লগইন করুন
পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সবচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।
পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।
এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।
পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে।[1] আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।
পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।[2]
পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।
এই সময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,
‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’
অবশ্য পাত্রীর গলে নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারণা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি।[3]
এরপর পছন্দ-অপছন্দের কথা ভাবনা-চিন্তা করে পরে জানাবে।
অনুষ্ঠান করে ক্ষণেকের দেখায় পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও দেখা যায়।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’[4]
সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।[5]
পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ غَشَّ.
‘‘যে (কাউকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (ইর ১৩১৯নং)
পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ-বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া হবে।[6]
পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে (টোঁ-টোঁ কোম্পানী) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।
পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে পাত্রী ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
অবশ্য প্রগতিশীল (দুর্গতিশীল) অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার জন্য ভয়ংকর।
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
‘‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’’[7]
পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন এবং ত্রুটি গোপন করা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই জানে।
পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ্ করতে পারে।[8]
বিশেষ করে অপাত্র, বিদআতী, মাযারী, বেনামাযী, ফাসেক, ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, বদমেজাজী প্রভৃতি দেখে ও শুনে তাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়াই ওয়াজেব। কিন্তু হায়! সে সুপাত্র আর ক’জন সুশীলার ভাগ্যে জোটে। আর সে সুশীলাই বা আছে ক’জন? পক্ষান্তরে দ্বীন ও চরিত্রের অনুকূল কোন বিষয় অপছন্দ করে অমত প্রকাশ করা আধুনিকাদের নতুন ফ্যাশান। তাই তো কেউ পাত্র অপছন্দ করে এই জন্যে যে, পাত্রের দাড়ি আছে! অথবা বোরকা পরতে হবে। বাইরে যেতে পাবে না! সিনেমা ও মেলা-খেলা দেখতে পাবে না। পাত্র প্যান্ট্ পরে না, পাত্রের হিপ্পি নেই, সোজা টাইপের তাই -যদিও সে খোজা নয়! তাই তো যুবকরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের প্রিয়তমা ও প্রণয়িনীদের একান্ত অনুগত হতে শুরু করেছে। নচেৎ হয়তো বিয়েই হবে না অথবা প্রেয়সীর মনসঙ্গ পাবে না! পণের গরম বাজারেও এরূপ উদাহরণ যথেষ্ট পরিদৃষ্ট হয়! কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরের অভাব নেই কোথাও! বরং এই বেগুন ও তার খদ্দের দিয়েই হাটের প্রায় সমস্ত স্থান পূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর পানাহ।
একশ্রেণীর সভ্য (?) মানুষ যারা বউ দেখতে গিয়ে দ্বীন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ‘নামায পড়ে কি না, কুরআন পড়তে জানে কি না’--এসব বিষয় জানার কোন প্রয়োজনই মনে করে না। পক্ষান্তরে নাচ-গান জানে কি না, সেতারা-বেহালা বাজাতে পারে কি না---সে সব বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন থাকে! আহা! পাঁচজনকে খোশ করতে পারলে তবেই তো বউ নিয়ে গর্ব হবে! এই শ্রেণীর মানুষ সভ্য (?) হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ‘মুসলিম’ নয়।
পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব’লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য।[9]
পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারণে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ।[10]
যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিৎ নয়।
অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও ‘পণে’ পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুঁত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়। নও-সম্বন্ধের ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ‘ওরা মানুষের মান জানে না’ দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী রদ্ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস হলে, বিয়ের পাক্কা ইরাদা না নিয়ে (যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে, নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি নয়।
বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ-গুণ খুলে বলা অবশ্যই উচিৎ।[11] যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে, তার জানতে-শুনতে কোন বেদ্বীন বা বিদআতী ও নোংরা পরিবেশে প্রেমসূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জন করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানোও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য।[12] এ লক্ষ্যে পৌঁছনো সকল মুসলিমের কর্তব্য।
পরন্তু ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভায়ের কোন বিপদ বা কষ্ট দূর করে আল্লাহ কিয়ামতে তার বিপদ ও কষ্ট দূর করবেন।’’[13] কন্যাদায় আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এক চরম বিপদ। এ বিপদেও মুসলিম ভাইকে সাহায্য করা মুসলিমের কর্তব্য। অর্থ, সুপরামর্শ ও সুপাত্রের সন্ধান দিয়ে উপকার, বড় উপকার। অবশ্য এমন উপকারে নিজের ক্ষতি এবং বদনামও হতে পারে। কারণ, পাত্র দেখে দিয়ে মেয়ের সুখ হলে তার মা-বাবা বলবে, ‘আল্লাহ দিয়েছে।’ পক্ষান্তরে দুখ বা জবালা-জবলন হলে বলবে, ‘অমুক দিলে বা বিপদে ফেললে।’ অথচ সুখ-দুঃখ উভয়ই আল্লাহরই দান; ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া জেনে-শুনে কেউ কষ্টে ফেলে দেয় না। কিন্তু অবুঝ মানুষ অনিচ্ছাকৃত এসব বিষয়ে উপকারীকেও অপকারীরূপে দোষারোপ করে থাকে; যা নির্ঘাত অন্যায়। আর এ অন্যায়ে সবর করায় উপকারীর অতিরিক্ত সওয়াব লাভ হয়।
দ্বীনদার সুপাত্র পেলে অভিভাবকের উচিৎ বিলম্ব না করা। বাড়িতে নিজেদের খিদমত নেওয়ার উদ্দেশ্যে, আরো উঁচু শিক্ষিতা করার উদ্দেশ্যে (যেহেতু বিয়ের পরও পড়তে পারে) অথবা তার চাকুরির অর্থ খাওয়ার স্বার্থে অথবা গাফলতির কারণে মেয়ে বা বোনের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া বা ‘দিচ্ছি-দিব’ করা তার জন্য বৈধ নয়।[14]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের নিকট যদি এমন ব্যক্তি (বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তার (সাথে কন্যার) বিবাহ দাও। যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও বড় ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[15] তখন ঐ মেয়ের পদস্খলন ঘটলে কোর্টকাছারি বা দাঙ্গা-কলহও হতে পারে।
প্রকাশ যে, যুবতীর বয়স হলে উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে।[16] নচেৎ কেবলমাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন অপাত্রের সাথে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে বের হয়ে গিয়ে কোর্টে ‘লাভ ম্যারেজ’ করা এবং অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তার অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করা হারাম ও বাতিল। সাধারণতঃ ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চিরজীবন ব্যভিচার করে থাকে।[17]
পরন্তু প্রেম হল ধূপের মত; যাতে সুবাসের আমেজ থাকলেও তার সূত্রপাত হয় জবলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে। তাই প্রেমে পড়ে আগা-পিছা চিন্তা না করে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচন করায় ঠকতে হয় অধিকাংশে।
ছেলের বয়স হলেও সত্বর বিবাহ দেওয়া অভিভাবকের কর্তব্য। ছেলেকে ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। ছেলে ‘বিয়ে করব না’ বললেও তারা কর্তব্যে পিছপা হবে না। কারণ, ‘‘পুরুষের একটা বয়স আছে; যখন নারী-নেশা গোপনে মনকে পেয়ে বসে। অবস্থার চাপে সে বিয়ে করবে না বললেও, সত্যি সত্যি ‘না’ করলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নারী-সান্নিধ্যের কথা পরের মুখ দিয়ে শুনতেও মন্দ লাগে না। মন বলে, ‘চাই চাই’, মুখ বলে, ‘চাইনে।’’ অবস্থা এই হলে তার বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকেও সে রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক সতর্ক হলে পাপ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে অভিভাবক যদি যুবককে বিয়েতে বাধা দেয় অথবা দ্বীনদার সুপাত্রীকে বিয়ে করতে না দিয়ে তার কোন আত্মীয় অপাত্রীকে বউ করে আনতে চায় অথবা পণে পছন্দ না হয়ে বিয়েতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেই যায় তবে সে ক্ষেত্রে মা-বাপের অবাধ্য হওয়া পাপ নয়। ব্যভিচারের ভয় হলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বাধ্য হওয়াই মুসলিম যুবকের উচিৎ।
তবে নিছক কারো প্রেমে পড়ে সুপাত্রী দ্বীনদার যুবতী ছেড়ে মা-বাপের কথা না মেনে নিজের ইচ্ছামত অপাত্রী বিবাহ করা বা ‘লাভ ম্যারেজ’ করায় পিতামাতার তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ যাতে রাজী, তাতে মা-বাপ বা সাতগুষ্ঠি রাজী না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে যাতে আল্লাহ রাজী নন, তাতে মা-বাপ ও চৌদ্দগুষ্ঠিকে রাজী করা যুবকের আত্মীয় ও মাতৃপিতৃভক্তি নয় বরং প্রবৃত্তি ও আত্মতৃপ্তির পরিচয়।
কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী বা পাত্রীপক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তাঁর দ্বীনদার বান্দা-বান্দীকে সঠিক পথ নির্দেশ করেন।[18]
সুপাত্রে কন্যা পড়লে সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। ‘দশ পুত্রসম কন্যা; যদি সুপাত্রে পড়ে।’
পাত্র-পাত্রী পছন্দ এবং বাগদানের পর তাদের আপোসের মধ্যে আসা-যাওয়া, পত্রালাপ, টেলিফোনে দূরালাপ, একান্তে ভ্রমণ, একে অপরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য অবাধ মিলামিশা, কোর্ট্শিপ বা ইউরোপীয় প্রথায় তাদের আপোসের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া প্রভৃতি ইসলামে বৈধ নয়। ‘বিয়ে তো হবেই’ মনে ক’রে বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বাগদত্তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার, নির্জনতা অবলম্বন, একাকী কুরআন শিক্ষা দেওয়া প্রভৃতিও হারাম।[19] অবশ্য বিবাহ আক্দ সম্পন্ন হয়ে থাকলে তার সাথে (সারার পূর্বেও) স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে এবং কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি দিতে পারে। সমাজে তা নিন্দনীয় হলেও শরীয়তে নিন্দনীয় নয়।[20]
বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে ভেবে নিনঃ-
আপনি কি ভালোবাসার মর্মার্থ জানেন? কেবল যৌন-সুখ লুটাই প্রকৃত সুখ নয়---তা জানেন তো? আপনি কি আপনার তাকে সুখী ও খুশী করতে পারবেন?
আপনি তাকে চিরদিনের জন্য নিজের অর্ধেক অঙ্গ মনে করতে পারবেন? আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার চেয়ে দাম্পত্য-সুখ রক্ষা করতে কি অধিক সচেষ্ট হতে পারবেন?
আপনাদের উভয়ের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝির সময় সন্ধির উদ্দেশ্যে একটুও নমনীয়তা স্বীকার করতে পারবেন তো? বিবাহ আপনার বহু স্বাধীনতা হরণ করে নেবে, সে কথা জানেন তো? দাম্পত্য কেবল কয়েক দিনের সফর নয় তা জানেন তো?
বলা বাহুল্য, বিবাহ কোন মজার খেলা নয়। বিবাহ কাঁধের জোঁয়াল। বিবাহ একটি অনুষ্ঠানের নাম, যাতে কনের আঙ্গুলে আংটি এবং বরের নাকে লাগাম পরানো হয়। স্ত্রীর গলায় হার এবং স্বামীর গলায় বেড়ি পরানো হয়। বিবাহ ‘দিল্লী কা লাড্ডু; (হাওয়া-মিঠাই) যো খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা, আওর যো নেহীঁ খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা!
[2] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নযরিল খাত্বিব, মুসাইদ আল-ফালিহ২৮পৃঃ)
[3] (আফরাহুনা, অজ্ঞাতদ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২পৃঃ)
[4] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭নং)
[5] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৯নং)
[6] (হাশিয়াতু রওযিল মুরাববা’ ৬/২৫৪)
[7] (সূরা আন-নিসা (২৪) : ৬৩)
[8] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নাযারিল খাত্বিব,৩৫পৃঃ)
[9] (ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)
[10] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৬নং)
[11] (মিশকাতুল মাসাবীহ৩৩২৪)
[12] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৯৬৬নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৪নং)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসাইয়্যাহ, ইবনে বায ৫৫পৃঃ, ইসলাম মেঁ হালাল অ হারামঃ ২৩৬পৃঃ)
[15] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯০নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক ২/১২৮)
[17] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৪০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩১নং)
[18] (সহীহ নাসাঈ, আল্লামা আলবানী ৩০৫০নং)
[19] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/১৩৬)
[20] (ফাতাওয়া উসাইমীনঃ২/৭৪৮)