যে সকল হারামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে থাকে ৪৮. বাদ্যযন্ত্র ও গান ইসলামহাউজ.কম
বাদ্যযন্ত্র ও গান

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ﴾ [لقمان: ٦]

“মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথা খরিদ করে” [সূরা লুক্বমান, আয়াত: ৬]

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে।[1]

আবু আমির ও আবু মালিক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ»

“অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে”।[2]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: «إِذَا ظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الخُمُورُ»

“অবশ্যই এ উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে”।[3]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন[4] এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন।[5]

পূর্বসূরি আলেমগণ যেমন ইমাম আহমাদ রহ. প্রমুখ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনা এবং তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম। যেমন সারেঙ্গী, তানপুরা, রাবাব, মন্দিরা, বাঁশি, ফ্লুট বাঁশি, তবলা ইত্যাদি।

আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধ বাণীর আওতায় পড়ে। যেমন, বেহালা, একতারা, দোতারা, তার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডেলিন ইত্যাদি। এ যন্ত্রগুলো বরং হাদীসে নিষিদ্ধ তৎকালীন অনেক যন্ত্র থেকে অনেক বেশি মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম ও অন্যান্যরা বলেছেন।

আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যাবে, হারামও কঠিন হবে। সেই সাথে গানের কথাগুলো যদি প্রেম-ভালোবাসা, রূপচর্চা, যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি বিষয়ে হয় তাহলে তো মুসীবতের কোনো শেষ নেই।এ কারণেই আলেমগণ বলেছেন, গান ব্যভিচারের বার্তাবাহক এবং অন্তরে কপটতা সৃষ্টিকারী। মোটকথা, বর্তমান কালে গানের কথা, সুর ও বাদ্য এক বিরাট ফিতনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিকের এ সর্বগ্রাসী থাবা এখন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা ঘড়ি, ঘন্টা, ভেঁপু, শিশুখেলনা, কম্পিউটার ও টেলিফোন ও মোবাইলের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছে। মনের দৃঢ় সংকল্প না থাকলে এসব থেকে বাঁচা বড়ই দুষ্কর। ‘আল্লাহই সাহায্যস্থল’।

>
[1] তাফসীরে ইবন কাছীর ৬/৩৩৩ পৃ:।

[2] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৫৩৪৩।

[3] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৮৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২২০৩।

[4] বায়হাক্বী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫০৩; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ১৭৪৭-৪৮।

[5] তিরমিযী, হাদীস নং ১০০৫; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫১৯৪।