লগইন করুন
(ঈদের নামায ছাড়া অন্য নামাযের জন্য) মহিলাদের মসজিদের জামাআতে শামিল হওয়ার চাইতে স্বগৃহে; বরং গৃহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অন্দর মহলে নামায পড়াই হল উত্তম। মহানবী (ﷺ) বলেন, “মহিলাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মসজিদ তার গৃহের ভিতরের কক্ষ।” (আহমাদ, মুসনাদ,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২০৯, বায়হাকী, জামে ৩৩২৭নং)
তিনি বলেন, “মহিলা স্বগৃহে থেকে তার রবের অধিক নিকটবর্তী থাকে।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৩৩৯, ৩৪১নং)
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, “মহিলা তার ঘরে থেকে রবের ইবাদত করার মত ইবাদত আর অন্য কোথাও করতে পারে না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৩৪২নং)
তিনি মহিলাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমাদের খাস কক্ষের নামায সাধারণ কক্ষে নামায অপেক্ষা উত্তম, তোমাদের সাধারণ কক্ষের নামায বাড়ির ভিতরে কোন জায়গায় নামায অপেক্ষা উত্তম এবং তোমাদের বাড়ির ভিতরের নামায মসজিদে জামাআতে নামায অপেক্ষা উত্তম।” (আহমাদ, মুসনাদ, ত্বাবারানী, বায়হাকী, জামে ৩৮৪৪নং)
উল্লেখ্য যে, সাহাবিয়া উম্মে হুমাইদ উক্ত হাদীস শোনার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাঁর বাড়ির সব চাইতে অধিক অন্দর ও অন্ধকার কামরাতে নামায পড়েছেন।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “মহিলা হল গোপনীয় জিনিস। বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে নির্নিমেষ তাকিয়ে দেখতে থাকে।” (ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ৩৩৯, ৩৪১, ৩৪২নং)
এ তো ইবলীস জিনের কথা। পক্ষান্তরে বর্তমান যুগের দ্বীনহীন যুবকদল; যারা মহিলার জন্য হাজার শয়তান অপেক্ষা বেশী ক্ষতিকর, তাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে গোপনে থাকা নারীর একান্ত কর্তব্য।
তবে যদি সে একান্ত মসজিদের জামাআতে শরীক হয়ে নামায পড়তে চায়, তাহলে তাতে অনুমতি আছে। অবশ্য এর জন্য কয়েকটি শর্ত আছে:
- মসজিদের পথে যেন (লম্পটদের) কোন অশুভ ফিতনার আশঙ্কা না থাকে।
- মহিলা যেন সাদাসিধাভাবে পর্দার সাথে আসে। অর্থাৎ, সেজেগুজে প্রসাধন-সেন্ট লাগিয়ে না আসে। (নামাযীর লেবাস দ্রষ্টব্য।)
- এতে যেন তার স্বামীর অনুমতি থাকে।
স্বামীর জন্যও উচিৎ, যদি তার স্ত্রী মসজিদে যেতে অনুমতি চায়, তাহলে তাকে বাধা না দেওয়া। সাহাবাদের মহিলাগণ মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায় করতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘মুমিন মহিলারা আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সাথে ফজরের নামায পড়ার জন্য দেহে চাদর জড়িয়ে হাযির হত। অতঃপর নামায শেষ হলে তারা নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেত, আবছা অন্ধকারে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।’ (বুখারী ৫৭৮,মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ৪২৩, তিরমিযী, সুনান ১৫৩, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৬৬৯নং)
পরন্তু এতে মসজিদের দরস ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার উপকারিতাও রয়েছে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যদি তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে রাত্রে মসজিদে আসার অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও।” (বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান)
“আল্লাহর বা¦দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, যদিও তাদের ঘরই তাদের জন্য ভালো।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৫৬৭,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৭৪৫৮নং)
“আল্লাহর বা¦দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন খোশবূ ব্যবহার না করে সাদাসিধা ভাবে আসে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, জামে ৭৪৫৭নং)
একদা আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমাদের মহিলারা যদি মসজিদে যেতে অনুমতি চায়, তাহলে তাদেরকে বাধা দিও না।” এ হাদীস শোনার পর তাঁর ছেলে বিলাল বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা ওদেরকে বাধা দেব।’ এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ তার মুখোমুখি হয়ে এমন গালি দিলেন, যেমনটি আর কোনদিন শোনা যায়নি। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আমি তোকে আল্লাহর রসূল (ﷺ) থেকে খবর দিচ্ছি। আর তুই বলিস, ‘আল্লাহর কসম! আমরা ওদেরকে বাধা দেব।’ (মুসলিম, সহীহ ৪৪২নং)
অবশ্য সত্যপক্ষে ফিতনা, নজরবাজি বা নষ্টি ফষ্টির আশঙ্কা থাকলে অথবা মহিলা সেজেগুজে বেপর্দায় কিংবা সেন্ট ব্যবহার করে যেতে চাইলে অভিভাবক বা স্বামী তাকে অনুমতি দেবে না।
অনুরুপভাবে যে মহিলারা জামাআতে হাযির হবে, তাদের জন্য জরুরী এই যে, তারা পুরুষদের ইমামের সালাম ফেরা মাত্র উঠে বাড়ি রওনা দেবে। যাতে পুরুষদের সাথে মসজিদের দরজায় বা পথে কোন প্রকার দেখা-সাক্ষাৎ না হয়। হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর যুগে মহিলারা যখন ফরয নামাযের সালাম ফিরত, তখন তারা উঠে চলে যেত। আর রসূল (ﷺ) এবং তাঁর সাথে অন্যান্য নামাযীরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল উঠে গেলে পুরুষরা উঠে যেত।’ (বুখারী ৮৬৬, ৮৭০নং)
অবশ্য মহিলাদের পর্দাযুক্ত পৃথক মুসাল্লা ও পৃথক দরজা হলে সালাম ফেরা মাত্র সত্বর উঠে যাওয়া জরুরী নয়। (আনিঃ ১/২৮৭)
প্রকাশ যে, মহিলা সঙ্গে তার ছোট শিশুকেও মসজিদে আনতে পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে মসজিদের কোন জিনিস, কুরআন, পবিত্রতা আদি নষ্ট এবং নামাযীদের কোন প্রকার ডিষ্টার্ব না করে।