লগইন করুন
কুতাইলা হতে বর্ণিত আছে, এক ইহুদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললঃ আপনারাও আল্লাহর সাথে শির্ক করে থাকেন। কারণ আপনারা বলে থাকেনঃ ماشاء الله وشئت ‘‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’’। আপনারা আরো বলে থাকেন, والكعبة ‘‘কাবার কসম’’। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুসলিমদের মধ্যে যারা কসম করতে চায়, তারা যেন বলে, ورب الكعبة ‘‘কাবার রবের কসম’’। আর যেন এ কথা বলেঃ ماشاء الله ثم شئت ‘‘আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর আপনি যা চেয়েছেন’’। ইমাম নাসায়ী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন।
ব্যাখ্যাঃ কুতাইলা বিনতে সাইফী ছিলেন একজন হিজরতকারীনী আনসারী মহিলা সাহাবী। নাসাঈতে তাঁর থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ রয়েছে। অত্র অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছটিই সেটি। আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াসার আল-জুফী তাঁর থেকে উহা বর্ণনা করেছেন।
এই হাদীছে ইংগিত পাওয়া যায় যে, সত্যকে কবুল করতে হবে, যার কাছেই তা পাওয়া যাক না কেন। কাবাসহ আল্লাহ ব্যতীত অন্যসব বস্ত্তর নামে শপথ করা নিষেধ। অথচ কাবা হচ্ছে আল্লাহর সেই সম্মানিত ঘর, যাকে উদ্দেশ্য করে হজ্জ ও উমরার সফর করা ফরয।
আপনি দেখে থাকবেন যে, কাবার নামে কসম করার ক্ষেত্রে এবং কাবার কাছে দুআ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুমের কতই না বিরোধীতা করা হচ্ছে! মাকামে ইবরাহীমের ক্ষেত্রে কথা একই। দূর-দূরান্ত হতে এবং মক্কার আশপাশের এলাকাগুলো থেকে আগত হাজীদের খুব অল্প লোকই এখানে এসে শরীয়তের হুকুম লংঘন হতে বেঁচে থাকতে পারে। শুধু মক্কাতেই যে এমনটি হয়, তা নয়; বরং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানকে কেন্দ্র করেও শরঈ মুখালাফাত হচ্ছে।[1] আল্লাহ তাআলা কাবার সম্মান এভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন যে, সামর্থবান মুসলিমের উপর এই ঘরের হজ্জ করাকে ইসলামের অন্যতম রুকন নির্ধারণ করেছেন, এর নিকটে এবাদত করাকে উত্তম আমল বানিয়েছেন এবং একে অসংখ্য ফযীলত দান করেছেন। কাবা ঘরের নিকট যা শরীয়ত সম্মত তা হচ্ছে এই ঘরের তাওয়াফ করা এবং কাবার দিকে ফিরে নামায পড়া। কিন্তু কাবার নামে কসম করা যাবেনা। কেননা কাবা বা অন্য কোন বস্ত্তর নামে শপথ করা আল্লাহর এবাদতে শির্ক করার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার ৫৯ নং আয়াতে বলেনঃ
فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَنْزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا رِجْزًا مِنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
‘‘কিন্তু যে কথা বলা হয়েছিল যালেমরা তাকে বদল করে অন্য কিছু করে ফেললো৷ শেষ পর্যন্ত যুলুমকারীদের উপর আমি আকাশ থেকে আযাব নাযিল করলাম৷ এ ছিল তারা যে নাফরমানি করছিল তার শাস্তি’’।[2]
আপনারাও আল্লাহর সাথে শির্ক করে থাকেন। আপনারা বলে থাকেনঃ ماشَاء الله وشِئْتَ ‘‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেনঃ বান্দার যদিও ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু বান্দার সেই ইচ্ছার স্বাধীনতা আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
‘‘তোমরা আল্লাহ্ রাববুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারনা। (সূরা তাকভীরঃ ৩০) এই আয়াতে এবং এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছে তাকদীরে অবিশ্বাসী কাদরীয়া ও মুতাযেলা সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা বান্দার জন্য এমন ইচ্ছা সাব্যস্ত করে, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের থেকে ইচ্ছা করেন না। অর্থাৎ তারা বান্দার এমন ইচ্ছা রয়েছে বলে দাবী করেন, যা আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধী। অথচ আল্লাহ তাআলা সূরা কামারের ৪৯ নং আয়াতে বলেনঃ إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ‘‘আমি প্রত্যেক বস্ত্তকে একটি পরিমাপ অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি’’। আল্লাহ তাআলা সূরা ফুরকানের ২ নং আয়াতে বলেনঃ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا ‘‘তিনি প্রত্যেক বস্ত্তকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তার একটি তাকদীর নির্ধারণ করে দিয়েছেন’’। বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীছের কিতাবে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ فَجَرَى بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ القِياَمَةِ»
‘‘আল্লাহ্ তাআলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখ। অতঃপর কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে তা লিখে ফেলল’’।[3]
নাসাঈ শরীফে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে আরো একটি হাদীছে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যে বললঃماشاء الله وشئت ‘‘আপনি এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন’’। তিনি তখন বললেনঃ أجعلتنى لله ندا؟ ‘‘তুমি কি আল্লাহর সাথে আমাকে শরীক বানিয়ে ফেললে?’’ আসলে আল্লাহ একাই যা ইচ্ছা করেছেন, তাই হয়েছে’’।[4] এই হাদীছ পূর্বে বর্ণিত বিষয়কেই সুস্পষ্ট করছে। এভাবে বলা শির্ক। কেননা واو দ্বারা আতফ করা হলে মাতুফ এবং মাতুফ আলাইহিকে সমান করে দেয়া হয়।[5] কেননা واوকে গঠন করা হয়েছে দু’টি বিষয়কে একই হুকুমে একত্রিত করার জন্য। সুতরাং রুবুবীয়াত ও উলুহীয়াতের কোনো বিষয়েই মাখলুককে খালেকের মত করা যাবেনা। যদিও সেটি খুব মামুলী বিষয় হয়। যেমন পূর্বে মাছির ঘটনায় এমন দুই ব্যক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, যাদের একজন মূর্তির জন্য মাছি উৎসর্গ করে জাহান্নামী হয়েছিল এবং অন্যজন মূর্তির জন্য মাছি পেশ করতে অস্বীকার করার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছিল।
উপরোক্ত হাদীছে প্রমাণ মিলে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওহীদের চার দেয়ালের হেফাযত করেছেন। অর্থাৎ তাওহীদের সীমানা সংরক্ষণ করেছেন। যে সকল কথা ও কাজে শির্কের সম্ভাবনা রয়েছে তার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বৈপিত্রেয় ভাই তোফায়েল থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, কয়েকজন ইহুদীর কাছে এসেছি। আমি তাদেরকে বললামঃ তোমরা অবশ্যই একটা ভাল জাতি, যদি তোমরা উযাইরকে আল্লাহর পুত্র না বলতে! তারা বললঃ তোমরাও অবশ্যই একটি ভাল জাতি। যদি তোমরাماشاء الله وشاء محمد আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন, এ কথা না বলতে! অতঃপর নাসারাদের কিছু লোকের কাছে আমি গেলাম এবং বললামঃ ‘ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র’- এ কথা না বললে তোমরা একটি উত্তম জাতি হতে। তারা বললঃ তোমরাও একটি ভাল জাতি হতে, যদি তোমরা এ কথা না বলতে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন। সকালে এ স্বপ্নের খবর যাকে পেলাম তাকে বললাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম এবং তাকে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেনঃ এ স্বপ্নের কথা কি আর কাউকে বলেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করলেন। তারপর বললেনঃ তোফায়েল একটা স্বপ্ন দেখেছে, যার খবর তোমাদের মধ্যে যাকে বলার বলেছে। তোমরা এমন একটি কথা বলছ, যা থেকে আমিও তোমাদেরকে নিষেধ করতে চেয়েছিলাম, তবে অমুক অমুক কারণ আমাকে তা বলতে বাধা প্রদান করেছে। অতএব তোমরা এভাবে বলবেনা যে, ماشاء الله وشاء محمد ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন; বরং তোমরা বলঃ ماشاء الله وحده আল্লাহ একাই যা ইচ্ছা করেছেন।
ব্যাখ্যাঃ এখানে তোফাইল বলতে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার সতালো ভাই তোফাইল বিন আব্দুল্লাহ বিন সাখবারা উদ্দেশ্য। ইবনে মাজাহ শরীফে তার থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিতাবের লেখক এই অধ্যায়ে সেই হাদীছটিই উল্লেখ করেছেন।
এটি একটি সত্য স্বপ্ন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে সত্যায়ন করেছেন এবং সে মুতাবেক আমলও করেছেন। অতঃপর তিনি ماشاء الله وشاء محمد আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মদ যা ইচ্ছা করেছেন- এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন বলে ماشاء الله وحده আল্লাহ একাই যা ইচ্ছা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওহীদের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং ছোট-বড় ও কমবেশী সকল প্রকার শির্ক থেকে সাবধান সতর্ক করেছেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই উম্মতের মধ্যে কত বড় শির্ক সংঘটিত হয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য করুন! এই উম্মতের লোকেরা একমাস, দুই মাস বা এর চেয়ে আরো অধিক দূরত্ব থেকে মৃত অলী-আওলীয়াদেরকে আহবান করছে। তারা ধারণা করছে, মৃতরা আহবান কারীদের উপকার ও অপকার করতে পারে, আহবান কারীদের আহবান শুনে এবং বহু দূর থেকেও তারা তাদের ডাকে সাড়া দেয়। সেই সাথে তারা মৃতদেরকে আল্লাহর রাজত্বে, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ইলমে গায়েব এবং রুবুবীয়াতের অন্যান্য বিষয়ে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করছে। তারা তাদের নবীকে, নবীর সুন্নাতকে, তাঁর আদেশ ও নিষেধকে এমনভাবে ছেড়ে দিয়েছে, যেন তারা কুরআন ও সুন্নাতের কথা কোন দিনই শুনেনি।
আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে শির্ক থেকে বারণ করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। তিনি লোকদেরকে তাওহীদ ও এককভাবে আল্লাহর এবাদতের জন্য আহবান করেই যাচ্ছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ মুসলিমদের দ্বীনকে তাদের জন্য পূর্ণতা দিয়েছেন এবং স্বীয় নেয়ামতকে তাদের জন্য পূর্ণ করেছেন। কিন্তু লোকেরা পুনরায় পরিপূর্ণ দ্বীন ও হেদায়াত থেকে গোমরাহীর দিকে এবং নাজাতের পথ ছেড়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়েছে। তোফায়েলের ঘটনা যদিও ঘুমের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন যে, সেটি সত্য। এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) ছোট শিরক সম্পর্কে ইহুদীরাও অবগত রয়েছে।
২) কোনো বিষয়ে যখন মানুষের প্রবৃত্তি সামনে চলে আসে, তখন সে স্বীয় প্রবৃত্তি অনুসারেই বিষয়টিকে বুঝতে চায়।
৩) লোকেরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে ماشاء الله وشئت আপনি যা চেয়েছেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন বলল, তখন তিনি এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন এভাবে বললে শির্ক হয়। তিনি এভাবে প্রতিবাদ করেছেন যেঃ أجعلتنى لله ندا তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে দিলে? তাহলে সে ব্যক্তির অবস্থা কী হবে, যে ব্যক্তি বলে, يا أكرم الخلق ما لي من ألوذبه سواك ‘‘হে সৃষ্টির সেরা! আপনি ছাড়া আমার আশ্রয়দাতা কেউ নেই এবং এ কবিতাংশের পরবর্তী দুটি লাইন। উপরোক্ত কথা বললে অবশ্যই বড় ধরনের শির্ক হবে।[6]
৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীঃ يمنعنى كذا وكذا আমাকে অমুক অমুক বিষয় নিষেধ করতে বারণ করেছে, এ দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা শির্কে আকবার তথা বড় শির্কের অন্তর্ভূক্ত নয়।
৫) ভালো ও সত্য স্বপ্ন অহীর শ্রেণীর্ভূক্ত।
৬) স্বপ্ন শরীয়তের কোনো কোনো বিধান জারির কারণ হতে পারে।[7]
[2] - অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কাবা ঘরের সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে বলেছেন তার তাওয়াফ করার মাধ্যমে এবং তার নিকট অন্যান্য এবাদতের মাধ্যমে। কিন্তু যালেমরা তার স্থলে কাবার নামে শপথ করা, কাবার নিকট দুআ করাসহ অন্যান্য শির্কী ও বিদআতী কাজ-কর্ম শুরু করেছে।
[3] - অন্য হাদীছে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ»
‘‘আল্লাহ্ তাআলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখবো? আল্লাহ্ তাআলা বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্ত্তর তাকদীর লিখো’’। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ আবওয়াবুল কাদ্র। ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। তবে ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলা সহীহাঃ (১/৩০৭)
[4] - হাদীছটির একাধিক শাওয়াহেদ থাকার কারণে সহীহ। দেখুনঃ কুররাতুল উয়ুন, পৃষ্ঠা নং- ৩৪৭।
[5] - বিষয়টি পরিস্কার করে বুঝানোর জন্য আরো বলা যেতে পারে যে, دخل خالد وأحمد في الغرفة অর্থাৎ খালেদ এবং আহমাদ রুমে প্রবেশ করেছে। এ কথা তখনই এভাবে বলা যথার্থ হবে, যখন জানা যাবে যে, তারা উভয়েই একই সময় একই সাথে রুমে প্রবেশ করেছে।
[6] - এখানে সম্মানিত ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব সুফীদের ঐ দলের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যারা মনে করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সৃষ্টি জগতের কুববা তথা গম্বুজ। তিনি আরশে সমাসীন। সাত আসমান, সাত যমীন আরশ-কুরসী, লাওহে মাহফুয, কলম এবং সমগ্র সৃষ্টি জগত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। বুসাইরীর কাসীদাতুল বুরদার যে দুইটি লাইনে তাদের শির্কী আকীদার বিবরণ এসেছে, লেখক এখানে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। লাইন দুইটির অনুবাদ ও ব্যাখা নিম্নরূপঃ
فإنَّ من جودك الدنيا وضرَّتها + ومن علومك علم اللوح والقلمِ
বুসেরী বলছেনঃ ‘‘হে নবী! আপনার দয়া থেকেই দুনিয়া ও আখেরাত সৃষ্টি হয়েছে। আর আপনার জ্ঞান থেকেই লাওহে মাহফুয ও কলমের জ্ঞান উদ্ভাসিত হয়েছে’’।
يا أكرم الخلق ما لي من ألوذ به + سواك عند حلول الحوادث العمم
‘‘হে সৃষ্টির সেরা সম্মানিত! আমার জন্য কে আছে আপনি ব্যতীত, যার কাছে আমি কঠিন বালা মসীবতে আশ্রয় নিবো?’’ (নাউযুবিল্লাহে)
সুফীবাদের সমর্থক ভাইদের কাছে প্রশ্ন হলো বুসেরীর কবিতার উক্ত লাইন দু’টির মধ্যে যদি শির্ক না থাকে, তাহলে আপনারাই বলুন শির্ক কাকে বলে? পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাসে শির্ক মিশ্রিত এ জাতীয় কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এগুলো পাঠ করে ইসলামী শিক্ষার নামে শির্ক ও বিদআতী শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষকগণ যদি শির্ক মিশ্রিত সিলেবাস নির্ধারণ করে তা দিয়ে আমাদের জাতি গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তাহলে আমরা তাওহীদের সঠিক শিক্ষা পাবো কোথায়?
সুফীদের কতিপয় লোক আরো বিশ্বাস করে যে, তিনি হচ্ছেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি। এটিই প্রখ্যাত সুফী সাধক ইবনে আরাবী ও তার অনুসারীদের আকীদা।
কতিপয় সুফীবাদের মাশায়েখ এমতকে সমর্থন করেন না; বরং তারা এ কথাগুলোর প্রতিবাদ করেন এবং তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানুষ মনে করেন ও তাঁর রেসালাতের স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে তারা রাসূলের কাছে শাফাআত প্রার্থনা করেন, আল্লাহর কাছে তাঁর উসীলা দিয়ে দুআ করেন এবং বিপদে পড়ে রাসূলের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন।
[7] - তবে নবী-রাসূলদের স্বপ্নের মাধ্যমেই শরীয়তের বিধান জারি হতে পারে। সাধারণ মুমিনদের স্বপ্ন দ্বারা কখনই শরীয়তের কোন বিধান সাব্যস্ত হবেনা।