লগইন করুন
১. প্রথম রাসূল নূহ (আঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি আপত্তি তোলা হয়েছিল, সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধেও ঐ অভিযোগগুলি তোলা হয়েছিল। শেষনবীর প্রকৃত দ্বীনী উত্তরাধিকারী হিসাবে সমাজ সংস্কারক মুত্তাক্বী আলেমগণের উপরে নবুঅতের বিষয়টি বাদে বাকী চারটি অভিযোগ যুগে যুগে উত্থাপিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
২. নূহ (আঃ) যেমন দীর্ঘকাল যাবত নিজ জাতির পক্ষ হ’তে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করা সত্ত্বেও তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হ’তেন না, প্রকৃত সমাজ হিতৈষী আলেম ও নেতাগণেরও তেমনি নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
৩. নবী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ঈমান না থাকার কারণে নূহের স্ত্রী ও পুত্র যেমন নাজাত লাভে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি এ যুগেও হওয়া সম্ভব। কাফির ও মুশরিক সন্তান বা কোন নিকটাত্মীয়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করা জায়েয নয়।
৪. ঈমানী সম্পদই বড় সম্পদ। আল্লাহর নিকটে ঈমানদারের মর্যাদা সর্বপেক্ষা বেশী। যদিও সে দুনিয়াবী জীবনে দীনহীন গরীব হয়।
৫. ঈমানহীন সমাজ নেতা ও ধনী লোকদের খুশী করার জন্য ঈমানদার গরীবদের দূরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না।
৬. মৃত নেককার মানুষের অসীলায় পরকালে মুক্তি পাওয়ার ধারণার ভিত্তিতে সৃষ্ট মূর্তিপূজার শিরক বিশ্ব ইতিহাসের প্রাচীনতম শিরক। এই শিরকের কারণেই নূহের কওম আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়েছিল। তাই যাবতীয় প্রকারের শিরক থেকে তওবা করা কর্তব্য। সাথে সাথে এই মহাপাপ থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আলেমদের এবং সমাজ ও রাষ্ট্র নেতাদের এগিয়ে আসা যরূরী।
৭. সমাজ নেতাদের পথভ্রষ্টতার কারণেই দেশে আল্লাহর গযব নেমে আসে। অতএব তাদেরকেই সবার আগে হুঁশিয়ার হওয়া কর্তব্য।
৮. বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করার সাথে সাথে সাধ্যমত বাস্তব প্রচেষ্টা চালাতে হয়। যেমন নূহ (আঃ) প্রথমে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেন। অতঃপর গযব থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর হুকুমে নৌকা তৈরী করেন।
৯. আল্লাহ পাক স্বীয় অহী দ্বারা বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন শিল্পকর্মের সূচনা করেছেন, যেমন আদম (আঃ)-এর মাধ্যমে কৃষিকর্ম ও চাকার প্রচলন করেছেন এবং নূহ (আঃ)-এর মাধ্যমে জাহায শিল্পের সূচনা করেছেন।
১০. দুনিয়াবী জৌলুস সত্ত্বেও যালেমরা সর্বযুগেই নিন্দিত ও ধিকৃত হয়। পক্ষান্তরে নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও ঈমানদারগণ সর্বযুগে নন্দিত ও প্রশংসিত হন।
১১. কিসে মানুষের প্রকৃত মঙ্গল নিহিত রয়েছে, মানুষ নিজে তা নির্ণয় করতে পারে না। তাকে সর্বদা আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। তাই ‘আল্লাহর অহি’ তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত এবং চূড়ান্ত সত্যের মাপকাঠি।
১২. পূর্বতন সকল নবীর দাওয়াত ছিল এক ও অভিন্ন এবং তা ছিল নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি দাওয়াত। মানুষের সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠাই হ’ল প্রকৃত অর্থে ইক্বামতে দ্বীন।
১৩. আল্লাহ স্বীয় নেককার বান্দাগণের পক্ষে তাদের শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন এবং নেক বান্দাদের মুক্ত করেন। যেমন নূহের শত্রুদের থেকে আল্লাহ বদলা নিয়েছিলেন এবং নূহ ও তাঁর ঈমানদার সাথীদের মুক্ত করেছিলেন।
১৪. ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম তোহমত ছিল এই যে, তারা হ’ল সমাজের দীনহীন ও স্বল্পবুদ্ধির লোক (هم أرَاذَلُنَا بَادِىَ الرأى -হূদ ২৭)। এ যুগেও তার ব্যতিক্রম নয়।
১৫. নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারী সমাজ সংষ্কারকগণ সমাজের গালমন্দ খেয়েও সমাজ ত্যাগ করেন না। কিন্তু তাঁরা বদ দো‘আ করলে আল্লাহর গযব নেমে আসে।