লগইন করুন
১০ জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারতের পর যে সাঈ করতে হয় তা ১০ তারিখের পূর্বে আদায় করে নেওয়া খেলাফে সুন্নত। তাওয়াফে কুদুমের সাথে সাঈ করে নিলে তাওয়াফে যিয়ারতের পর সাঈ করতে হয় না, সেটি অন্য ব্যাপার, এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তবে যদি কেউ ১০ তারিখে তাওয়াফ করার পূর্বে সাঈ করে নেয় তবে তা শুদ্ধ হবে। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, سعيت قبل أن أطوف -আমি তাওয়াফ করার পূর্বে সাঈ করে ফেলেছি’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)উত্তরে বললেন, ‘করো, সমস্যা নেই’[1] তবে হাদিসের ভাষ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, লোকটি ১০ জিলহজ্জ তারিখে অগ্রিম সাঈ করেছিলেন। সে হিসেবে তামাত্তু হজ্জকারী যদি ১০ জিলহজ্জের পূর্বে অগ্রিম সাঈ করে নেয় তা হলে সাঈ হয়ে যাবে বলে হাদিস অথবা সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে কোনো প্রমাণ নেই। হানাফি ফেকাহর প্রসিদ্ধ কিতাব বাদায়িউস্সানায়ে’তে এ ভাবে সাঈ করার বিপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। উক্ত কিতাব থেকে এখানে একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি:
إذا أحرم المتمتع بالحج فلا يطوف بالبيت و لا يسعى في قول أبي حنيفة و محمد . لأن طواف القدوم للحج لمن قدم مكة بإحرام الحج ، والمتمتع إنما قدم مكة بإحرام العمرة، لا بإحرام الحج . وإنما يحرم للحج من مكة، وطواف القدوم لا يكون بدون القدوم، وكذلك لا يطوف و لا يسعى أيضا لأن السعى بدون الطواف غير مشروع. ولأن المحل الأصلى للسعي ما بعد طواف الزيارة، لأن السعي واجب، وطواف الزيارة فرض. والواجب يصلح تبعا للفرض. فأما طواف القدوم فسنة، والواجب لا يتبع السنة. إلا أنه رخص تقديمه على محله الأصلى عقيب طواف القدوم، فصار واجبا عقيبه بطريق الرخصة. وإذا لم يوجد طواف القدوم يؤخر السعى إلى محله الأصلى ، فلا يجوز قبل طواف الزيارة
অর্থাৎ ‘তামাত্তু হজ্জকারী ব্যক্তি যখন হজ্জের উদ্দেশ্যে এহরাম বাঁধবে তখন সে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। সাঈও করবে না। এটা হল ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) এর অভিমত। কারণ তাওয়াফে কুদুম ওই ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত যে হজ্জের এহরাম নিয়ে মক্কায় আগমন করল। পক্ষান্তরে তামাত্তু হজ্জকারী উমরার এহরাম নিয়ে মক্কায় আগমন করেছে। হজ্জের এহরাম নিয়ে আগমন করেনি। তামাত্তু হজ্জকারী ব্যক্তি মক্কা থেকেই হজ্জের এহরাম বাঁধে। আর তাওয়াফে কুদুম বাহির থেকে আগমন ব্যতীত হয় না। তাওয়াফ-সাঈ এ জন্যেও করবে না যে, তাওয়াফ ব্যতীত সাঈ করা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা সাঈর মূল জায়গা তাওয়াফে যিয়ারার পর। কেননা সাঈ হল ওয়াজিব। আর তাওয়াফে যিয়ারা হল ফরজ। ওয়াজিব, ফরজের তাবে’ বা অনুবর্তী হতে পারে। পক্ষান্তরে তাওয়াফে কুদুম সুন্নত। এবং ওয়াজিব সুন্নতের তাবে’ বা অনুবর্তী হতে পারে না। তবে তাওয়াফে কুদুমের ক্ষেত্রে সাঈকে তার মূল জায়গা হতে এগিয়ে নিয়ে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই অনুমতির কারণে তাওয়াফে কুদুমের পর ‘ওয়াজিব’ আদায়যোগ্য হয়েছে। তাই তাওয়াফে কুদুমের অনুপস্থিতে সাঈকে তার মূল জায়গায় পিছিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে আদায় করা জায়েয হবে না।[2]
উক্ত আলোচনার নিরিখে বলা যায় যে আমাদের বাংলাদেশি হাজিগণ ৮ তারিখ মিনায় যাওয়ার সময় এহরাম বেঁধে, নফল তাওয়াফ করে, যে ভাবে সাঈ সেরে নেন তা আদৌ উচিৎ নয়। কেননা এর পেছনে আদৌ কোনো যুক্তি নেই।
কেউ কেউ বলেন যে সাঈ এহরাম অবস্থায় করা মুস্তাহাব। আর এ মুস্তাহাব বাস্তবায়নের একটাই সুরত। আর তাহলো ৮ তারিখ এহরাম বেঁধে নফল তাওয়াফ করে সাঈ করে নেয়া। এ কথার পেছনে আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। কেননা তামাত্তুকারী সাহাবিগণ এহরাম বিহীন সাঈ করেছিলেন। মুস্তাহাব হলে নিশ্চয়ই তারা এরূপ করতেন না।
[2] - আল কাসানী : বাদায়িউস্সানায়ে’: খন্ড ২, পৃ: ৩৪৭