লগইন করুন
(২৬) তাসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা করা :
সমাজে তাসবীহ দানা দিয়ে যিকির করার প্রচলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফরয ছালাতের পর, হাটে-বাজারে, রাস্তায়, বাসে-ট্রেনে, অফিস-আদালতে সর্বত্র একশ্রেণীর মানুষকে তাসবীহ গণনা করতে দেখা যায়। এতে যে রিয়া সৃষ্টি হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক মসজিদের কাতারে কাতারে রেখে দেয়া হয় কিংবা দেওয়ালে ও জালানায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাসবীহই যেন মূল ইবাদত। অথচ এর ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা রয়েছে তার সবই জাল কিংবা যঈফ।
(أ) عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ سَعْدِ عَنْ أَبِيهَا أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ عَلَى امْرَأَةٍ وَبَيْنَ يَدَيْهَا نَوًى أَوْ حَصًى تُسَبِّحُ بِهِ فَقَالَ أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هَذَا أَوْ أَفْضَلُ فَقَالَ سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى الأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللهُ أَكْبَرُ مِثْلُ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلُ ذَلِكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِثْلُ ذَلِكَ. وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ مِثْلُ ذَلِكَ.
(ক) আয়েশা বিনতে সা‘দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এক মহিলার নিকটে যান। তখন স্ত্রীলোকটির সম্মুখে কিছু খেজুরের বিচি অথবা কংকর ছিল, যার দ্বারা সে তাসবীহ গণনা করছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কথা বলে দিব না, যা এটা অপেক্ষা অধিক সহজ বা উত্তম হবে? তা হচ্ছে- ‘সুবহা-নাল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহর পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি আসমানে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি যমীনে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ উভয়ের মাঝে রয়েছে এবং ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। ‘আল্লাহু আকবার’ উহার অনুরূপ, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ উহার অনুরূপ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ উহার অনুরূপ এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অনুরূপ।[1]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে খুযায়মাহ ও সাঈদ ইবনু আবী হেলাল নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[2] তাছাড়া এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল (ছাঃ) ডান হাতের আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করতেন।[3]
(2) عَنْ عَلِىٍّ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ نِعْمَ الْمُذْكِرُ السُّبْحَةَ.
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে দানা দ্বারা যিকির করে সে কতইনা উত্তম! [4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার প্রত্যেক রাবীই ত্রুটিপূর্ণ।[5] আলবানী বলেন, إِنَّ السُّبْحَةَ بِدْعَةٌ لَمْ تَكُنْ فِىْ عَهْدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا حَدَثَتْ بَعْدَهُ ‘নিশ্চয় তাসবীহ দানা বিদ‘আত। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর পরে সৃষ্টি হয়েছে’।[6]
(3) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ كَانَ النَّبِىُّ يُسَبِّحُ بِالْحَْصَى.
(৩) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করতেন।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কুদামা বিন মাযঊন এবং ছালেহ ইবনু আলী নামে অভিযুক্ত রাবী আছে।[8]
[2]. যঈফ তিরমিযী হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩০; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৫০০, ১/২১০ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৯৫৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩।
[3]. আবুদাঊদ হা/১৫০২, ১/২১০ পৃঃ; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৪৮; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৮৪৩; তিরমিযী হা/৩৪৮৬। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা তিরমিযীতে উক্ত অংশ নেই দ্রঃ ২/১৮৬ পৃঃ।
[4]. দায়লামী, মুসনাদুল ফেরদাউদ ৪/৯৮ পৃঃ।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ।
[7]. আবুল কাসেম জুরজানী, তারীখে জুরজান হা/৬৮।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০২।