লগইন করুন
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত আদায়ের পূর্বে তার ঋণ পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত আদায় করবে। ওছমান (রাঃ) বলেন,
هَذَا شَهْرُ زَكَاتِكُمْ فَمَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ فَلْيُؤَدِّ دَيْنَهُ حَتَّى تَحْصُلَ أَمْوَالُكُمْ فَتُؤَدُّوْنَ مِنْهُ الزَّكَاةَ-
‘এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে তাহলে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলে সে তার যাকাত আদায় করবে’।[1] আর যদি ঋণ পরিশোধ না করে তার নিকট গোচ্ছিত রাখে, তাহলে যাকাতযোগ্য সব সম্পদের উপরেই যাকাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا-
‘তাদের সম্পদ হতে ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) গ্রহণ করবে। যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে’ (তওবা ৯/১০৩)।
হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنِ اسْتَفَادَ مَالاً فَلاَ زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَحُوْلَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ عِنْدَ رَبِّهِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সম্পদ অর্জন করে, তাহলে উক্ত সম্পদ তার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার রবের নিকটে যাকাত ফরয বলে গণ্য হবে না।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামেনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে বললেন, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে,
أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ-
‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’।[3]
তিনি অন্যত্র বলেন,
فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ، وَمَا سُقِىَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ-
‘বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ ওশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব’।[4]
উল্লিখিত দলীলসমূহে যাকাত আদায়ের সাধারণ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এথেকে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে পৃথক করা হয়নি। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে কৃষক ও পশুপালনকারীদের নিকটে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠাতেন। কিন্তু কখনই তিনি ঋণের কথা জিজ্ঞেস করার নির্দেশ দেননি। বরং নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী সকল ব্যক্তির নিকট থেকেই যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[5] কেননা ঋণ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত, মালের সাথে নয়। অর্থাৎ সম্পদ থাকুক বা না থাকুক তার উপর ঋণ পরিশোধ করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে যাকাত মালের সাথে সম্পর্কিত, ব্যক্তির সাথে নয়। অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ মাল থাকলেই কেবল তার উপর যাকাত ফরয; অন্যথা ফরয নয়।
[2]. তিরমিযী হা/৬৩২; মিশকাত হা/১৭৮৭, ‘যাকাত’ অধ্যায়; আলবানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গলীল হা/৭৮৭; তারাজু‘আত আলবানী হা/২১২।
[3]. বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।
[4]. বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ ২/১১৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৯৭।
[5]. মুসলিম হা/১০৪৫।