লগইন করুন
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ وَلَا تَنْقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ
‘‘আর যখনই তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো অঙ্গীকার করো তখন আল্লাহ্র সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং নিজেদের কসম দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করোনা। তোমরা তো আল্লাহ্কে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’’। (সূরা নাহলঃ ৯১)
ব্যাখ্যাঃ হাফেয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে যে সমস্ত হুকুম করেছেন, এই আয়াতের হুকুমও সেগুলোর অন্তর্ভূক্ত। এখানে তিনি ওয়াদা-অঙ্গিকার ও চুক্তিসমূহ পূরণ করার এবং কসম সমূহের হেফাজত করার আদেশ দিয়েছেন। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ তোমরা দৃঢ়ভাবে শপথ করার পর তা ভেঙ্গে ফেলোনা। এখানে ঐ সমস্ত আইমান তথা কসম উদ্দেশ্য, যা দুই পক্ষের ওয়াদা-অঙ্গিকার ও চুক্তি করার সময় সম্পন্ন হয়। কোনো ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য কিংবা কোনো খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যেই কসম খাওয়া হয়, এখানে তা উদ্দেশ্য নয়।
إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগতঃ এখানে ঐ সমস্ত লোকদেরকে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে, যারা কসম ও ওয়াদা-অঙ্গিকারের হেফাজত করেনা।
বুরাইদাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় কিংবা ছোট কোনো যুদ্ধে যখন সেনাবাহিনীতে কাউকে আমীর বা সেনাপতি নিযুক্ত করতেন, তখন তাকে ‘তাকওয়ার’ উপদেশ দিতেন এবং তার সাথে যেসব মুসলিম থাকতো তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার হুকুম করতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ
«اغْزُوا بِاسْمِ اللَّهِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ اغْزُوا وَ لاَ تَغُلُّوا وَلاَ تَغْدِرُوا وَلاَ تَمْثُلُوا وَلاَ تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلاَثِ خِصَالٍ أَوْ خِلاَلٍ فَأَيَّتَهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ يَجْرِى عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللَّهِ الَّذِى يَجْرِى عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَكُونُ لَهُمْ فِى الْغَنِيمَةِ وَالْفَىْءِ شَىْءٌ إِلاَّ أَنْ يُجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَسَلْهُمُ الْجِزْيَةَ فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَقَاتِلْهُمْ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلاَ تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَلاَ ذِمَّةَ نَبِيِّهِ وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ فَلاَ تُنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِى أَتُصِيبُ حُكْمَ اللَّهِ فِيهِمْ أَمْ لاَ»
‘‘তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করো। যারা আল্লাহর সাথে কুফুরী করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। তোমরা যুদ্ধ করো, কিন্তু খেয়ানত করোনা, বিশ্বাস ঘাতকতা করোনা। তোমরা শত্রুর নাক-কান কেটোনা বা অঙ্গহানি করোনা এবং কোনো শিশুকে হত্যা করোনা। তুমি যখন তোমার কোনো মুশরিক শত্রু বাহিনীর মোকাবেলা করবে, তখন তিনটি বিষয়ের দিকে তাদেরকে আহবান জানাবে। যে কোন একটি বিষয়ে তারা তোমার আহবানে সাড়া দিলে তা গ্রহণ করে নিও, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিও। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করো। যদি তারা তোমার আহবানে সাড়া দেয়, তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করে নিও। এরপর তাদেরকে তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দারুল মুহাজিরীনে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য আহবান জানাও। হিজরত করলে তাদেরকে একথা জানিয়ে দাও, মুহাজিরদের জন্য যে অধিকার রয়েছে, তাদেরও সে অধিকার আছে, সাথে সাথে মুহাজিরদের যা করণীয় তাদেরও তাই করণীয়।
আর যদি তারা হিজরতের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদেরকে বলে দিও যে, তারা গ্রাম্য সাধারণ মুসলিমের মর্যাদা পাবে। তাদের উপর আল্লাহর হুকুম-আহকাম জারি হবে। তবে গণীমত এবং ‘ফাই’ (যুদ্ধ ছাড়াই কাফের-মুশরিকদের নিকট থেকে যেই সম্পদ অর্জিত হয় তা) থেকে তারা কোনো অংশ পাবেনা। তবে তারা যদি মুসলিমদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে, সে কথা ভিন্ন। তখন গণীমতের অংশ পাবে।
তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তাহলে তাদের কাছে জিযিয়া কর দাবী করো। তারা যদি কর দিতে সম্মত হয়, তবে তা গ্রহণ করো, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করো।
কিন্তু যদি কর দিতে অস্বীকার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমীরকে বলতেনঃ তুমি যখন কোন দুর্গের লোকদেরকে অবরোধ করবে, তখন দূর্গের লোকেরা যদি চায় যে, তুমি তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মায় (হেফাযত ও নিরাপত্তায়) রেখে দিবে, তবে তুমি কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মায় (হেফাযতে) রাখবেনা বরং তোমার এবং তোমার সঙ্গী-সাথীদের জিম্মায় রেখে দিও। কারণ, তোমার এবং তোমার সাথীদের জিম্মা (নিরাপত্তা) ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মা (নিরাপত্তা) ভঙ্গ করার চেয়ে অধিক সহজ।
আর তুমি যখন কোনো দূর্গের অধিবাসীদেরকে অবরোধ করবে, তখন তারা যদি চায়, তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের উপর ছেড়ে দিবে, তাহলে তুমি কখনই আল্লাহর হুকুমের উপর ছেড়ে দিবেনা; বরং তুমি তাদেরকে তোমার নিজের হুকুম মানতে বাধ্য করবে। কারণ তুমি জানো না যে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফায়সালা করতে পারবে কি না’’। ইমাম মুসলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[1]
ব্যাখ্যাঃ হাদীছের রাবী হচ্ছেন বুরায়দাহ ইবনুল হুসাইব আল-আসলামী। তাঁর পুত্র সুলায়মান তাঁর থেকে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় কিংবা ছোট কোনো যুদ্ধে যখন কাউকে সৈনিকদের আমীর বা সেনাপতি নিযুক্ত করতেনঃ এখান থেকে মাসআলা পাওয়া যায় যে, ইসলামী সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করা জরুরী এবং আমীরকে তাকওয়ার উপদেশ দেয়াও মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব।
ইমাম হারবী (রঃ) বলেনঃ যেই অভিযানের অশ্বারোহী সৈনিকের সংখ্যা চারশ কিংবা এর কাছাকাছি হয়, তাকে ‘সারিয়াহ’ বলা হয়। আর যেই অভিযানের সৈনিকের সংখ্যা এর উপরে হয় তাকে জাইশ বা গাযওয়া বলা হয়। তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর শাস্তি হতে বেঁচে থাকা।
আমীরকে অধিনস্ত সৈনিকদের সাথে ভালো আচরণ করার আদেশ দিতেনঃ অর্থাৎ আমীরের সাথে যে সমস্ত সাধারণ সৈনিক থাকতো, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করার আদেশ করতেন। তাদের সাথে নরম ব্যবহার করা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা, তাদের সাথে বিনয়ী হওয়া এবং তাদের উপর অহংকার না করা ইত্যাদি সবই উপদেশের আওতায় ছিল।
اغْزُوا بِاسْمِ اللَّهِ তোমরা আল্লাহর নামে যুদ্ধ করোঃ অর্থাৎ যখন যুদ্ধ শুরু করো, তখন আল্লাহর সাহায্য চাও এবং আল্লাহর জন্য তোমাদের নিয়তকে খালেস করে যুদ্ধ করো। সুতরাং با ‘বা’ হরফে জারটি الاستعانة (সাহায্য প্রার্থনা) এবং আল্লাহর উপর توكل (ভরসা) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ প্রত্যেক কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করোঃ এই বাক্যটি ব্যাপক অর্থে সকল কাফের, আহলে কিতাব এবং অন্যান্য যেসব লোক মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের সকলকেই শামিল করে। তাদের সকলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে হবে। তবে যাদের সাথে চুক্তি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবেনা। এমনি শিশু, নারী এবং গীর্জায় এবাদত রত পাদ্রীকে হত্যা করা যাবেনা।
وَ لاَ تَغُلُّوا وَلاَ تَغْدِرُوا وَلاَ تَمْثُلُوا তোমরা খেয়ানত করোনা, বিশ্বাসঘাতকতা করোনা এবং বিকলাঙ্গ করোনাঃ এখানে الغلول অর্থ হচ্ছে গণীমতের মাল বন্টন হওয়ার আগেই তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَغُلَّ وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
‘‘আর খেয়ানত করা কোনো নবীর কাজ নয়। আর যে লোক খেয়ানত করবে সে কিয়ামতের দিন নিজের খেয়ানত করা জিনিষ নিয়ে হাযির হবে। আর প্রত্যেকেই তার উপার্জনের পুরোপুরি কর্মফল পেয়ে যাবে এবং কারো প্রতি কোনো অন্যায় করা হবেনা’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬১)
الغدر অর্থ হচ্ছে চুক্তি ও অঙ্গিকার ভঙ্গ করা। মুছলা অর্থ হত্যা করার পর নিহত ব্যক্তির চেহারা বিকৃত করা। যেমন নাক ও কান কেটে ফেলা এবং মৃতদেহ নিয়ে খেল-তামাশা করা।
وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلاَثِ خِصَالٍ أَوْ خِلاَلٍ তুমি যখন তোমার মুশরিক শত্রু বাহিনীর মুকাবেলা করবে, তখন তিনটি বিষয়ের দিকে তাদেরকে আহবান জানাবেঃ এখানে এক বর্ণনায় خصال শব্দ এসেছে এবং অন্য বর্ণনায় خلال শব্দ এসেছে। উপরোক্ত হাদীছে উভয় শব্দ উল্লেখ করে মাঝখানে أو ‘অথবা’ হরফে আতফ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় রাবীর পক্ষ হতে সন্দেহ করা হয়েছে। তবে উভয় শব্দের অর্থ একই।
فَأَيَّتَهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عنهم তিনটি বিষয়ের কোনো একটি গ্রহণ করলে তুমি তাদের পক্ষ হতে তা গ্রহণ করো এবং যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকোঃ এখানে فأيتها শব্দটি أجابوا ফেল ‘ক্রিয়া’ দ্বারা মানসুব (যবরযুক্ত) হয়েছে।
ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ অতঃপর তুমি তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান জানাবেঃ সহীহ মুসলিমের সকল কপিতেই ثم সহ ثم ادعهم বাক্যটি এসেছে।
ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ এরপর তাদেরকে তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দারুল মুহাজিরীনে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য আহবান জানাওঃ অর্থাৎ মদীনায় চলে আসার আহবান জানাও। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি দারুল কুফরে থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তার জন্য সেখান থেকে হিজরত করা ওয়াজিব। এমনি কোনো দেশে যদি প্রকাশ্যে পাপকাজ করা হয় এবং গুনাহ্-এর কাজ বেড়ে যায়, তাহলে সেখান থেকেও হিজরত করা জরুরী। আলেমগণ তাদের কিতাবসমূহে এটি সুস্পষ্ট করেই বলেছেন।
فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا منها আর যদি তারা হিজরতের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করেঃ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে, কিন্তু জিহাদ করবেনা এবং গ্রাম্য অঞ্চল থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে আসবেনা, সে গণীমত ও ফাই-এর সম্পদ থেকে কোন অংশ পাবেনা।
فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَسَلْهُمُ الْجِزْيَةَ তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তাহলে তাদের কাছে জিযিয়া কর দাবী করোঃ এখানে ইমাম মালেক, তাঁর সাথীগণ এবং ইমাম আওযায়ী (রঃ)এর দলীল রয়েছে। তারা বলেনঃ প্রত্যেক কাফেরের নিকট থেকেই জিযিয়া কর আদায় করা হবে। চাই সে আরব হোক কিংবা অনারব হোক, আহলে কিতাব হোক বা অন্যান্য দ্বীনের অনুসারী হোক।
জিযিয়ার পরিমাণ নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ স্বর্ণের মালিকদের উপর চার দীনার এবং রৌপ্যের মালিকদের উপর চল্লিশ দিরহাম কর ধার্য করা হবে।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ ধনী-গরীব সকলের উপর এক দীনার ধার্য করা হবে। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেনঃ ধনী লোকের উপর ৪৮ দিরহাম, মধ্যবিত্তের উপর ২৮ দিরহাম এবং গরীব লোকের উপর ১২ দিরহাম নির্ধারণ করা হবে। এটি আহমাদ বিন হান্বাল (রঃ)এরও অভিমত।
ইমাম মালেক এবং সকল আলেমের মতে জিযিয়া শুধু স্বাধীন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপরই ধার্য করা হবে। অন্য লোকদের উপর নয়। জিযিয়া (কর) শুধু ঐ সমস্ত অমুসলিমদের থেকেই আদায় করা হবে, যারা মুসলিমদের করতলগত। যে অমুসলিম বাড়ি-ঘর নিয়ে মুসলিমদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে তার কাছ থেকে জিযিয়া আদায় করা হবেনা; বরং তাকে মুসলিমদের অঞ্চলে স্থানান্তর করতে হবে অথবা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে।
وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ الخ আর তুমি যখন কোনো দূর্গের অধিবাসীদেরকে অবরোধ করবে, তখন তারা যদি চায়, তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের উপর ছেড়ে দিবে, তাহলে তুমি কখনই আল্লাহর হুকুমের উপর ছেড়ে দিবেনা; বরং তুমি তাদেরকে তোমার নিজের হুকুম মানতে বাধ্য করবে। কারণ তুমি জাননা যে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফায়সালা করতে পারবে কি নাঃ যেসব ফিকাহ এবং উসুলবিদ বলেনঃ মতভেদপূর্ণ ইজেতহাদী মাসায়েলের ক্ষেত্রে মাত্র একজন মুজতাহিদের মতই সঠিক হবে, এখানে তাদের মতের পক্ষে দলীল পাওয়া যায়। ইমাম মালেক এবং অন্যদের প্রসিদ্ধ মত এটিই।
وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ الخ তুমি যখন কোন দুর্গের লোকদেরকে অবরোধ করবে, তখন দূর্গের লোকেরা যদি চায় যে, তুমি তাদেরকে তোমার ও তোমার সাথীদের জিম্মায় রেখে দাও, তবে তুমি কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মায় রাখবেনা বরং তোমার এবং তোমার সঙ্গী-সাথীদের জিম্মায় রেখে দিও। কারণ, তোমার এবং তোমার সাথীদের জিম্মা ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিম্মা ভঙ্গ করার চেয়ে অধিক সহজঃ الذمة যিম্মা অর্থ দায়ভার গ্রহণের অঙ্গিকার। تخفر অর্থ تنقض ভঙ্গ করা। যখন কেউ অঙ্গিকার ভঙ্গ করে তখন বলে أخفرت الرجل আমি তার সাথে চুক্তি ও অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছি। আর যদি বলা হয় خفرته তাহলে অর্থ হবে আমি তাকে নিরাপত্তা দিয়েছি ও তার হেফাযত করেছি। কেননা যে ব্যক্তি কাউকে নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গিকার করবে, তার ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে যে, সেই নিরাপত্তামূলক অঙ্গিকার ভেঙ্গেও ফেলতে পারে। সুতরাং কাউকে নিজের যিম্মায় (নিরাপত্তায়) রেখে সেই যিম্মা ভঙ্গ করা আল্লাহ্ তাআলার যিম্মায় রেখে তা ভঙ্গ করার চেয়ে অধিক সহজ। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) আল্লাহর যিম্মা, নবীর যিম্মা এবং মুমিনদের যিম্মার মধ্যে পার্থক্য। আল্লাহর যিম্মা (অঙ্গীকার ও নিরাপত্তা) ভঙ্গ করার অপরাধ মানুষের যিম্মা ভঙ্গ করার অপরাধের চেয়ে অনেক বড়।
২) দু’টি বিপদজনক বিষয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বিপদজনক বিষয়টি গ্রহণ করার অনুমতি রয়েছে।
৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আদেশঃ তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করো।
৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো নির্দেশ হচ্ছে, যারা আল্লাহর সাথে কুফুরী করে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।
৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমঃ তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।
৬) আল্লাহর হুকুম এবং আলেমদের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
৭) প্রয়োজন বশতঃ সাহাবীর জন্য এমন ফয়সালা করা জায়েয, যার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয় যে, তা আল্লাহর হুকুমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না।