লগইন করুন
(৩) হজ্জের সফরে ছালাত ক্বছর না করা :
হজ্জের সফরে ক্বছর ও জমা ছালাতের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করা অন্যায়। কিছু জাল ও যঈফ হাদীছের কারণে উক্ত সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়।[1] কারণ হাদীছে সরাসরি রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের আমল বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ أَنَسٍ يَقُوْلُ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ مِنَ الْمَدِيْنَةِ إِلَى مَكَّةَ فَكَانَ يُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ...
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মদ্বীনা থেকে মক্কার দিকে বের হয়েছিলাম। পুনরায় মদ্বীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করেছিলেন।[2] অন্য হাদীছে এসেছে, কারণ স্বয়ং রাসূল (ছাঃ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ) ছালাত ক্বছর ও জমা করেছেন।[3]
অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। প্রথমে দুই রাক‘আত যোহরের ছালাত অতঃপর আছরের দুই রাক‘আত পড়বে পৃথক পৃথক ইক্বামতে। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা এক সঙ্গে আদায় করবে। প্রথমে ইক্বামত দিয়ে মাগরিব তিন রাক‘আত পড়বে অতঃপর পৃথক ইক্বামতে এশা দুই রাক‘আত আদায় করবে।
إِنَّهُمْ كَانُوْا يَجْمَعُوْنَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فِى السُّنَّةِ فَقُلْتُ لِسَالِمٍ أَفَعَلَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ سَالِمٌ وَهَلْ تَتَّبِعُوْنَ فِىْ ذَلِكَ إِلاَّ سُنَّتَهُ.
নিশ্চয় ছাহাবীগণ সুন্নাতের অনুসরণে যোহর ও আছর ছালাত জমা করে আদায় করতেন। রাবী বলেন, আমি সালেমকে বললাম, রাসূল (ছাঃ) কি এটা করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, এ বিষয়ে তোমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করবে কি? [4]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ جَمَعَ النَّبِىُّ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بِإِقَامَةٍ ...
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মাগরিব এবং এশার ছালাত জমা করতেন। উভয়ের জন্য পৃথক ইক্বামত দেয়া হত।[5]
জ্ঞতব্য : (ক) সফরে সুন্নাত পড়ার প্রয়োজন নেই।[6] তবে বিতর, তাহাজ্জুদ ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়বে। রাসূল (ছাঃ) এগুলো কখনো
ছাড়তেন না।[7] (খ) মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করলে ৪ রাক‘আত পড়বে। মুসাফির একাকী ছালাত আদায় করলে দু’রাক‘আত পড়বে। মুসাফির ইমামতি করলেও দু’রাক‘আত পড়তে পারে।[8] আবু মেযলাজ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম মুছল্লীর সাথে দু’রাক‘আত ছালাত পেলে ঐ দু’রাক‘আতই কি তার জন্য যথেষ্ট হবে, না তাকে ৪ রাক‘আতই পড়তে হবে? তিনি হেসে উঠে বললেন, মুসাফির তাদের সমান ছালাত আদায় করবে।[9] (গ) মুক্বীম অবস্থায় বৃষ্টির কারণে ক্বছর ছাড়াই দু’ওয়াক্তের ছালাত এক সাথে আদায় করা যায়।[10]
[2]. ছহীহ বুখারী হা/১০৮১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৭ (ইফাবা হা/১০২০, ২/২৭৯ পৃঃ)।
[3]. বুখারী হা/১০৮৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৭, (ইফাবা হা/১০২৩, ২/২৮০ পৃঃ)-قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ r بِمِنًى رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْتُ مَعَ أَبِى بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ بِمِنًى رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ بِمِنًى رَكْعَتَيْنِ فَلَيْتَ حَظِّى مِنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ رَكْعَتَانِ مُتَقَبَّلَتَانِ.
[4]. বুখারী হা/১৬৬২, ১ম খন্ড, পৃঃ ২২৫, (ইফাবা হা/১৫৫৬), ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৯; মিশকাত হা/২৬১৭, পৃঃ ২৩০, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘আরাফা ও মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন’ অনুচ্ছেদ।
[5]. বুখারী হা/১৬৭৩, ১ম খন্ড, পৃঃ ২২৭, (ইফাবা হা/১৫৬৫), ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৬; মিশকাত হা/২৬০৭, পৃঃ ২২৯, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘আরাফা ও মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন’ অনুচ্ছেদ।
[6]. মুসলিম হা/১৬১১, ১/২৪২ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৪৯), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৩৩৮, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৬০, ৩/১৬৯ পৃঃ।-عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقِ مَكَّةَ قَالَ فَصَلَّى لَنَا الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ وَأَقْبَلْنَا مَعَهُ حَتَّى جَاءَ رَحْلَهُ وَجَلَسَ وَجَلَسْنَا مَعَهُ فَحَانَتْ مِنْهُ الْتِفَاتَةٌ نَحْوَ حَيْثُ صَلَّى فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا لأَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ ثُمَّ صَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَقَدْ قَالَ اللهُ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ).
[7]. মুসলিম হা/১৫৯৩, ১/২৩৮ ও ২৩৯ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; বুখারী হা/১১৫৯, ১/১৫৫ পৃঃ, ‘তাহাজ্জুদ ছালাত’ অধ্যায়; বুখারী হা/১০০০, ১/১৩৬ পৃঃ; মিশকাত হা/১৩৪০, পৃঃ ১১৮; ।
[8]. আহমাদ হা/১৮৫২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৭৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৫৭১, সনদ ছহীহ।
[9]. ইরওয়া ৩/২২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[10]. মুওয়াত্ত্বা, বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/৫৮৩, ৩/৪১ পৃঃ; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১২১০-১১, সনদ ছহীহ।