লগইন করুন
১। এটাকে ঈমানের অর্ধেক হিসাবে গণ্য করা হয়:
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ
আবূ মালিক আশআ'রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।[1]
২। ওযূ ছোট-ছোট পাপগুলো মোচন করে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ - أَوِ الْمُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ - حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ
(ক) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: কোন মুসলিম বান্দা ওযূর সময় যখন মুখম-ল ধৌত তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন) পানির শেষ বিনদুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দু‘খানা হাত ধৌত করে তখন তার দু’হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিনদুর সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে পা দু‘খানা ধৌত করে, তখন তার দু‘পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিনদুর সাথে ঝরে যায়, এভাবে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নণ হয়ে যায়।[2]
عَنْ عُثْمَانَ،: إِنَّ رَسُول اللهِ ﷺ قَالَ: مَنْ تَوَضَّأَ هَكَذَا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَكَانَتْ صَلَاتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ نَافِلَةً
(খ) উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার এই ওযূর ন্যায় ওযূ করবে তার পূর্বকৃত সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ফলে তার সালাত ও মাসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল হিসেবে গণ্য হবে।[3]
যে ব্যক্তি এ ওযূ করার পর ফরয ও নফল সালাত আদায় করবে তার জন্য এ ফযীলত ও সাওয়াবের তা‘কীদ দেয়া হয়েছে। যেমন
(গ) উসমান (রাঃ) এর হাদীসে আছে, তিনি রাসূল (ﷺ) এর ওযূর বিবরণের হাদীসে বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
مَنْ تَوَضَّأَ مِثْلَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُِفرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ: যে ব্যক্তি আমার এই ওযূর ন্যায় ওযূু করার পর একাগ্র চিত্তে দু‘রাকআত সালাত পড়বে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহলে তার পূর্বকৃত সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।[4]
৩। ওযূর দ্বারা বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ্ (বান্দাহর) গুনাহসমূহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল আপনি বলুন। তিনি বললেন: কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা, সালাতের জন্য মাসজিদে বারবার যাওয়া এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্য প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা।[5]
৪। জান্নাত যাওয়ার পথ সুগম করে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لِبِلاَلٍ: عِنْدَ صَلاَةِ الفَجْرِ يَا بِلاَلُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ، فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الجَنَّةِ» قَالَ: مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي: أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا، فِي سَاعَةِ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ، إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ
(ক) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) একদিন ফযরের সালাতের সময় বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল তুমি ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক কি আমল করেছে, তার কথা আমার নিকট ব্যক্ত কর। কেননা জান্নাতে আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল (রাঃ) বলেন, দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি ত্বহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে ত্বহারাত দ্বারা আমি সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তক্দিরে লেখা ছিল। আমার কাছে এর চাইতে (অধিক) আশাব্যঞ্জক, এমন কোন বিশেষ আমল আমি করি নি।[6]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
(খ) উকবা ইবন আমীর জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুলাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে তারপর দু‘রাকআত সালাত নিষ্ঠার সাথে আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[7]
৫। এটা এমন একটা নিদর্শন যার দ্বারা হাওযে কাওসারের নিকট উপস্থিত হওয়ার সময় উম্মতকে পৃথক করা হবে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَتَى الْمَقْبُرَةَ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ فَقَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ؟ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: " فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ، وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ أَلَا لَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِي كَمَا يُذَادُ الْبَعِيرُ الضَّالُّ أُنَادِيهِمْ أَلَا هَلُمَّ فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ قَدْ بَدَّلُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا "
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল (ﷺ) কবরস্থানে গিয়ে বললেন: তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, এটা তো ঈমানদারদের কবর স্থান। ইনশা আল্লাহ্ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমার মনে আমাদের ভাইদের দেখার আকাংখা জাগে। যদি আমরা তাদেরকে দেখতে পেতাম। সাহাবাগণ বললেন: হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমরা কি আপনার ভাই নই? জবাবে তিনি বললেন: তোমরা হচ্ছো আমার সঙ্গী সাথী! আর যেসব ঈমানদার এখনও (দুনিয়াতে) আগমন করে নি তারা হচ্ছে আমার ভাই। তারা বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আপনার উম্মাতের যারা এখনও (দুনিয়াতে) আসে নি, আপনি তাদেরকে কিভাবে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন: অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে যদি কোন ব্যক্তির একটি কপাল চিত্রা ঘোড়া থাকে, তবে কি সে উক্ত ঘোড়াটিকে চিনতে পারবে না? তারা বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! তা অবশ্যই পারবো। তখন তিনি বললেন: তারা (আমার উম্মতরা) ওযূর প্রভাবে জ্যোর্তিময় চেহারা ও হাত পা নিয়ে উপস্থিত হবে। আর আমি আগেই হাওযে কাওসারের কিনারে উপস্থিত থাকবো। সাবধান! কিছু সংখ্যক লোককে আমার হাওয থেকে এমন ভাবে তাড়িয়ে দেয়া হবে যেমন বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। আমি তাদেরকে ডেকে ডেকে বলবো: আরে এদিকে এসো, এদিকে এসো। তখন বলা হবে, এরা আপনার ইমিত্মকালের পর (নিজেদের দ্বীন) পরিবর্তন করে ফেলেছে। তখন আমি তাদেরকে বলবো: (আমার নিকট থেকে) দূর হও, দূর হও।[8]
الغرةএর অর্থ উজ্জ্বল শুভ্রতা, যা ঘোড়ার কপালে দেখা যায়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য নূর বা উজ্জ্বলতা, যা উম্মতে মুহাম্মাদীর চেহারায় দেখা দিবে। আরالتحجيل -অর্থ এমন শুভ্রতা, যা ঘোড়ার তিন পায়ে দেখা যায়। এর দ্বারাও নূর বা উজ্জ্বলতা উদ্দেশ্য।[9]
৬। এটা ক্বিয়ামতের দিন বান্দার জন্য জ্যোতি স্বরূপ:
عن أَبِي هُرَيْرَةَ، قال سَمِعْتُ خَلِيلِي ﷺ يَقُولُ: تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ، حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: আমি আমার বন্ধু রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মু‘মিন ব্যক্তির চাকচিক্য অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে।[10] الْحِلْيَةُ অর্থ: ক্বিয়ামত দিবসের জ্যোতি।
৭। ওযূ শয়তানের গ্রন্থি খুলে দেয়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: «يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ، فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ، انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ»
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গ্রীবাদেশে তিনটি গিট দেয়। প্রতি গিটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত। অতএব তুমি ঘুমাও। তার পর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহ্কে স্বরণ করে তখন একটি গিট খুলে যায়, পরে ওযূ করলে আর একটি গিট খুলে যায়, তার পর সালাত আদায় করলে আরও একটি গিট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় প্রফুলস্ন মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলস চিত্তে।[11]
[2] সহীহ; মুসলিম (২৪৪) প্রভৃতি।
[3] সহীহ; মুসলিম (২২৯) প্রভৃতি।
[4] সহীহ; বুখারী (৬৪৩৩), মুসলিম (২২৬) প্রভৃতি।
[5] সহীহ; মুসলিম (২৫১) প্রভৃতি।
[6] বুখারী (১১৪৯), মুসলিম (২৪৫৮)।
[7] সহীহ; মুসলিম (২৩৪), নাসাঈ (১/৮০) প্রভৃতি।
[8] সহীহ; মুসলিম (২৩৪), নাসাঈ (১/৮০) প্রভৃতি।
[9] ইমাম নববী প্রণীত ‘সারহু মুসলিম’ (৩/১০০)।
[10] সহীহ; মুসলিম (২৫০), নাসাঈ (১/৮০)।
[11] সহীহ; বুখারী (১১৪২), মুসলিম (৭৭৬)।