লগইন করুন
১. ঐকান্তিকভাবে তাওবা করা
তাওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে যাওয়া। যে সব কথা ও কাজ আল্লাহ রাববুল আলামিন অপছন্দ করেন তা বর্জন করে যেসব কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করেন তার দিকে ফিরে যাওয়া। সাথে সাথে অতীতে এ ধরনের কাজে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঐকান্তিকভাবে অনুতাপ ব্যক্ত করা। কাজগুলো পরিত্যাগ করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা। আল্লাহ তা’আলার পছন্দের কাজগুলো করা ও অপছন্দের কাজগুলো ত্যাগ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া। কেবল কৃত পাপের জন্য তাওবা নয় বরং অতীতের সকল পাপের জন্যই তাওবা করা। তাওবার আবশ্যিকতা বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর,বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে প্রবাহিত রয়েছে নদী। সে দিন আল্লাহ লজ্জিত করবেন না নবীকে এবং তার মুমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’[1]
অতীতে কৃত সমগ্র পাপ-কর্ম থেকে তাওবা, সম্পূর্ণরূপে পাপ কর্ম পরিত্যাগের ব্যাপারে সততার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি আর কখনো পাপ-কর্মে জড়াবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা ও শুধুমাত্র আল্লাহর ভয় বুকে ধারণ করে তার সন্তুষ্টি অর্জন কল্পে তাওবা করাকেই (التوبة النصوح) বা ঐকান্তিক তাওবা বলা হয়।[2]
২. হজ্জ ও উমরা আদায় করা
হজ্জ ও উমরা পালনের ফজিলত বিষয়ে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে—ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ আদায়ে যত্নবান হওয়া; কেননা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রধানতম ও অধিক প্রিয় মাধ্যম হল ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ যথাসময়ে নিয়ম মোতাবেক আদায় করা। এর পর নফল ইবাদতের পর্যায় যা একজন মানুষকে আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র বানাতে সাহায্য করে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোন অলির বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হয়, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আর ফরজ ইবাদতের চাইতে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারে না, এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি, আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাব, যা দিয়ে সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে আমার কাছে কোন কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দেব। আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেব। আমার কোনো কাজে দ্বিধা সংকোচ করি না, যতটা করি মুমিন ব্যক্তির প্রাণ নেয়ার ক্ষেত্রে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর তাকে কষ্ট দেয়া আমার কাছে অপছন্দ।’’[3]
৩. বেশি করে নেক-আমল করা
নেক আমল সকল স্থানে ও সকল সময়ে আল্লাহ রাববুল আলামিনের নিকট প্রিয়। তবে এই বরকতময় দিনগুলোতে নেক-আমলের মর্যাদা ও সওয়াব অনেক বেশি।
যারা এ দিনগুলোতে হজ্জ আদায়ের সুযোগ পেলেন তারা যে ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের উচিৎ হবে জিলহজ্জ মাসের এই মুবারক দিনগুলোয়, যত বেশি পারা যায়, নেক আমল করে যাওয়া।
৪. জিকির-আযকারে নিমগ্ন সময় যাপন
এ দিনগুলোয় জিকির-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদিসে এসেছে:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী কারিম (ﷺ)বলেছেন, এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাববুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ) তাকবির (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে আদায় কর।[4]
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে—
لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
‘‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহে’ আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’’[5]
অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন সমূহ বলতে জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ অধিক হারে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে, ও তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, কুরবানির পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবির উচ্চারণ করবে।
৫. উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা
এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাববুল আলামিনের মহত্ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। এ তাকবির প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর,রাস্তা-ঘাট,বাজারসহ সর্বত্র উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। তবে নারীদের তাকবির হবে নিম্ন স্বরে। তাকবিরের শব্দমালা নিম্নরূপ :
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ وَلِله الحَمْدُ.
তকবির বর্তমান হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যাক্ত সুন্নত। আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারনা চালান। হাদিসে এসেছে—
من أحيا سنة من سنتي، قد أميتت بعدي، فإن له من الأجر مثل ما عمل بها، من غير أن .ينقص من أجورهم شيئاً.
যে ব্যক্তি আমার সুন্নত সমূহের মাঝে একটি সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়েছে, তাকে সে পরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে, যে পরিমাণ (সে সুন্নতের উপর) আমল করা হয়েছে। এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।[6]
জিলহজ্জ মাসের সূচনা হতে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া অবধি এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মোস্তাহাব। তবে, বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর হতে মীনার দিনের শেষ পর্যন্ত—অর্থাৎ আসর—প্রত্যেক নামাজের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করা বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ ও আলী রা. হতে এ মতটি বর্ণিত। ইবনে তাইমিয়া রহ. একে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত বলেছেন। উল্লেখ : যদি কোন ব্যক্তি এহরাম বাধে, তবে সে তলবিয়ার সাথে মাঝে মাঝে তকবিরও পাঠ করবে। হাদিস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত।[7]
[2] - মাদারিজুসসালেকিন।
[3] - عن أبي هريرة رضى الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله تعالى قال : من عاد لي وليا فقد آذنته بالحرب، وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضته عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته، كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني لأعطينه، ولئن استعاذ بي لأعيذنه ، وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن ، يكره الموت وأنا أكره مساءته. رواه البخاري (বোখারি)
[4] - عن عبد الله بن عمر رضى الله عنهما عن النبى صلى الله عليه وسلم قال : ما من أيام أعظم عند الله ولا أحب إليه من العمل فيهن من هذه العشر، فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد (رواه أحمد)
[5] - সূরা আল হাজ্জ : ২৮
[6] তিরমিযি : ৬৭৭
[7] ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : খন্ড : ২৪, পৃ : ২২০