেদ ; আর-রাহীক্ব পৃঃ ১৬৮।