সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ভূমিকা এবং জরুরী জ্ঞাতব্য আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
লেখকের কথা (مقدمة المؤلف)

الحمد لله على آلائه، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له في أرضه وسمائه، وأشهد أن محمدً عبده ورسوله وخاتم أنبيائه، صلى الله عليه وعلى وآله وأصحابه صلاة دائمة إلى يوم لقائه وسلم تسليمًا كثيرًا.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য যিনি অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। আসমান ও জমীনে তাঁর কোন শরীক নেই । আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ নাবী। তাঁর (মুহাম্মাদ ﷺ) উপর, তাঁর পরিবার বর্গের উপর এবং তাঁর সকল সাহাবার উপর ক্বিয়ামত পর্যন্ত সদা-সর্বদা অজস্র সালাম ও শামিত্মর ধারা বর্ষিত হোক।

অতঃপর সমস্ত মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত শারঈ জ্ঞান এবং বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে ইসলামী সাধারণ প--তগণ তাদের রচনাবলীর প্রারম্ভে ও মূল্যবান গ্রন্থাবলিতে একটি রীতির প্রচলন করেছেন যে, ‘‘জ্ঞানের মর্যাদা অর্জিত জ্ঞানের মর্যাদার উপর নির্ভরশীল এবং তার ঐতিহ্যের মান-মর্যাদা তার শাখার উপর প্রভাব বিসত্মার করে’’।

পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশেস্নষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্বানদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সমস্ত জ্ঞানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, কল্যাণময় ও উপকারী জ্ঞান হলো: বান্দার কর্মের বিধি-বিধান সম্পর্কীয় জ্ঞান। যা পরবর্তীতে ‘‘ফিক্বহুল ইসলামী’’ বা ইসলামী জ্ঞান নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

[আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণী এ কথার প্রতিই ইঙ্গিত বহন করছে:

﴿فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ﴾

অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান (ফিক্বহ) আহরণ করতে পারে এবং তারা যখন আপন সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকে (সূরা আত-তাওবা:১২২)]।

মহানাবী (ﷺ) বলেছেন:

مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ بِالدِّينِ

‘‘আল্লাহ্‌ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা (ফিক্বহ) দান করেন’’।[1] এমন কি নাবীগৃহে পালিত আব্দুলস্নাহ ইবনে আব্বাস (ؓ) এর জন্য দ্বীনের ফক্বীহ হওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে দু‘আ করে তিনি বলেছিলেন:

"اللهم فقهه فى الدين و علمه التأويل"

‘‘হে আল্লাহ্‌! আপনি তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করুন ও ব্যাখ্যা করার জ্ঞান দান করুন’’ (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল ২৩৯৭, সহীহ)। ফলে মহানাবী (ﷺ) এর দু‘আর বরকতে তিনি কুরআনের মুফাস্সির, উম্মতের মধ্যে প--ত ব্যক্তি ও জ্ঞানের সাগর হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তার এ খ্যাতি অব্যাহত আছে, কখনও তা নিঃশেষ হবে না।


‘‘ফিক্বহুল ইসলামী’’ বা ইসলামী জ্ঞানের মর্যাদা ও সম্মান বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না এবং একে সীমাবদ্ধ করাও সম্ভব নয়। কেননা-

ক। এ জ্ঞানের বিধানগুলো একজন মুসলিমের জীবন চলার সাথে সম্পৃক্ত। যা তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে এবং তার মাঝে ও আল্লাহ্‌র অন্যান্য বান্দার মাঝে সম্পর্ক তৈরি করে। সুতরাং এর দ্বারা বান্দা তার প্রভুর সাথে প্রকাশ্যে ও গোপনে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠে ত্বহারাত, সালাত, যাকাত, সিয়াম, হাজ্জসহ অন্যান্য ইবাদাত সম্পাদনের মাধ্যমে।

খ। এ জ্ঞানের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা বিসত্মার করা সম্ভব হয় ও কুরআনের নিদর্শন সমুন্নত হয়। আর এটা জিহাদ, মাগাযী, জীবন-কাহিনী, নিরাপত্তা, চুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

গ। এ জ্ঞানের মাধ্যমে বৈধ রিযিক অন্বেষণ করা যায় এবং পাপ ও অপরাধের গ-- থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। এটা ক্রয়-বিক্রয়, পছন্দের স্বাধীনতা (খিয়ার), সুদ, খরচ করা ও এ সংক্রান্ত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়, যা একে অপরের অর্থনৈতিক লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত।

ঘ। এ জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে শরীয়াত মোতাবেক সম্পদ হসত্মান্তর; যেমন- ওয়াকফ্, ওসীয়াত ও অনুরূপ অর্থনৈতিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা যায়।

ঙ। এ জ্ঞানের মাধ্যমে উত্তরাধিকার বন্টন আইনের (ফারায়েজ) সঠিক বিধান জানা যায়। ফলে উক্ত জ্ঞানার্জনকারী অর্ধেক জ্ঞানার্জনের সৌভাগ্য অর্জন করে। এর ফলে সুশৃঙ্খলভাবে ও সুষম বন্টনের মাধ্যমে যথাযথ মালিকের কাছে সম্পদ অর্পণ করা সম্ভব হয়।

চ। এ জ্ঞানের মাধ্যমে শারঈ দাম্পত্য জীবন ও ত্বালাকসহ অন্যান্য সংশিস্নষ্ট বিষয়াদির ক্ষেত্রে সুখী জীবন-যাপন করা যায়।

ছ। এ জ্ঞানের মাধ্যমে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত জরূরী বিষয় সমূহ যেমন অপরাধ, রক্তপণ, দ--লঘুদ-সহ প্রভৃতি বিধানের ব্যাপারে ইসলামে নিরাপত্তার যে গুরুত্ব রয়েছে তা জানা যায়। ফলে নিরাপদ ও আরাম আয়েশে জীবন যাপন করা সম্ভব হয়।

জ। অনুরূপভাবে খাদ্য, কুরবানী, মানত (নযর) ও শপথের বিধান জানা যাবে এবং ন্যায়-পরায়ণতার ভিত্তিতে ও দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিচার-ফায়সালা, তার নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি ও বিধানের বর্ণনা জানা যাবে। ফলে উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে তার অধিকার পৌঁছানো যাবে ও ছিনিয়ে নেয়া বস্ত্ত তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

এ সমস্ত মূল্যবান নিয়ামতের কারণে আলিমগণ ফিক্বহুল ইসলামী লেখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ফলে তারা অসংখ্য নিয়ম-নীতি তৈরি করেছেন। আর বহু খণ্ড- বিভক্ত হাজার হাজার গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।

এ সমস্ত মহামতি বিদ্বানগণ বিভিন্ন শ্রেণীর ফিক্বহ গ্রন্থ রচনা এবং তাদের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ফলে তাদের স্বীয় বোধগম্যতার প্রতি টান থাকার কারণে ও তাদের ঝোঁক প্রবণতায় ভিন্নতা থাকার কারণে তাদের প্রণীত গ্রন্থগুলোর মাঝে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে।

তাই কেউ স্বীয় মাযহাবের গ--র মধ্যে থেকে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন এবং তাতে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করেছেন। কেউ আবার বিভিন্ন এলাকায় প্রচলিত ফিক্বহী মাযহাব সমূহের গ--র মধ্যে থেকে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। অনুরূপভাবে তাদের মধ্যে কেউ আবার বিতর্কিত মাসআলাগুলোর দলীলসমূহ ও দলীল গ্রহণের পদ্ধতিসমূহ উল্লেখ করেছেন।

তাদের মধ্যে একদল হলেন অগ্রগামী। যারা ইজতিহাদ, বিশেস্নষণ ও গভীর দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। ফলে মহানাবী (ﷺ) এর সমস্ত সুনানের দলীলের আলোকে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ জন্য তারা নবুওয়াতের দীপাধার হতে দলীল গ্রহণ করে সামনে পথ চলেছেন। সুনানের বাহন যে দিকে গেছে তারাও সে দিকে ভ্রমণ করেছেন। সুনেই যে পথের অভিমুখী হয়েছে তারাও সে পথের অভিমুখী হয়েছেন। এর ফলে তারা সঞ্চিত জ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার আবির্ভাব ঘটিয়েছেন যা সর্বোত্তম নিয়ম-কানুন ও হিদায়াতমূলক রীতির উপর গড়ে উঠেছে।

এ প্রকার ফিক্বহ হল মহানাবী (ﷺ) এর সাহাবাদের পক্ষ থেকে চলে আসা মূল ফিক্বহ। সাহাবাগণ এটাকে তাবেঈদের কাছে সঠিক ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে তাদের পরবর্তী তাবে-তাবেঈনগণ তাদের কাছ থেকে তা ভালভাবে গ্রহণ করেছেন। ফলে তারা এই উত্তম রীতিতে ও সঠিক পন্থায় গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।[2]

এ প্রকার দ্বীনি ফিক্বহের ব্যাপারে ইবনুল কাইয়্যিম তার ‘তাহযীবু সুনেই’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন:[3]

‘‘যে বিষয়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এবং যে বিষয়টির সর্বোত্তম লক্ষ্য হাসিলের জন্য প্রতিযোগীগণ প্রতিযোগিতা করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীগণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ও কর্মঠগণ যা উদ্ধারের পিছনে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন, তা হলো শেষ নাবী ও সমগ্র বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল (ﷺ) থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান। রাসূল (ﷺ) এর অনুসরণ ছাড়া কেউ নাজাত পাবে না। তার সাথে সম্পৃক্ততা ছাড়া কেউ উভয় জগতে সফলকাম হতে পারবে না। যে ব্যক্তি তার আদর্শ গ্রহণে ধন্য হয়েছে সে মুক্তি পেয়েছে ও সফলতা অর্জন করেছে। যে তাঁর থেকে বিমুখ হয়েছে সে খতিগ্রস্থ ও বঞ্চিত হয়েছে। কেননা সৌভাগ্যের পরশ তাঁকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ঈমানের কেন্দ্র তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। সুতরাং তাঁকে ছাড়া আল্লাহ্‌র নিকটে পৌঁছা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। তাঁকে (রাসূল ﷺ) ছাড়া হিদায়াত অন্বেষণ করা মানে স্বয়ং পথ ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি (আল্লাহ্‌) যে পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সে পথ ব্যতীত কিভাবে তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব? যে ব্যক্তি এ পথে চলতে চায়, তার জন্য এটা পথ প্রদর্শক। আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল (ﷺ) কে এ পথের আহবানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তিনি তাঁকে এ পথের প্রত্যেকটি প্রবেশদ্বারে আহবায়ক ও হিদায়াতকারী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। আর এ পথেই হিদায়াত রয়েছে। সুতরাং যে এ পথ ভিন্ন অন্য পথে চলতে চায় তার জন্য হিদায়াতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং সে আল্লাহ্‌র হিদায়াত ও সৌভাগ্যের পথ থেকে বঞ্চিত হবে। বরং যখনই অতিরিক্ত ইজতিহাদের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে তখন আল্লাহ্‌র পথ থেকে পলায়নপরতা ও দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ হলো: সে সরল-সঠিক পথে চলা থেকে বিরত থেকেছে। যথার্থ রীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষের অভিমতকে মেনে নিয়েছে। বেশি তর্ক করার মাধ্যমে নিজেকে সন্তুষ্ট রেখেছে। চিরস্থায়ী ভাবে তাক্বলীদের পথকে বেছে নিয়েছে। অন্যান্য তাক্বলীদকারী বান্দাদের পরিবারভুক্ত হয়ে থাকাকে পছন্দ করেছে। ইলমের সোজা রাসত্মায় সে চলতে পারে নি। জ্ঞান-সোপানের মর্যাদায় সে আরোহণ করতে পারে নি। তার অন্তরে জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্বলিত হয় নি। তার হৃদয় জ্ঞানের বাগিচায় ভ্রমণ করে নি। বরং সে এমন ওলান থেকে দুধ পান করেছে যেটা সতীত্বের দিক দিয়ে পবিত্র নয়। সে লবণাক্ত পানশালায় নেমে তার হৃদয় ও জিহবা দিয়ে পানশালার পানি ঘোলাটে করে ফেলেছে।

এ অশুভ পরিণতি থেকে লজ্জাস্থান, জীবন ও ধন-সম্পদ মহান আল্লাহ্‌র কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছে যিনি হালাল-হারামের বিধান দাতা এবং অধিকারসমূহ শরীয়াত ও বিধান দাতা (আল্লাহ্‌) কাছে উদ্ধার কামনা করছে। অতএব যে নিজেকে সৌভাগ্যবান করতে আগ্রহী এবং যার অন্তর সচেতন ও জাগ্রত, তার উচিৎ- ঐ বিষয়ে সাহায্য করার প্রয়াস চালানো হতে বিরত থাকা, যা তার কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। আর দুনিয়াবী জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে অথচ তারা ধারণা করছে তারা সঠিক কাজই করছে, তাদের পথ থেকেও তার বিরত থাকা উচিৎ। কেননা আল্লাহ্‌ এমন একটি দিনের ব্যবস্থা রেখেছেন যে দিন বাতিলপন্থিরা খতিগ্রস্থ হবে এবং হক্বপন্থিরা লাভবান হবেন।

﴿وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا﴾

অর্থাৎ: আর সে দিন যালিম ব্যক্তি নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে- ‘হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সঠিক পথ অবলম্বন করতাম’ (সূরা : ফুরকান-২৭) ।

﴿يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا﴾

স্মরণ কর, যে দিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামসহ ডাকব। অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও অবিচার করা হবে না (সূরা : আল-ইসরা-৭১)।

সুতরাং যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) ছাড়া অন্যকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাঁর সুন্নাতকে পিছনে ফেলে রেখেছে এবং তার চোখের সামনে মানুষের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়েছে, সে অচিরেই বুঝতে পারবে যে, ক্বিয়ামতের দিন সে কোন মালপত্র হারিয়েছে এবং আমলনামা ওযনের সময় সে বুঝতে পারবে যে, কতটুকু মূল্যবান বস্ত্ত অথবা ভোগ-বিলাসের নিকৃষ্ট বস্ত্ত সে উপস্থিত করেছে’’।[4]

এ থেকেই আমার পছন্দের বিন্যাস অনুযায়ী ফিক্বহের অধ্যায়সমূহ সংকলন করার সুদৃঢ় ইচ্ছা ও কল্পনা মনে উদয় হয়েছে।[5] এই আশা করে যে, যেন আমি দ্বীনি ফিক্বহের ক্ষেত্রে কল্যাণ পেতে পারি।

[1] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী ৭১, মুসলিম ১০৩৭ মু‘আবিয়াহ বর্ণিত হাদীস।

[2] প্রতিষ্ঠিত ফিক্বহ সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন!‘ ই‘লামুল মুয়াক্বিয়ীন’ (১/৫-৬ ও তার পরবর্তী অংশ) এবং আল হাযবী প্রণীত, ‘আল-ফিক্বরম্নস সামী ফী তারীখিল ফিক্বহিল ইসলামী’।

[3] দেখুন! ‘তাহযীবু সুনানি আবি দাউদ’ (১/৫-৭), আনসারম্নস সুন্নাতিল মুহাম্মাদিয়্যাহ প্রেস, মিশর কর্তৃক ১৩৬৭ হি: সনে মুদ্রিত। শাইখ আহমাদ শাকির ও মুহাম্মাদুল ফিক্বহীর দ্বারা তাহক্বীককৃত। ইবনে হাযাম (রাহি) প্রণীত ‘আহকাম’ গ্রন্থে (১/১০৩,১২৫) এরূপ ভাবার্থে বর্ণিত হয়েছে।

[4] ‘তাক্বরীবু উলূমি ইবনি কাইয়্যিম’ গ্রন্থে (পৃ:১০-১৪) আলস্নামা বাকর আবি যায়দ ( আলস্নাহ তাকে হিফাযত করম্নন) এর ভূমিকা হতে গৃহীত।

[5] ইনশা আলস্নাহ অতি সত্বর আমি আমার গ্রন্থ প্রণয়নের পদ্ধতি আলোচনা করব।