লগইন করুন
সমাজে উক্ত আমল বহুল প্রচলিত। মহিলা-পুরুষ সকলে মিলে ঐ ব্যক্তির চারপাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকে। সূরা ইয়াসীন কিংবা বিশেষ বিশেষ সূরা পাঠ করতে থাকে। অথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে শুধু ‘তালক্বীন’ করাতে বলেছেন।[1] ‘তালক্বীন’ অর্থ কথা বুঝানো বা দ্রুত মুখস্থ করে নেওয়া। মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে রোগীর শিয়রে বসে তাকে কালেমায়ে ত্বাইয়িবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করিয়ে দেয়া। রাসূলুল্লাহ (ছা্ঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[2] এ সময় সূরা ইয়াসীন পড়ার হাদীছ যঈফ।
(أ) عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ اقْرَءُوْا (يس) عَلَى مَوْتَاكُمْ.
(ক) মা‘কেল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত কর।[3]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনার সনদে আবু উছমান ও তার পিতা রয়েছে। তারা উভয়ে অপরিচিত রাবী। তাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।[4]
(ب) عَنْ أُبَيَ بْنِ كَعْبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ قَرَأَ (يس) يُرِيْدُ بِهَا اللهَ غَفَرَ اللهُ لَهُ وَأَعْطَي مِنَ الْأَجْرِ كَأَنَّمَا قَرَأَ الْقُرْآنَ اثْنَتَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً وَأَيُّمَا مَرِيْضٍ قُرِىءَ عِنْدَهُ سُوْرَةُ (يس) نَزَلَ عَلَيْهِ بِعَدَدِ كُلِّ حَرْفٍ عَشَرَةُ أَمْلاَكٍ يَقُوْمُوْنَ بَيْنَ يَدَيْهِ صُفُوْفاً فَيُصَلُّوْنَ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لَهُ وَيَشْهَدُوْنَ قَبْضَهُ وَغَسْلَهُ وَيَتَّبِعُوْنَ جَنَازَتَهُ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ وَيَشْهَدُوْنَ دَفْنَهُ وَأَيُّمَا مَرِيْضٍ قَرَأَ سُوْرَةَ (يس) وَهُوَ فِىْ سَكْرَاتِ الْمَوْتِ لَمْ يَقْبِضْ مَلَكُ الْمَوْتِ رُوْحَهُ حَتىَّ يَجِيْئَهُ رِضْوَانُ خِازِنِ الْجَنَّةِ بِشُرْبَةٍ مِنَ الْجَنَّةِ فَيَشْرِبَهَا وَهُوَ عَلَى فِرَاشِهِ فَيَمُوْتُ وَهُوَ رَيَّانٌ وَلاَ يَحْتَاجُ إِلَى حَوْضٍ مِنْ حِيَاضِ الْأَنْبِيَاءِ حَتىَّ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ رَيَّانٌ .
(খ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে প্রতিদান দান করবেন, যেন সে দশবার কুরআন তেলাওয়াত করল। কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হলে তার উপর প্রত্যেক অক্ষরের পরিবর্তে দশজন ফেরেশতা নাযিল হয়। তারা তার সামনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য দু‘আ করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন; যান কবয ও গোসল করার সময় উপস্থিত থাকেন, জানাযার সাথে গমন করেন। ছালাত আদায় করেন এবং দাফন কার্যে উপস্থিত থাকেন। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর এমন ব্যক্তির উপর যদি সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হয়, তবে ‘মালাকুল মাউত’ ততক্ষণ তার রূহ কবয করবেন না, যতক্ষণ জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতের পানীয় না নিয়ে আসেন। অতঃপর বিছানায় থাকা অবস্থায় তাকে তা পান করাবেন। ঐ ব্যক্তি তখন পরিতৃপ্ত হবে। এমনকি নবীদের হাউযের পানিরও সে প্রয়োজন মনে করবে না। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখনও সে পরিতৃপ্তই থাকবে।[5]
তাহক্বীক্ব : ডাহা মিথ্যা বর্ণনা। এর সনদে উইসুফ ইবনু আতিইয়াহ নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। এছাড়া সুওয়াইদ নামেও একজন দুর্বল রাবী আছে।[6] উল্লেখ্য যে, সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে যত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, সবই যঈফ কিংবা জাল। ছহীহ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।[7]
[2]. আবুদাঊদ হা/৩১১৬, ২/৪৪৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৬২১, পৃঃ ১৪১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৩৩, ৪/৩৬ পৃঃ।
[3]. আবুদাঊদ হা/৩১২১, ২/৪৪৫ পৃঃ; আহমাদ হা/২০৩১৬।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৬১।
[5]. ছা‘লাবী ৩/১৬১ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৩৬।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৩৬।
[7]. সিলসিলা যঈফা হা/৬৬২৩-৬৬২৪।