লগইন করুন
হে পাঠক! আপনি কি লক্ষ্য করেন না! কুরআনে কিভাবে আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট করে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে? তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য কুরআনে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। تبارك শব্দটি প্রশস্ততা এবং বৃদ্ধির অর্থ প্রদান করে। এটি تعالى (উঁচু হলেন), تعاظم (মহান হলেন) এবং অনুরূপ শব্দের মতই। সুতরাং تبارك শব্দটি تعالى এর মতই। তাআলা শব্দটি যেমন আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির সর্বোচ্চ উপরে হওয়ার অর্থ বহন করে, তেমনি تبارك শব্দটি আল্লাহ তাআলার বরকতের পূর্ণতা, বড়ত্ব এবং তাঁর বরকতের প্রশস্ততার অর্থ বহন করে। কোনো কোনো সালাফ বরকতের এ অর্থ মুতাবেক تبارك -এর অর্থ করেছেন تعاظم শব্দ দ্বারা। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ تبارك অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সকল বরকত আনয়ন করেছেন। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) সূরা নিসার ৫১নং আয়াতের তাফসীর।
২) সূরা মায়েদার ৬০ নং আয়াতের তাফসীর।
৩) সূরা কাহাফের ২১ নং আয়াতের তাফসীর।
৪) এ অধ্যায়ের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে জিবত এবং তাগুতের প্রতি ঈমানের অর্থ কী? এটা কি শুধু অন্তরের বিশ্বাসের নাম? নাকি জিবত ও তাগুতের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং বাতিল বলে জানা সত্ত্বেও এর পূজারীদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা বুঝায়? ইত্যাদি বিষয় এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৫) ইহুদীদের কথা হচ্ছে, কাফেরদের কুফরী সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও তারা মুমিনদের চেয়ে অধিক সত্য পথের অধিকারী।
৬) এ অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই উম্মতের মধ্যে অবশ্যই মূর্তি পূজারীদের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। আবু সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।[9]
৭) এ রকম সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুস্পষ্ট ঘোষণা। অর্থাৎ এই উম্মতের অনেক লোকের মধ্যে মূর্তিপূজা পাওয়া যাবে।
৮) সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এমন লোকের আবির্ভাব হবে, যারা নবুওয়াতের দাবী করবে। যেমন দাবী করেছিল ‘‘মুখতার ছাকাফী’’। অথচ সে আল্লাহর তাওহীদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতকে স্বীকার করত। সে নিজেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর অন্তর্ভূক্ত বলেও ঘোষণা করত। সে আরও ঘোষণা দিত যে, রাসূল সত্য, কুরআন সত্য এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী হিসেবে স্বীকৃত। এগুলোর স্বীকৃতি প্রদান সত্ত্বেও তার মধ্যে উপরোক্ত স্বীকৃতির সুস্পষ্ট বিপরীত ও পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ভন্ড মুর্খ সাহাবায়ে কেরামের শেষ যুগে আবির্ভূত হয়েছিল এবং অনেক লোক তার অনুসারীও হয়েছিল।
৯) সু-খবর হচ্ছে, অতীতের মত হক সম্পূর্ণরূপে কখনো বিলুপ্ত হবেনা; বরং একটি দল হকের উপর চিরদিনই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
১০) এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে, সংখ্যায় কম হলেও যারা তাদেরকে বর্জন করবে এবং তাদের বিরোধীতা করবে, তারা এ হকপন্থী জামাআতের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
১১) কিয়ামত পর্যন্ত হকপন্থী একটি জামাআত বিদ্যমান থাকবে।
১২) এ অধ্যায়ে অনেকগুলো বড় নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে। যথাঃ ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমের যমীনকে একত্রিত করে দেখিয়েছেন। এ সংবাদ দ্বারা তিনি যে অর্থ করেছেন, তার অর্থ সম্পর্কেও সংবাদ দিয়েছেন। ঠিক তাই সংঘটিত হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের ব্যাপারে ঘটেনি। খ) তাঁকে দু’টি ধনভান্ডার প্রদান করা হয়েছে, -এ সংবাদও তিনি দিয়েছেন। গ) তাঁর উম্মতের ব্যাপারে দুটি দু’আ কবুল হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন এবং তৃতীয় দু’আ কবুল না হওয়ার খবরও জানিয়েছেন। ঘ) তিনি এ খবরও জানিয়েছেন যে, এই উম্মতের উপরে একবার তলোয়ার উঠলে তা আর খাপে প্রবেশ করবেনা। অর্থাৎ সংঘাত শুরু হলে তা আর থামবেনা। ঙ) তিনি আরো জানিয়েছেন যে, উম্মতের লোকেরা একে অপরকে ধ্বংস করবে ও একে অপরকে বন্দী করবে। উম্মতের জন্য তিনি গোমরাহকারী শাসকদের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। চ) এই উম্মতের মধ্য থেকে মিথ্যা ও ভন্ড নবী আবির্ভাবের কথা তিনি জানিয়েছেন। ছ) সাহায্যপ্রাপ্ত একটি হক পন্থীদল সবসময়ই বিদ্যমান থাকার সংবাদ জানিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সংবাদ অনুযায়ী উল্লেখিত সব বিষয়ই হুবহু সংঘটিত হয়েছে। অথচ উপরোক্ত বিষয়ের কোনটিই যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
১৩) একমাত্র পথভ্রষ্ট নেতাদের ব্যাপারেই তিনি শঙ্কিত ছিলেন।[10]
১৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য মূর্তি পূজার অর্থও বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ কাঠের বা পাথরের তৈরি মূর্তির পূজা করা, অলী-আওলীয়াদের মাযার ও কবর পূজা, পাথর পূজা এবং গাছ ইত্যাদির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
«لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ حول ذِى الْخَلَصَةِ وَذُو الْخَلَصَةَ طَاغِيَةُ دَوْسٍ الَّتِى كَانُوا يَعْبُدُونَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ»
‘‘দাওস গোত্রের মহিলাদের নিতম্ব যুল-খালাসার চতুর্দিকে নড়াচড়া না করা পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর যুল খালাসা হচ্ছে দাওস গোত্রের মূর্তি। আইয়্যামে জাহেলিয়াতে তারা এ মূর্তিটির এবাদত করত।
হাদীছের উদ্দেশ্য হচ্ছে আরব গোত্রসমূহের অনেক লোক পুনরায় শির্কে লিপ্ত হবে। তারা আবার মূর্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং মূর্তি পূজার দিকে ফেরত যাবে। এমন কি দাওস গোত্রের মহিলারা যখন যুল খালাসা নামক মূর্তির চতুর্দিকে তাওয়াফ শুরু করবে, তখন ভয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তির কারণে তাদের পাছা (শরীরের নিম্নাংশ) কাপতে থাকবে।
জাহেলী যামানায় দাওস গোত্র যেই মূর্তিটির এবাদত করত, তার নাম যুল খালাসা। সহীহ মুসলিমে আয়শা (রাঃ) হতে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, ততক্ষণ পর্যন্ত দিবা-রাত্রি শেষ হবেনা, যতক্ষণ না লাত এবং উয্যার এবাদত করা হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর এই ভবিষ্যৎ বাণী হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। আরব উপদ্বীপে সাউদ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে যুলখালাসার এবাদত করা হয়েছে। দাওস গোত্রের মহিলারা সেই মূর্তির চার পাশে তাওয়াফও করেছে বলে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।
[10] - উম্মতের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনি আরো অনেক জিনিষের ভয় করেছেন। যেমন তিনি শির্কে আসগারের ভয় করেছেন, মুনাফেকদের ভয় করেছেন এবং কুরআন নিয়ে ঝগড়া করারও ভয় করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার সম্পদ প্রশস্ত করে দেয়া হবে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য তা প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তোমরা দুনিয়ার সম্পদ অর্জনে প্রতিযোগিতা শুরু করবে, যেমন পূর্ববর্তীরা করেছিল এবং তাদেরকে যেমন দুনিয়া লাভের প্রতিযোগিতা ধ্বংস করে দিয়েছিল, তেমনি তোমাদেরকেও ধ্বংস করবে। অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ কথা বলেছেন।