মুখতাসার যাদুল মা‘আদ অনুচ্ছেদ সমুহের সূচী ও বিবরন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)
হুদায়বিয়ার সন্ধির বর্ণনা

হিজরী ৬ষ্ঠ সালে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, নাবী (ﷺ) চৌদ্দশত সাহাবী নিয়ে উমরাহ করার উদ্দেশ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। প্রথমে কুরাইশদের খবরাখবর সংগ্রহ করার জন্য একজন গোয়েন্দা মক্কায় পাঠালেন। উসফান নামক স্থানে পৌঁছে তিনি জানতে পারলেন যে, কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করছে। তিনি আরও জানতে পারলেন যে, কুরাইশরা তাকে কাবার কাছেই পৌঁছতে দিবেনা এবং তাঁর সাথে তারা প্রচন্ড লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। নাবী (ﷺ) সাহাবীদের সাথে পরামর্শে বসলেন। আবু বকর (রাঃ) এর পরামর্শ ছিল, কুরাইশদেরকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া যাবেনা। তারা যদি রাস্তায় আটকিয়ে দেয়, তাহলে প্রয়োজনে তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। রসূল (ﷺ) আবু বকরের এই মতকেই পছন্দ করলেন এবং সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌঁছে নাবী (ﷺ) উছমান (রাঃ) কে এই খবর দেয়ার জন্য মক্কায় পাঠালেন যে, আমরা যুদ্ধ করার জন্য মক্কায় আসছিনা। উমরাহ পালন করাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং আমাদের পথ ছেড়ে দাও। কিন্তু কুরাইশরা এই কথার মোটেই মূল্যায়ন করলনা। তারা বলল- আমরা তোমার কথা শুনলাম। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধির ব্যাপারে আলোচনা শুরু হল। আলোচনা সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। এক পর্যায়ে সন্ধির পরিবর্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। উভয় পক্ষের লোকেরা পরস্পর তীর ও পাথর নিক্ষেপে লিপ্ত হল। এই পর্যায়ে নাবী (ﷺ) এর কাছে খবর পৌঁছল যে, কুরাইশরা উছমান (রাঃ) কে হত্যা করে ফেলেছে। মুসলমানেরা এই খবর শুনে রসূান্বিত হলেন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন। তারা একটি গাছের নীচে একত্রিত হয়ে রসূল (ﷺ) এর হাতে এই মর্মে বায়আত নিলেন যে, তারা যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্ত্তত এবং কোনক্রমেই এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ না নিয়ে মদ্বীনায় ফেরত যাবেন না। কিন্তু একটু পরেই সহীহ-সালামতে উছমান (রাঃ) মক্কা হতে ফেরত আসলেন। উছমান (রাঃ) এর আগমণে পরিস্থিতি শান্ত হল। পুনরায় নতুন করে সন্ধির ব্যাপারে আলোচনা শুরু হল। আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে নিম্নে বর্ণিত শর্তে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সন্ধি চুক্তি রচিত হল। ইসলামের ইতিহাসে এটি হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।