লগইন করুন
জান্নাতের আটটি গেট রয়েছে। গেটগুলো এত বিশাল যে, একটি গেটের দুপাটের মধ্যে দুরত্ব হলো মক্কা থেকে হিজর পর্যন্ত (প্রায় ১১৬০ কিলোমিটার) অথবা মক্কা থেকে বসরা পর্যন্ত (প্রায় ১২৫০ কি.মি)
প্রত্যেক সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের তাদের আমল অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ গেট থেকে আহবান করা হবে। যে ছদকাহ করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে আহবান করা হবে। যে সাওম পালন করেছে তাকে রাইয়্যান নামক গেট থেকে আহ্বান করা হবে।
জান্নাতের গেট সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣﴾ [الزمر: ٧٢]
“আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছবে এবং এর গেটসমূহ খুলে দেওয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভালো ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর”। [সূরা যুমার, আয়াত: ৭৩]
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, জান্নাতে অনেকগুলো গেট আছে।
জান্নাতের গেট সম্পর্কে হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ: يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ "، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا، قَالَ: «نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ»
“যে দুটো বিষয় (প্রাণ ও সম্পদ) আল্লাহর পথে খরচ করেছে তাকে জান্নাতের গেট থেকে ডাক দিয়ে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য এটা কল্যাণকর। যে নামাজী হবে তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে জিহাদকারী তাকে জিহাদের গেট থেকে ডাকা হবে। সিয়াম পালনকারীকে রাইয়ান নামক গেট থেকে ডাকা হবে। যে ছদকা করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে ডাকা হবে। এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (আপনার প্রতি আমার পিতা মাতা উৎসর্গ হোক) যাকে এ সকল গেট থেকে ডাকা হবে সে কি কোনো অনুবিধার সম্মুখীন হবে? আর এমন কোনো লোক পাওয়া যাবে যাকে জান্নাতের সকল গেট থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। আমি আশা করি তুমি তাদের একজন”।[1]
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, এমন কিছু নেককার মানুষ থাকবেন যাদেরকে জান্নাতে সকল গেট ও দরজা দিয়ে ডাকা হবে। জান্নাতের সকল কপাট তাদের জন্য খোলা থাকবে। আর এ সকল ভাগ্যবানদের একজন হলেন, খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। কারণ, তিনি সকল নেক আমলই সম্পাদন করতেন। কোনো নেক আমলই ত্যাগ করতন না। এ সম্পর্কে একটি হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“তোমাদের মধ্যে আজ কে সাওম পালন করেছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সাওম পালন করেছি। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, কে তোমাদের মধ্যে আজ কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাযায় অংশ নিয়েছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি অংশ নিয়েছি। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো অভাবী ব্যক্তিকে খাবার খাইয়েছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি খাবার দিয়েছি। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে আজ কে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করেছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মধ্যে এ ভালো কাজগুলোর সমাবেশ ঘটবে জান্নাতে সে প্রবেশ করবেই”।[2]
আর এ জন্যই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জান্নাতের সকল গেট থেকে আহবান করা হবে। কারণ, তিনি সকল প্রকার ভালো কাজ করেছেন।
এ হাদীসের শিক্ষা অনুযায়ি আমাদের কর্তব্য হলো, সকল প্রকার ভালো ও সৎকর্ম যা করা সম্ভব তা সম্পাদন করা। তাহলে আল্লাহ তা‘আলার রহমত-অনুগ্রহে আমরা এ মর্যাদা অর্জন করতে পারি।
হাদীসে আরো এসেছে: সাহাল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ»
“জান্নাতে একটি গেট রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না”।[3]
এ হাদীস দিয়েও আমরা বুঝলাম জান্নাতে সাওম পালনকারীদের জন্য একটি বিশেষ গেট থাকবে।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৮।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫২।