লগইন করুন
প্রচলিত ডাক আযানকে বৈধ করার জন্য জুম‘আর ছালাতের খুৎবার পূর্বে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বা বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য দেয়ার আরেকটি বিদ‘আত চালু হয়েছে। একটি বিদ‘আতকে রক্ষা করার জন্য আরেকটি বিদ‘আতের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তাছাড়া মূল খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়ার কারণে মুছল্লীরা কোনকিছু উপলব্ধি করতে পারে না। বিধায় এটা চালু করা হয়েছে। মূলতঃ খুৎবার পূর্বে আরেকটি খুৎবা দেয়ার যেমন শারঈ কোন ভিত্তি নেই, তেমনি আরবী ভাষায় খুৎবা দেয়ারও কোন বিধান নেই। তাছাড়া জুম‘আর খুৎবা বসে দেয়াও শরী‘আত বিরোধী।[1]
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সামনে আরবী ভাষায় জুম‘আর খুৎবা দেওয়া অর্থহীন এবং সুন্নাতের বরখেলাফ। রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানুষের সামনে আরবী ভাষায় খুৎবা দিতেন না; বরং তিনি তাঁর মাতৃভাষায় খুৎবা দিতেন, যা ছিল আরবী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُوْلٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ.
‘আমি সকল রাসূলকে তার সম্প্রদায়ের ভাষাতেই প্রেরণ করেছি। যেন তিনি তাদের সামনে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন’ (ইবরাহীম ৪)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’ (দুখান ৫৮)। রাসূল (ছাঃ) কুরআনের আয়াত পাঠ করে উপস্থিত মুছল্লীদেরকে উপদেশ দান করতেন।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ كَانَتْ لِلنَّبِىِّ خُطْبَتَانِ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيُذَكِّرُ النَّاسَ.
জাবের ইবনু সামুরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর দু’টি খুৎবা ছিল। উভয় খুৎবার মাঝে তিনি বসতেন। খুৎবাতে তিনি কুরআন পাঠ করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন।[2]
এছাড়া রাসূল (ছাঃ) প্রয়োজনে মুছল্লীদের সাথেও কথা বলতেন। মুছল্লীরাও কোন বিষয় রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে পেশ করতেন। যেমন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তাকে দাঁড়াতে বলেন এবং সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ‘তাহ্ইয়াতুল মসজিদ’-এর ছালাত আদায় করতে বলেন।[3] পরপর দুই জুম‘আয় এক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বৃষ্টির ব্যাপারে আবেদন পেশ করেছিলেন।[4]
এক্ষণে যে সমস্ত মসজিদে আরবী ভাষায় খুৎবা দেওয়া হয়, সেখানে মুছল্লীরা কোন আবেদন করতে চাইলে কোন্ ভাষায় করবে? খুৎবা অবস্থায় ইমাম কোন্ ভাষায় জবাব দিবেন? খুৎবায় বাংলা বলা যদি নাজায়েয হয়, তাহলে ইমাম কি তখন আরবী ভাষায় জবাব দিবেন? মুক্তাদী কি তার ভাষা বুঝতে পারবে? প্রশ্ন করে তার কোন লাভ হবে কি? সুতরাং ইমাম মুক্তাদী সকলে আরবী ভাষী হতে হবে। অতএব মানুষের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করতে হবে।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৩২, ১/২৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৬৫); মিশকাত হা/১৪০৫, পৃঃ ১২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২১, ৩/১৯৭ পৃঃ।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৯৩০ ও ৯৩১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, (ইফাবা হা/৮৮৩ ও ৮৮৪, ২/১৯০-১৯১ পৃঃ) ; ছহীহ মুসলিম হা/২০৫৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৭, (ইফাবা হা/১৮৯০)।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/১০২৯, ১/১৪০ পৃঃ; বুখারী হা/১০১৩ ও ১০১৪; ছহীহ মুসলিম হা/২১১৫।