আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الشرك الأصغر - বা ছোট শিরক শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
(৪) যামানা কিংবা অন্যান্য সৃষ্টিকে গালি দেয়া

অভ্যাসগতভাবে কতিপয় মানুষ যেসব ভুল-ভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়, আমরা তা থেকে আরো কতিপয় ভুল-ভ্রান্তি এখানে উল্লেখ করবো। এগুলো মানুষের তাওহীদকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয় এবং আকীদাকে নষ্ট করে ফেলে। যামানা, বাতাস এবং এ ধরণের অন্যান্য জিনিসকে গালি দেয়াও প্রচলিত ভুল-ত্রুটিগুলোর মধ্যে গণ্য। যেসব বিষয়ে সৃষ্টির কোনো ক্ষমতা নেই, ঐসব বিষয়ে সৃষ্টিকে দোষারোপ করা মানুষের অভ্যাসগত প্রচলিত ভুলের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে এ দোষারোপ আল্লাহ তা‘আলাকেই করা হয়। কেননা তিনিই এগুলোর একমাত্র স্রষ্টা এবং সবকিছুর পরিচালক। আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন,

﴿وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ وَمَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ﴾

‘‘অবিশ্বাসীরা বলে, ‘শুধু দুনিয়ার জীবনই আমাদের আসল জীবন। আমরা এখানেই মরি ও বাঁচি। যামানা ব্যতীত অন্য কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করে না। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে’’। (সূরা জাসিয়া: ২৪)

যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছে তারা বলেছে, পার্থিব জীবনই আসল জীবন। আমরা বর্তমানে যে জীবনে আছি, তাই আসল জীবন। এ ছাড়া আর কোনো জীবন নেই। আমরা এতেই জীবিত থাকি এবং এতেই মৃত্যু বরণ করি। একদল লোক মৃত্যু বরণ করার পর আরেক দল লোক এখানে বসবাস করে। এ কথার মাধ্যমে তারা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা ও পরিচালকের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে এবং মহাবিশ্বের সব ঘটনাকে তারা প্রকৃতির দিকে সম্বন্ধ করেছে। এ জন্যই তারা বলেছে,  ﴿وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ﴾ ‘‘মহাকাল ব্যতীত অন্য কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করে না’’। দিবারাত্রির আবর্তন-বিবর্তনই আমাদেরকে নিঃশেষ করে ফেলে। তাই যামানাকে দোষারোপ করে তার দিকেই তারা নিজেদের ধ্বংসের সম্বন্ধ করেছিল। তারা মূর্খতা বশতঃ অনুমান করে এ কথা বলেছিল। ইলম এবং দলীলের ভিত্তিতে তারা এটি বলেনি।

সুতরাং এটি একটি বাতিল কথা। দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত যে, সৃষ্টিজগতে যা কিছু ঘটে তার জন্য এক প্রজ্ঞাবান ও সক্ষম পরিচালক থাকা আবশ্যক। তিনি হলেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। সুতরাং যে ব্যক্তি যামানাকে গালি দিলো এবং সৃষ্টিজগতের কোনো কিছু তার দিকে সম্বন্ধ করলো, সে এ নিকৃষ্ট স্বভাবের ক্ষেত্রে মুশরিক ও বস্তুবাদীদের সাথে অংশগ্রহণ করলো। যদিও সে আকীদার মৌলিক বিষয়সমূহে তাদের অংশীদার নয়।

সহীহ বুখারী (৪৮২৬), সহীহ মুসলিম এবং অন্যান্য কিতাবে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِي الأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

‘‘বনী আদম আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যামানাকে গালি দেয়। অথচ আমিই যামানা। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা। রাত-দিনকে আমিই পরিবর্তন করি’’।[1] অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা যামানাকে গালি দিয়ো না। কারণ আল্লাহই হচ্ছেন যামানা।

হাদীছটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি যামানাকে গালি দিলো, সে আল্লাহ তা‘আলাকে কষ্ট দিলো। কেননা এতে করে সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা ও ব্যবস্থাপকের দিকেই গালি চলে যায়। যুগ কেবল সবকিছু ঘটার সময় এবং আজ্ঞাবহ সৃষ্টি মাত্র। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় যামানার কোনো অংশ নেই। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমিই যামানা বা মহাকাল।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী, أنا الدهر ‘‘অথচ আমিই যামানা’’ -এ কথার ব্যাখ্যা হলো আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি। فإن الله هو الدهر এ কথার অর্থও অনুরূপ। মোটকথা আল্লাহ তা‘আলাই যামানা এবং অন্যান্য সৃষ্টির পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। সুতরাং যে ব্যক্তি যামানাকে গালি দেয় সে মূলত যামানার স্রষ্টাকেই গালি দেয়। তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা। কতিপয় সালাফ বলেছেন, জাহেলী যুগের আরবগণের অভ্যাস এই ছিল যে, তারা যামানাকে দোষারোপ করতো। বিভিন্ন রকম বিপদাপদের সময় যামানাকে গালি দিতো। তারা যখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতো অথবা বালা মুছীবতে পড়তো, তখন বলতো যে, কালের দুর্বিপাক তাদেরকে মুছীবতে ফেলেছে এবং যামানা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা আরো বলতো, হে কালের ব্যর্থতা! এসব কথা কলে তারা নিজেদের ব্যর্থতাকে যামানার দিকে সম্বন্ধ করতো এবং যামানাকে গালি দিতো। অথচ যামানার স্রষ্টা কেবল আল্লাহ তা‘আলা। তাদের দুঃখ-কষ্টকে যখন তারা যামানার দিকে সম্বন্ধ করলো, তখন তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলাকেই গালি দিলো। কেননা যামানার স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা।

শাইখ আব্দুর রাহমান ইবনে হাসান রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম ইবনে হায্ম এবং তার মতো যারা এ হাদীছের বাহ্যিক অর্থের উপর নির্ভর করে الدهر কে আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নামের মধ্যে গণ্য করেছেন, তারা মারাত্মক ভুল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা الدهر এর অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমিই দিবারাত্রির পরিবর্তনকারী। দিবারাত্রি পরিবর্তন করার অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাতে মানুষ যা পছন্দ করে কিংবা যা অপছন্দ করে, তা সবই তিনি ঘটিয়ে থাকেন। মুসলিমদের উচিত এ ধরণের শব্দ পরিহার করা। যদিও সে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র সবকিছুর পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। কিন্তু এ ধরণের শব্দমালা ব্যবহার করা থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই কাফেরদের সাদৃশ্য করা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। এর মাধ্যমেই আকীদা সংরক্ষণ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার সাথে আদব রক্ষা করে চলা সম্ভব। বাতাসকে গালি দেয়াও যামানাকে গালি দেয়ার মতোই।

তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীছে বাতাসকে গালি দেয়ার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইমাম তিরমিযী উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করার পর সেটাকে সহীহ বলেছেন। উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তোমরা যখন অপছন্দনীয় কিছু দেখবে, তখন বলবে,

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

‘‘হে আল্লাহ! এ বাতাসের যা কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে অদিষ্ট হয়েছে ততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আর এ বাতাসের যা অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুকায়িত আছে এবং যতটুকু অনিষ্ট সাধনের ব্যাপারে সে আদিষ্ট হয়েছে তা থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি’’।[2]

বাতাসের কল্যাণ প্রার্থনা করা এবং বাতাসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার কারণ হলো, বাতাস আল্লাহর আদেশ এবং তারই ব্যবস্থাপনায় প্রবাহিত হয়। তিনি বাতাস সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই বাতাসকে প্রবাহিত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং বাতাসকে গালি দেয়া এবং বাতাসের স্রষ্টাকে গালি দেয়া একই কথা। আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মাধ্যমেই নিয়ামত আগমন করে। আর আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার মাধ্যমে শাস্তি বিদূরিত হয়। এসব সৃষ্টিকে গালি দেয়ার মধ্যে অনেক ক্ষতি রয়েছে।

(ক) এতে করে যে গালির উপযুক্ত নয়, তাকে গালি দেয়া হয়ে থাকে। কেননা বাতাস সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর তা‘আলার বশীভূত ও পরিচালনাধীন।

(খ) বাতাস বা অন্যান্য সৃষ্টিকে গালি দেয়ার মাধ্যমে শিরক হয়ে যায়। কারণ সে বাতাসকে এই মনে করে গালি দিয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সেটা নিজস্ব ক্ষমতা বলে কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা উপকার করতে পারে।

(গ) সৃষ্টিকে গালি দেয়া হলে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, তার উপর গিয়েই গালি পতিত হয়। তিনি হলেন মহান আল্লাহ তা‘আলা।

অপর দিকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় বান্দা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরামর্শ মেনে চলবে, যেখানে তিনি বলেছেন, তোমরা যখন বাতাস প্রবাহিত হতে দেখো, তখন বলবে,

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

‘‘হে আল্লাহ! এ বাতাসের যা কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে অদিষ্ট হয়েছে ততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আর এ বাতাসের যা ক্ষতিকর, তাতে যে অমঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু ক্ষতি সাধনের ব্যাপারে সে আদিষ্ট হয়েছে তা থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই’’। বান্দা এভাবে বাতাসের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য তার স্রষ্টা, পরিচালক ও পরিবর্তনকারীর দিকে এভাবে আশ্রয় নিবে। এটিই হলো প্রকৃত তাওহীদ ও জাহেলী যামানার লোকদের আকীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী সঠিক আকীদা।

সকল ক্ষেত্রেই সদাসর্বদা মুমিনের অবস্থা এমন হওয়া চাই। সবকিছুই সে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দিবে। আল্লাহর কাছে সে সেটার কল্যাণ চাইবে এবং সেটার অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য তার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কিন্তু বাতাসকে দোষারোপ করবে না, গালি দিবে না এবং বাতাসের সঠিক ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে অন্য কোনো ব্যাখ্যাও করবে না।

বান্দা জেনে রাখবে যে, সৃষ্টি থেকে সে অপ্রিয় যা কিছুর সম্মুখীন হয়, তা কেবল আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারণ অনুযায়ী এবং বান্দার পাপ অনুযায়ী হয়ে থাকে। বান্দার পাপের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার উপর বিপদা-পদ ও মুছীবত চাপিয়ে দেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ﴾

 ‘‘তোমাদের উপর যে মসিবতই এসেছে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এসেছে। বহু সংখ্যক অপরাধকে তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন’’ (সূরা শূরা: ৩০) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ﴾

‘‘আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। ফলে তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন। পরে একে খ--বিখ- করেন এবং তুমি দেখতে পাও তা থেকে বারিধারা নির্গত হয়’’। (সূরা আর রূম: ৪৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ

‘‘আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৪০) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

يُقَلِّبُ اللَّهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِأُولِي الْأَبْصَارِ

‘‘আল্লাহ দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান। অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য এতে শিক্ষা রয়েছে’’। (সূরা আন নূর: ৪৪)

আসলে ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে। সুখ-দুঃখ উভয় অবস্থাতেই আল্লাহর প্রশংসা করা, আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা রাখা এবং তাওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা আবশ্যক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَبَلَوْنَاهُمْ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ‘‘আমি ভালো ও খারাপ অবস্থায় নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করতে থাকি, হয়তো তারা ফিরে আসবে’’। (সূরা আল আরাফ: ১৬৮) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

   ﴿وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ﴾

‘‘ফেরাউনের লোকদেরকে আমি কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসল হানিতে আক্রান্ত করেছি। এ উদ্দেশ্যে যে, হয়তো তারা উপদেশ গ্রহণ করবে’’। (সূরা আরাফ: ১৩০)

পৃথিবীতে অকল্যাণকর যা কিছু ঘটে, তার এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। সুতরাং ভালোভাবে জেনে রাখবে, যেসব অপ্রিয় বস্তুর সম্মুখীন সে হয়ে থাকে, তা কেবল তার গুনাহর কারণেই। এতে তার নিজেকেই দোষারোপ করা উচিত। যামানাকে কিংবা বাতাসকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট তাওবা করা আবশ্যক। কিন্তু কাফের, ফাসেক এবং মূর্খরা সৃষ্টিজগতের এসব বস্তুকে দোষারোপ করে থাকে। নিজের নাফ্সের হিসাব নেয় না এবং গুনাহ থেকে তাওবা করে না। যামানাকে দোষারোপ করে কোনো এক কবি বলেছেন,

   يا دهــر ويحك ما أبقيت لي أحــدا وأنت والــد سوء تأكـل الولــــدا

ওহে মহাকাল! অকল্যাণ হোক তোমার! তুমি আমার স্বজনদের মধ্যে কাউকে অবশিষ্ট রাখোনি। তুমিই অকল্যাণের মূল। তুমি এমন নিকৃষ্ট পিতা, যে তার সন্তানকে খেয়ে ফেলে। আরেক কবি বলেন,

قبحا لوجـهك يـا زمان كـــأنه وجـه لــه من كـل قــبح بــــرقع

ওহে যামানা! বিভৎস হোক তোমার চেহারা। তোমার চেহারা এত কুৎসিত, যাকে সমস্ত কুৎসিত পর্দা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে।

আমরা আল্লাহর কাছে এ ধরণের কথা বলা থেকে নিরাপত্তা কামনা করছি এবং দীনের সঠিক জ্ঞান প্রার্থনা করছি।


[1]. আমিই যুগ বা মহাকাল- এ কথা থেকে বুঝা যায় না যে, الدهر দাহর আল্লাহর একটি নাম। কেননা হাদীছের শেষাংশে এর ব্যাখ্যা বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর হাতেই যুগের পরিবর্তনসহ সকল কিছুর ব্যবস্থাপনা, তিনিই দিন-রাত পরিবর্তন করেন।

[2]. সহীহ: তিরমিযী, অধ্যায়: বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ। হাদীছ নং-২২৫২।