লগইন করুন
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স) যেভাবে ওযু করতেন তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো। ক্রমানুসারে এসব কাজের মধ্যে ওযুর ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব সবই রয়েছে। তবে সর্বাগ্রে মিসওয়াক করে নেওয়া উত্তম।
১. নিয়ত করা
নিজেকে পবিত্র করাই ওযূ করার উদ্দেশ্য, এরূপ সংকল্প করবে। আর অন্তরের এ ইচ্ছাটি এমনভাবে পোষণ করবে যে, এ ওযূর উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন । সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসটিতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “সকল আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের পরিশুদ্ধতার উপর।” নিয়ত সহীহ হলে আমলও সহীহ। আর নিয়তে গড়বড় থাকলে আমল কবুল হয় না। তবে মনে রাখতে হবে যে, নিয়ত কখনই মুখে উচ্চারণ করতে হয় না, নাউয়াইতু আন..., বলা লাগে না। কারণ, নিয়ত অর্থই হলো মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। এটা অন্তরের কাজ, জিহ্বার কাজ নয়।
২. বিসমিল্লাহ বলা
নিয়তের পরের কাজই হলো ‘বিসমিল্লাহ' বলা । আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যার ওযূ নাই তার নামায হবে না, আর যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ' বলেনি তার ওযূ হলো না।” (আবু দাউদ: ১০১, ইবনে মাজাহ: ৩৯৮) অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (স) ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ' বলতেন । (তিরমিযী: ২৪)
৩. হাত ধোয়া
তারপর তিনি (স) দু’হাত কজি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করতেন । (বুখারী: ১৬৪, ১৮৫) হাত ধোয়ার সময় তিনি এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে খিলাল করতেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) আঙুলে আংটি থাকলে সেটা নাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতেন। (দারা কুতনী, ইবনে মাজাহ)
মেয়েদের হাতে-কানে গহনা থাকলে তা নাড়িয়ে সেই স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে, যাতে কোন অংশ শুকনো না থাকে।
৪. কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে ভালোভাবে তিন বার কুলি করবে এবং আবার ডান হাতে নাকে পানি দিয়ে বাম হাতে তিন বার ভালোভাবে নাক ঝেড়ে সাফ করে নেবে। (আহমদ, নাসাঈ) প্রত্যেক বারই নাকে নতুন করে পানি দিতে হবে। রোযাদার না হলে তিন বারই গড়গড়া করে কুলি করবে । নাক দিয়ে পানি টেনে নিয়ে বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে ।
৫. মুখমণ্ডল ধোয়া
অতঃপর দৈর্ঘ্যে কপালের উপরিভাগের মাথার চুলের নিচু হতে থুতনির নিচে দাড়ির নিম্নাংশ পর্যন্ত এবং প্রস্থে এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত দুই কানের পাশ দিয়ে পূর্ণ মুখমণ্ডল ভালোভাবে তিন বার ধৌত করতে হবে (দেখুন বুখারী: ১৮৫, আবু দাউদ: ১৪৫)। তারপর তিনি (স) দাড়ির ভেতরে পানি দিয়ে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করতেন (তিরমিযী, আবু দাউদ)। মহিলাদের কপালে টিপ থাকলে এটা না সরানো পর্যন্ত ওযু হবে না।
৬. কনুই পর্যন্ত হাত ধোয়া
এবার ডান হাতে পানি দিয়ে ডান বাহুর উপর গড়িয়ে দিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলের মাথা হতে কনুইর নিচ পর্যন্ত ঘষামাজা করে করে ধুইবে এবং আঙ্গুল খিলাল করবে। ঠিক এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। (বুখারী: ১৬৪, মুসলিম: ২২৬, ২৪৬, ইবনে খুযাইমা: ১১৮)
৭. মাথা মাসেহ করা
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) দু’হাত ভিজিয়ে একবার মাথা মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় তিনি দু'হাতের আঙ্গুল এক জায়গায় মিশিয়ে সামনের দিক হতে চুলের উপর দিয়ে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পেছন থেকে উভয় হাত টেনে সেখান থেকে শুরু করেছিলেন আবার সেখানে নিয়ে যেতেন। (বুখারী: ১৮৫, মুসলিম: ২৩৫) তারপর আবার হাত ভিজিয়ে শাহাদাত আঙ্গুল দু’টি দিয়ে দুই কানের ভেতরের দিকে কানের ভঁজে ভাঁজে ঘোরাবে এবং দুই বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দুই কানের পিঠ অর্থাৎ বাইরের অংশ মাসেহ করবে। (আবু দাউদ: ১২১, ১২৩, নাসাঈ: ৯০)। তবে ঘাড় মাসেহ করবে না। যে রেওয়ায়াতের মাধ্যমে ঘাড় মাসেহ করার কাজটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি সম্পর্কে ইমাম নববী (র) বলেছেন, এটি একটি জাল হাদীস, অর্থাৎ মানুষের বানোয়াট কথা । ঘাড় মাসেহ করার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই। রাসূলুল্লাহ (স) ওযূতে কখনোই ঘাঢ় মাসেহ করতেন না । তাই আমরাও তা করবো না ।
৮. পা ধৌত করা
অতঃপর ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা হতে গোড়ালি ও টাখনু পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে । (মুসলিম: ২৪৬) বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা তিরমিযী, আবু দাউদ) পায়ের আঙ্গুল খিলাল করবে (মিশকাত: ৪০৬, ৪০৭)। এরপর এ নিয়মেই বাম পা ধৌত করবে।
৯. ওযূ শেষে দু'আ পড়া
ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যখন কেউ উত্তমরূপে ও পূর্ণভাবে ওযু করে নিমের এ দু'আটি পড়ে তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খুলে যায়, ফলে সে ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে সেটি দিয়েই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে । এ দু'আটি হলো,
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” (মুসলিম: ২৩৪, ২৩৫)
দুআটি পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানো সুন্নাত নয়। কেননা, আকাশের দিকে তাকানোর ব্যাপারে যে বর্ণনাটি প্রচলিত সে হাদীসটি সহীহ নয় । ওযু শেষে এ দু'আটি পড়াও সুন্নাত
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বেশি বেশি তাওবাকারী এবং অধিকতর পাক-পবিত্র লোকদের মধ্যে গণ্য করে দাও।” (তিরমিযী: ৫৫)।
১০. তাহিয়্যাতুল ওযূ নামায পড়া
উকবা ইবনে আমের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,
“যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, অতঃপর দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর দিকে রুজু করে দুই রাকাআত (তাহিয়্যাতুল ওযূর) নামায আদায় করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম: ২৩৪)।
আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (স) একদিন ফজরের সালাতের সময় সাহাবী বেলাল (রা)-কে বললেন, “হে বেলাল! (আমি যখন মিরাজে গেলাম তখন) জান্নাতে তোমার জুতার খটখট আওয়াজ শুনতে পেয়েছি (অর্থাৎ তুমি যেন বেহেশতে হাঁটাহাঁটি করছ) বলতো তুমি এমন কী আমল করেছ যা তোমাকে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে বেশি আশান্বিত করে? উত্তরে বেলাল (রা) বলেন, আমি দিনে বা রাতে যখনই ওযু বা গোসল করি তখনই (তাহিয়্যাতুল ওযূর) সালাত আদায় করি।” (বুখারী: ১১৪৯)