আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা চতুর্থ অধ্যায়: আল্লাহর গুণাগুণ সাব্যস্তকারী আহলে সুন্নাতের উপর আরোপিত বাতিলপন্থীদের কিছু সন্দেহ ও তার জওয়াব ইসলামহাউজ.কম
একাদশ উদাহরণ

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

«وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينه، ولئن استعاذني لأعيذنه»

(আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটতা অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালোবেসে ফেলি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে চায় তবে আমি তাকে অবশ্যই দিই। সে যদি আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে নিশ্চয় আমি তাকে আশ্রয় দিই।)


উত্তর

এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে কিতাবুর রিকাক এর আওতাধীন ৩৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে।[1]

আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আত হাদীসটিকে বাহ্যিক অর্থেই নিয়েছেন, কিন্তু এ হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ কী?

হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ কি এটা যে, আল্লাহ তা‘আলা একজন ওলীর কান, চোখ, হাত ও পা হয়ে যান?

নাকি হাদীটির বাহ্যিক অর্থ এটা যে, আল্লাহ তা‘আলা একজন ওলীর কান, চোখ, হাত ও পাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। যাতে তার অনুভূতি ও আমল আল্লাহ কেন্দ্রিক হয়ে যায়।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রথম কথাটি হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ হতে পারে না। এটা বরং হাদীসটির দাবিগত অর্থও হতে পারে না। আর তা দু‘কারণে:

প্রথম কারণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটতা অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি।’ তিনি আরো বলেছেন যে, ‘সে যদি আমার কাছে চায় তবে আমি তাকে অবশ্যই দিই। সে যদি আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে নিশ্চয় আমি তাকে আশ্রয় দিই।’ এখানে বান্দা ও মাবুদ, নিকটতা অর্জনকরী ও যার নিকটতা অর্জন করা হচ্ছে, যিনি ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসা হচ্ছে, প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনার পাত্র, দাতা ও গ্রহীতা, আশ্রয় প্রার্থী ও আশ্রয়দাতার মধ্যে পার্থক্যটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ হাদীসের অনুপম বক্তব্য ভিন-ভিন্ন দুই সত্তাকে বুঝাচ্ছে, যাদের একজন অন্যজন থেকে আলাদা। অতঃপর একজন অপর জনের গুণ অথবা অপর জনের অংশসমূহের মধ্যে কোনো অংশে পরিণত হতে পারে না।

দ্বিতীয় কারণ

ওলীর কান, চোখ, হাত ও পা- এগুলো হলো ক্ষণস্থায়ী সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য বা অংশ। আর এটা কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি ধারণা করতে পারে না যে, যিনি অনাদি-অনন্ত, তিনি একটি সৃষ্টিজীবের কান, চোখ, হাত ও পায়ে পরিণত হয়ে যাবেন, এ জাতীয় অর্থ তো কল্পনা করতেও মনে ঘৃণার উদ্রেক করে। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়ার জন্যও এ জাতীয় কথা জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করা মুশকিল। অতএব কি করে বলা শুদ্ধ হতে পারে যে এটাই হলো হাদীসের বাহ্যিক অর্থ এবং এ বাহ্যিক অর্থ থেকে সরে আসা হয়েছে? আপনি পবিত্র-মহান হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার, আপনার গুণ বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না, আপনি যেভাবে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন আপনি ঠিক সে রকমই।প্রথম কথাটি বাতিল ও নিষিদ্ধ বলে প্রমাণিত হওয়ার পর দ্বিতীয় কথাটিই শুদ্ধ হিসেবে থেকে যায়। আর তা হলো, আল্লাহ তা‘আলা ওলীর কান, চোখ ও আমলকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। এমনভাবে যে, তার কান- চোখ দিয়ে অনুভব করা, হাত-পা দিয়ে কাজ করা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, সে সাহায্য চাইলে কেবল আল্লাহর কাছেই চায়, ইত্তিবা ও বিধিবিধান পালন শুধু আল্লাহর জন্যই হয়ে যায়। অতএব পরিপূর্ণ ইখলাস, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং শরীয়ত ও বিধান পালন এসবগুলোই তার মধ্যে পূর্ণাঙ্গরূপে একত্র হয়। আর এটাই হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তাওফীক। সালাফগণ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা এভাবেই দিয়েছেন। এ ব্যাখ্যাটি হাদীসের শব্দমালার যে বাহ্যিক অর্থ রয়েছে তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। হাদীসটির কন্টেক্সট থেকে যে প্রকৃত অর্থ বুঝা যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ব্যাখ্যা কোনো তাবিল-নির্ভর ব্যাখ্যা নয়। এ ব্যাখ্যায় বাহ্যিক অর্থ থেকে দূরে চলে যাওয়াও হয়নি। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও শুকরিয়া।

>
[1] - বুখারী, হাদীস নং (৬৫০২)