লগইন করুন
অনেক মসজিদে ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া হয়। দু‘আ হিসাবে ‘কুনূতে নাযেলা’ না পড়ে বিতরের কুনূত পড়া হয়। এটা আরো দুঃখজনক। কুনূতে নাযেলা প্রত্যেক ফরয ছালাতে পড়া যায়। সে অনুযায়ী ফজর ছালাতেও পড়বে।[1] কিন্তু নির্দিষ্ট করে নিয়মিত শুধু ফজর ছালাতে পড়া যাবে না। কারণ এর পক্ষে যতগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই যঈফ। যেমন-
(أ) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ مَا زَالَ رَسُوْلُ اللهِ يَقْنُتُ فِى الْفَجْرِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত ফজরের ছালাতে কুনূত পড়েছেন।[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আবু জা‘ফর রাযী নামে একজন মুযতারাব রাবী আছে। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম বর্ণনা করেছে।[3]
(ب) عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الْقُنُوْتِ فِى الْفَجْرِ.
(খ) উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাতে কুনূত পড়তে নিষেধ করেছেন।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়ালী, আমবাসা ও আব্দুলাহ ইবনু নাফে সকলেই যঈফ। উম্মে সালামা থেকে নাফের শ্রবণ সঠিক নয়।[5] ইবনু মাঈন বলেন, সে হাদীছ জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, সে জাল হাদীছ বর্ণনাকারী। যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।[6] অতি বাড়াবাড়ি করে উক্ত হাদীছ জাল করে নিষেধের দলীল তৈরি করা হয়েছে।
অতএব ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত পড়াটা ছাহাবীদের চোখেই বিদ‘আত বলে গণ্য হয়েছে। যেমন-
عَنْ أَبِىْ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ قُلْتُ لأَبِىْ يَا أَبَةِ إِنَّكَ قَدْ صَلَّيْتَ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ وَأَبِىْ بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِىِّ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ هَا هُنَا بِالْكُوْفَةِ نَحْوًا مِنْ خَمْسِ سِنِيْنَ أَكَانُوْا يَقْنُتُوْنَ قَالَ أَىْ بُنَىَّ مُحْدَثٌ.
আবু মালেক আশজাঈ (রাঃ) বলেন, আমি আব্বাকে বললাম, আপনি তো রাসূল (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছেন। এমনকি কূফাতে আলী (রাঃ)-এর পিছনে পাঁচ বছর ছালাত আদায় করেছেন। তারা কি কুনূত পড়তেন? তিনি বললেন, হে বৎস! এটা বিদ‘আত।[7]
[2]. আব্দুর রাযযাক ৩/১১০; দারাকুৎনী ২/৩৯; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ২/২০১; আহমাদ হা/১২৬৭৯, ৩/১৬২।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫৭৪; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৯।
[4]. দারাকুৎনী ২/৩৮; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ২/২১৪।
[5]. দারাকুৎনী হা/১৭০৭-এর আলোচনা দ্রঃ محمد بن يعلى وعنبسة وعبد الله بن نافع كلهم ضعفاء ولا يصح لنافع سماع من أم سلمة.।
[6]. صاحب أشياء موضوعة وما لاأصل له-তানক্বীহ, পৃঃ ৪৫১।
[7]. তিরমিযী হা/৪০২; মিশকাত হা/১২৯২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২১৯, ৩/১৪৪ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল হা/৪৩৫, সনদ ছহীহ।