লগইন করুন
আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী আবাদ রাখার জন্য মানুষকে খলীফারূপে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে এমন প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি দান করেছেন যাতে সে অতি সহজে নিজের বংশ বৃদ্ধি ও আবাদ করতে পারে। ক্ষুধা-নিবৃত্তি করে যেমন তার নিজের অস্তিত্ব অবশিষ্ট থাকে, তদ্রূপ যৌনক্ষুধা নিবৃত্তি করলে তার বংশ বাকী থাকবে।
এই যৌনক্ষুধা এমন এক ক্ষুধা, যার তাড়নায় ক্ষুধার্ত মানুষ নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তে রাখতে পারে না। ক্ষুধা উপশান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতিস্থ হতে পারে না।
অবশ্য উক্ত ক্ষুধা নিবারণের জন্য পৃথিবীতে সাধারণতঃ তিনটি রীতি রয়েছে ;
প্রথমতঃ ‘ফ্রী-সেক্স’-এর পশুবৎ রীতি; যাতে ধর্মীয়, নৈতিক বা লৌকিক কোন প্রকারের বাধা ও নিয়ন্ত্রণ নেই, যখন যেভাবে ইচ্ছা কামপিপাসা দূর করা যায়। যাতে সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলতা এবং বংশে আসে কত শত জারজ।
দ্বিতীয়তঃ সংযম রীতি; যাতে মানুষ ইন্দ্রিয় বাসনাকে নিগৃহীত রাখে। কোন প্রকারের বীর্যক্ষয়কে পাপ মনে করে। এরূপ বৈরাগ্যবাদ প্রকৃতি-ধর্মেরও বিরোধী।
তৃতীয়তঃ নিয়ন্ত্রিত রীতি; গন্ডি-সীমার অভ্যন্তরে থেকে কাম-বাসনাকে মানুষ চরিতার্থ করতে পারে। ঐ সীমা উল্লংঘন করে নিয়ন্ত্রণ-হারা হতে পারে না। এই রীতিই হল মানুষের জন্য প্রকৃতিসিদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ। বিবাহ-বন্ধনের মাঝে সীমিত ও রীতিমত যৌনাচার ও কামবাসনা চরিতার্থ করা যায়। কিন্তু বল্গাহীনভাবে ব্যভিচার করা যায় না। এই নীতিই সমস্ত ঐশীধর্মের নীতি এবং ইসলামের আদর্শ। ইসলাম বিবাহকে বৈধ করেছে এবং ব্যভিচারকে অবৈধ ও হারাম ঘোষণা করেছে। নারী-পুরুষের এই মিলনকে যদি নিয়ন্ত্রিত না করা হত, তাহলে পৃথিবীতে সুশৃঙ্খল সমাজ ও সংসার গড়ে উঠত না। স্থায়ী হত না প্রেম ও সম্প্রীতি। সেই দাম্পত্য গড়ে উঠত না, যাতে থাকে একের অন্যের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থত্যাগ ও উৎসর্গ।
তাইতো প্রয়োজন ছিল ব্যভিচারকে কঠোরভাবে দমন করা। যাতে সমাজের মানুষরা অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল না হয়ে উঠে, লাগামহীন যৌনাচারে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব না ঘটে এবং মানুষ পশুর পর্যায়ে নেমে না যায়।
তাই তো ইসলামে রয়েছে ব্যভিচারীর জন্য কঠোর শাস্তি-ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী---ওদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত কর; যদি তোমরা আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাসী হও, তাহলে আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে। আর মু’মিনদের একটি দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’’[1]
আর এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কার অথবা কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে।[2]
এ তো হল অবিবাহিত ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর শাস্তি। বিবাহিতদের শাস্তি হল তাদেরকে কোমর অবধি মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা।[3]
তদনুরূপ সমকাম বা সমলিঙ্গী-ব্যভিচারকেও ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ নারীর প্রতি এবং নারী পুরুষের প্রতি আসক্ত এবং উভয়েই একে অপরের মিলন লাভের আকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই প্রকৃতির সীমা উল্লংঘন করে এবং দ্বীনী নিয়ন্ত্রণের বেড়া ডিঙ্গিয়ে যারা নির্লজ্জভাবে পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে সমকামে নিজেদের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে তাদেরও শাস্তি হত্যা।[4]
কৃত্রিম-মৈথুন বা হস্তমৈথুন অত বড় মহাপাপ না হলেও যা স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুন ক্ষতি ও হানিকর এবং তা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذلِكَ فَأُولئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
অর্থাৎ, ‘‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ([5]) ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তারা নিন্দার্হ হবে না এবং তাছাড়া অন্যান্য পথ অবলম্বন করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।’’[6]
সুতরাং কৃত্রিম মৈথুন এক প্রকার সীমালংঘন; যা মহাপাপ। তাছাড়া আল্লাহর রসূল (ﷺ) যখন সামর্থ্যবান যুবকদেরকে বিবাহ করতে বললেন, তখনই অসামর্থ্যবান যুবককে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। যাতে যৌন-তাড়নায় যুবকদল কোনরূপ বেয়াড়া না হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এতে হয়তো ক্ষণিকের যৌনস্বাদ আছে কিন্তু এর পশ্চাতে আছে মহালাঞ্ছনা, মহাপরিতাপ।
শরীয়ত যেমন সর্বপ্রকার ব্যভিচারকে হারাম ঘোষণা করেছে তেমনি ব্যভিচারের কাছ ঘেঁসতে, অবৈধ যৌনাচারের নিকটবর্তী হতে নিষেধ এবং এর সমস্ত ছিদ্র-পথ বন্ধ করতে আদেশ করেছে। কারণ, যে পথ হারামে নিয়ে যায় সে পথে চলাও হারাম।
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫, ৩৫৫৭নং)
[4] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৭৫নং)
([5]) অধিকারভুক্ত দাসী বলে ক্রীতদাসী ও কাফের যুদ্ধবন্দিবনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী। খাদেমা বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।
[6] (সূরা আল-মু’মিনূন (২৩) : ৫-৭)