লগইন করুন
জাহান্নামের আগুন কত গরম ও জ্বালাময় হবে, সে কথা কুরআন বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছে। যেমনঃ
وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ (8) فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ (9) وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ (10) نَارٌ حَامِيَةٌ (11)
অর্থাৎ, কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ। কিসে তোমাকে জানাল, তা কি? তা অতি উত্তপ্ত অগ্নি। (কারিআহঃ ৮-১১)
وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ (41) فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ (42) وَظِلٍّ مِّن يَحْمُومٍ (43) لَّا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ (44)
অর্থাৎ, আর বাম হাত-ওয়ালারা, কত হতভাগা বাম হাত-ওয়ালারা! (যাদেরকে বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে।) তারা থাকবে অতি গরম বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে। কালোবর্ণ ধোয়ার ছায়ায়। যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়। (ওয়াক্বিআহঃ ৪১-৪৪)।
বলা বাহুল্য, জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত। তার বাতাসও অতিশয় উষ্ণ। তার পানিও অতিরিক্ত গরম। আগুনকে ঠাণ্ডা করার জিনিসগুলিও গরম।
জাহান্নামে যে ছায়ার কথা বলা হয়েছে, সে ছায়ার বিবরণ এসেছে অন্য স্থানে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ (28) انطَلِقُوا إِلَىٰ مَا كُنتُم بِهِ تُكَذِّبُونَ (29) انطَلِقُوا إِلَىٰ ظِلٍّ ذِي ثَلَاثِ شُعَبٍ (30) لَّا ظَلِيلٍ وَلَا يُغْنِي مِنَ اللَّهَبِ (31) إِنَّهَا تَرْمِي بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ (32) كَأَنَّهُ جِمَالَتٌ صُفْرٌ (33)
অর্থাৎ, সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য। তোমরা যাকে মিথ্যাজ্ঞান করতে, চল তারই দিকে। চল তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে। যে ছায়া শীতল নয় এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে। এটা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্টালিকা তুল্য। ওটা হলুদ বরণ উটদলের মত। (মুরসালাতঃ ২৮-৩৩)
জাহান্নামের আগুন কতটা প্রভাবশালী হতে পারে, সে কথা রয়েছে আর এক স্থানে,
سَأُصْلِيهِ سَقَرَ (26) وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ (27) لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ (28) لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ (29)
অর্থাৎ, আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাক্কার (জাহান্নামে)। কিসে তোমাকে জানাল, সাক্বার কী? ওটা তাদেরকে (জীবিত অবস্থায় রাখবে না, আর (মৃত অবস্থায়ও) ছেড়ে দেবে না। ওটা দেহের চামড়া দগ্ধ করে দেবে। (মুদ্দাসসিরঃ ২৬-২৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
نَزَّاعَةً لِّلشَّوَىٰ
অর্থাৎ, যা দেহ হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। (মাআরিজঃ ১৬)
দুনিয়ার আগুনই সহ্য করার মত নয়, তাহলে জাহান্নামের আগুন কত অসহনীয় হতে পারে, তা অনুমেয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমাদের এই আগুন জাহান্নামের সত্তর অংশের এক অংশ।” বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! (দুনিয়ার আগুনই) তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, “তাতে উনসত্তর অংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক অংশের উত্তাপ এই আগুনের মতো।” (বুখারী-মুসলিম)।
উপরন্তু সে আগুন স্তিমিত হওয়ার নয়, নির্বাপিত হওয়ার নয়। তা বৃদ্ধি বৈ হ্রাস পাবে না। মহান আল্লাহ বলেছেন,
فَذُوقُوا فَلَن نَّزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا
অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা আস্বাদন কর, এখন তো আমি শুধু তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করতে থাকব। (নাবাঃ ৩০)
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَىٰ عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ
অর্থাৎ, পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। ওদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে ওরা মরবে এবং ওদের জন্য জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (ফাত্বিরঃ ৩৬)।
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا ۖ مَّأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا
অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়; অন্ধ, বোবা ও কালা করে। তাদের আবাসস্থল। জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে, তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নি বৃদ্ধি করে দেব। (বানী ইসরাঈলঃ ৯৭)
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُم بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করে, তাদেরকে আমি অচিরেই আগুনে প্রবিষ্ট করব। যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে, তখনই ওর স্থলে নূতন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (নিসা ৫৬)।
পৃথিবীর এই গ্রীষ্মতাপকে জাহান্নামেরই তাপ বলা হয়েছে।
নবী (ﷺ) বলেন, “গ্রীষ্মের এই প্রখর উত্তাপ দোযখের অংশ। অতএবগরম কঠিন হলে নামায ঠান্ডা (দেরী) করে পড়।” (বুখরী ৫৩ ৯নং মুসলিম ৬১৫)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “একদা জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে। অভিযোগ জানিয়ে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে! সুতরাং তিনি তাকে দু’টি শ্বাস নেওয়ার অনুমতি দিলেন; একটি শীতকালে ও অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা তারই কারণে প্রখর গ্রীষ্ম ও প্রচণ্ড শীত অনুভব করে থাক।” (বুখারী-মুসলিম)।
জাহান্নামের অতিথিদের আগমনের সময় হলে তার পূর্বে তাকে দস্তুরমতো প্রজ্বলিত করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا الْجَحِيمُ سُعِّرَتْ (12) وَإِذَا الْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ (13) عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا أَحْضَرَتْ (14)
অর্থাৎ, জাহান্নামের অগ্নিকে যখন প্রজ্বলিত করা হবে এবং জান্নাতকে যখন নিকটবর্তী করা হবে। তখন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানবে, সে কি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। (তাকবীরঃ ১২-১৪)।