দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম [যাকাত অধ্যায়] ব্যবসায়িক মালের যাকাত শরীফুল ইসলাম বিন যয়নুল আবেদীন
ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরয হওয়ার দলীল

আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের জন্য হালাল বস্ত্তর ব্যবসা হালাল করেছেন এই শর্তে যে, তারা তাদের ব্যবসায় ইসলামী বিধি-বিধান লংঘন করবে না এবং আমানতদারী ও সততা সর্বতোভাবে রক্ষা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। আল্লাহ তা‘আলার হালালকৃত ব্যবসায় যে সকল মাল ক্রয়-বিক্রয় করা হয় তাতে যাকাত ফরয।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلاَ تَيَمَّمُوْا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং তার নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)

অত্র আয়াতে বর্ণিত مَا كَسَبْتُمْ অর্থাৎ ‘তোমরা যা উপার্জন কর’ দ্বারা ব্যবসায়িক মালকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) باب صَدَقَةِ الْكَسْبِ وَالتِّجَارَةِ তথা ‘উপার্জিত ও ব্যবসায়িক মালের যাকাত’ শিরোনামে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

وَفِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ-

‘আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক’ (যারিয়াত ৫১/১৯)

তিনি অন্যত্র বলেন,

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا-

‘তাদের সম্পদ হতে ছাদাক্বাহ্ গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে’ (তওবা ৯/১০৩)

উল্লিখিত আয়াত সমূহে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদের যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবসায়িক মাল তা থেকে আলাদা নয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন এবং বললেন, তারা যদি দিন-রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতকে মেনে নেয় তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে,

أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ-

‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রের মাঝে বণ্টন করা হবে’।[1] আর ব্যবসায়িক সম্পদ হাদীছে উল্লিখিত মাল থেকে আলাদা নয়। অতএব তার উপর যাকাত ফরয।

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,

لَيْسَ فِيْ الْعُرُوْضِ زَكَاةٌ إِلاَّ مَا كَانَ لِلتِّجَارَةِ-

‘সম্পদের যাকাত নেই, কেবল ব্যবসায়িক সম্পদ ব্যতীত।[2]

ওমর ইবনু আব্দুল আযীয (রহঃ) তাঁর কর্মচারী রুযাইক ইবনু হুকাইমকে লিখে পাঠিয়েছিলেন যে,

أنِ انظُرْ مَنْ مَرَّ بِكَ مِنَ المُسْلِمِيْنَ فَخُذْ مِمَّا ظَهَرَ مِنْ أَمْوَالِهِمْ مِنْ التِّجَارَاتِ من كلِّ أربعيْنَ دِيْنَاراً دِيْنَاراً-

‘তোমার সামনে যে মুসলমানই আসবে তার ব্যবসায় ব্যবহৃত সব প্রকাশমান সম্পদ থেকে প্রতি চল্লিশ দ্বীনারে এক দ্বীনার যাকাত গ্রহণ কর’।[3]

[1]. বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, ঐ বঙ্গানুবাদ, ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।

[2]. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৭৩৯৪; আলবানী সনদ ছহীহ।

[3]. মুওয়াত্তা মালেক, হা/৮৮০।