লগইন করুন
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান জানিয়ে দিয়েছেন; যার অন্যতম হল যাকাত। কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা নিম্নরূপ :
(১) النية তথা নিয়্যাত করা : হাদীছে এসেছে,
عَنْ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ-
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেদিকেই গণ্য হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে’।[1]
উল্লিখিত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেকটি আমল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অতএব একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিচিত্তে খালেছ নিয়তে সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন আনুষ্ঠানিকতা অথবা লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকলে তা শিরকে পরিণত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلاَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لاَ يَقْدِرُوْنَ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا كَسَبُوْا وَاللهُ لاَ يَهْدِيْ الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ-
‘হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল কর না যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তার উপমা একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, অতঃপর উহার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত উহাকে পরিস্কার করে দেয়। তারা যা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না’ (বাকারাহ ২/২৬৪)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالَ الرِّيَاءُ-
মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের উপর সবচেয়ে বেশী ভয় করি ছোট শিরকের (তোমরা ছোট শিরকে লিপ্ত হবে)। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ছোট শিরক কি? তিনি বললেন, লোক দেখানো আমল কারা।[2]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيْكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لأَنْ يُقَالَ جَرِيْءٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِيْ النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيْكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ فِيْ النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِىَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيْلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيْهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِىَ فِيْ النَّارِ-
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন (রিয়াকারীদের মধ্যে) প্রথমে যে ব্যক্তির বিচার করা হবে সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাযির করা হবে এবং আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া আপন নে‘আমত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন আর সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এ নে‘আমতের বিনিময়ে দুনিয়ায় কি কাজ করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টির জন্য তোমার পথে আমি কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি যুদ্ধ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, যাতে তোমাকে বীরপুরুষ বলা হয়, আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। এরপর তার সম্পর্কে ফেরেশ্তাদেরকে আদেশ দেওয়া হবে। অতঃপর তাকে উপুড় করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে সেই লোক, যে ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে ও অপরকে তা শিক্ষা দিয়েছে। তাকে আল্লাহর দরবারে হাযির করা হবে। প্রথমে আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নে‘আমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নে‘আমতের শুকরিয়া স্বরূপ কি করেছ? সে বলবে, আমি ইলম শিক্ষা করেছি ও অপরকে তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পড়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এই জন্য ইলম শিক্ষা করেছিলে যাতে তোমাকে আলেম বলা হয় এবং এই জন্য কুরআন পড়েছিলে যাতে তোমাকে ক্বারী বলা হয়, আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর ফেরেশ্তাদেরকে তার সম্পর্কে হুকুম করা হবে; সুতরাং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে, যার রিযিক আল্লাহ প্রসস্থ করে দিয়েছিলেন এবং তাকে সব রকমের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে তাকে তাঁর দেওয়া নে‘আমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন, আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসবের কৃতজ্ঞতায় কি করেছ? সে বলবে, এমন সব রাস্তা যাতে দান করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে এতে তোমার সন্তুষ্টির জন্য দান করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এ উদ্দেশ্যে দান করেছিলে যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর ফেরেশ্তাদেরকে তার সম্পর্কে হুকুম করা হবে; সুতরাং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[3]
(২) الحرية তথা স্বাধীন হওয়া : যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে। কোন দাসের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কেননা দাস সম্পদের মালিক হতে পারে না। হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ فِيْ الْعَبْدِ صَدَقَةٌ إِلاَّ صَدَقَةُ الْفِطْرِ- আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছাদাক্বাতুল ফিৎর ব্যতীত ক্রীতদাসের উপর কোন ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) নেই’।[4]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنِ ابْتَاعَ عَبْدًا وَلَهُ مَالٌ فَمَالُهُ لِلَّذِى بَاعَهُ إِلاَّ أَنْ يَشْتَرِطَ الْمُبْتَاعُ-
‘যদি কেউ গোলাম (দাস) বিক্রয় করে এবং তার (দাসের) সম্পদ থাকে, তবে সে সম্পদ হবে বিক্রেতার। কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে তাহলে তা হবে তার (ক্রেতার)’।[5]
অতএব দাস যেহেতু সম্পদের মালিক নয় সেহেতু তার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। যেমনিভাবে ফকীরের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
(৩) الإسلام তথা মুসলিম হওয়া : যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। কোন কাফেরের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কেননা যাকাত হল পবিত্রকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا
‘উহাদের সম্পদ হতে ছাদাক্বাহ্ গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে’ (তওবা ৯/১০৩)। পক্ষান্তরে কাফেরগণ বাহ্যিকভাবে পবিত্র হলেও শিরক ও কুফরীর কারণে তাদের অন্তর অপবিত্র। যদি তারা পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ দান করে তবুও তারা পবিত্র হতে পারবে না।
এছাড়াও যাকাত হল ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত। আর কাফেরদের কোন ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন,
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوْرًا-
‘আমি তাদের (কাফিরদের) কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)। তিনি অন্যত্র বলেন,
وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَلَا يَأْتُوْنَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنْفِقُوْنَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُوْنَ-
‘তাদের (কাফিরদের) দান গ্রহণ করা নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, ছালাতে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে দান করে’ (তওবা ৯/৫৪)।
(৪) ملك نصاب তথা নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া : ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নিছাব পরিমাণ সম্পদ হলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব। এর চেয়ে কম হলে যাকাত ওয়াজিব নয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
لَيْسَ فِيْمَا أَقَلُّ مِنْ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلَّ مِنْ خَمْسَةٍ مِنَ الإِبِلِ الذَّوْدِ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلَّ مِنْ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ-
‘পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। এমনিভাবে পাঁচ আওকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যেরও যাকাত নেই’।[6]
‘ওয়াসাক’-এর পরিমাণ : ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা‘। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০ × ৫ = ৩০০ ছা‘। ১ ছা‘ সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা‘ সমান ৩০০ × ২.৫ = ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ, আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয।
আওকিয়ার পরিমাণ : ১ আওকিয়া সমান ৪০ দিরহাম। অতএব ৫ আওকিয়া সমান ৪০ × ৫ = ২০০ দিরহাম। রৌপ্যের ক্ষেত্রে যার পরিমাণ হয় ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। আর স্বর্ণের ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে, ১ দ্বীনার সমান ১০ দিরহাম হলে ২০০ দিরহাম সমান ২০০ ÷ ১০ = ২০ দ্বীনার। ১ দ্বীনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ হলে ২০ দ্বীনার সমান ২০ × ৪.২৫ = ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। উল্লিখিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য এক চন্দ্র বছর যাবৎ কারো মালিকানায় থাকলে অথবা এ পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্যের বিক্রয়মূল্য পরিমাণ টাকা এক চন্দ্র বছর যাবৎ কারো মালিকানায় থাকলে তার উপর শতকরা ২.৫ টাকা যাকাত ফরয।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, فِيْ كُلِّ أَرْبَعِيْنَ شَاةً شَاةٌ ‘প্রত্যেক চল্লিশটি ছাগলের যাকাত হল, একটি ছাগল’।[7]
অতএব ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নিছাব পরিমাণের কম হলে যাকাত ওয়াজিব নয়।
(৫) الإستقرار তথা সম্পদের পূর্ণ মালিক হওয়া : যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে সম্পদের পূর্ণ মালিক হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً ‘তাদের সম্পদ হতে ছাদাক্বাহ্ গ্রহণ করবে’ (তওবা ৯/১০৩)। তিনি অন্যত্র বলেন, وَالَّذِيْنَ فِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُوْمٌ ‘এবং যাদের ধন-সম্পদে রয়েছে নির্ধারিত হক’ (মা‘আরিজ ৭০/২৪)। অতএব পূর্ণ মালিকানাধীন সম্পদের উপরই যাকাত ওয়াজিব।
(৬) مضى الحول তথা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া : নিছাব পরিমাণ সম্পদ মালিকের নিকট পূর্ণ এক চন্দ্র বছর মওজুদ থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। এক চন্দ্র বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই কিছু অংশ ব্যয় হয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয নয়।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ لاَ زَكَاةَ فِيْ مَالٍ حَتَّى يَحُوْلَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘পূর্ণ এক বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সম্পদের যাকাত নেই’।[8]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنِ اسْتَفَادَ مَالاً فَلاَ زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَحُوْلَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ عِنْدَ رَبِّهِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সম্পদ অর্জন করে, তাহলে উক্ত সম্পদ তার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার রবের নিকটে যাকাত ফরয বলে গণ্য হবে না।[9]
[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৩৬৮৬; মিশকাত হা/৫৩৩৪; আলবানী, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৫১।
[3]. মুসলিম হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২০৫, ‘ইলম’ অধ্যায়।
[4]. মুসলিম হা/৯৮২; মিশকাত হা/১৭৯৫।
[5]. বুখারী হা/২৩৭৯, বঙ্গানুবাদ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৫৬৪ পৃঃ।
[6]. বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১৩৫ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।
[7]. আবুদাউদ হা/১৫৬৮; তিরমিযী হা/৬২১; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৫; মিশকাত হা/১৭৯৯; আলবানী, সনদ ছহীহ।
[8]. আবূদাউদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১; ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আলবানী, সনদ ছহীহ।
[9]. তিরমিযী হা/৬৩২; মিশকাত হা/১৭৮৭, ‘যাকাত’ অধ্যায়; আলবানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গলীল হা/৭৮৭; তারাজু‘আত আলবানী হা/২১২।