যে সকল হারামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে থাকে ৪১. সন্তানদের উপহার প্রদানে সমতা রক্ষা না করা ইসলামহাউজ.কম
সন্তানদের উপহার প্রদানে সমতা রক্ষা না করা

আমাদের সমাজে এমন অনেক মাতা-পিতা আছেন, যারা এক সন্তানকে ‘হেবা’ বা উপহার দিলে অন্যান্য সন্তানকে দেন না। নিয়ম হলো, সন্তানদের সবাইকে বিশেষ কোনো উপহার সমান হারে দিতে হবে; আর না হলে কাউকে দেওয়া যাবে না। নিয়ম লঙ্ঘন করে সন্তানবিশেষকে দেওয়া ও অন্যদের বঞ্চিত করা ঠিক নয়। শর‘ঈ কারণ ব্যতীত এরূপ দান করলে তা হারাম বলে গণ্য হবে। শর‘ঈ কারণ বলতে সন্তানদের একজনের এমন প্রয়োজন দেখা দিয়েছেন, যা অন্যদের নেই। যেমন, সে অসুস্থ কিংবা বেকার অথবা ছাত্র কিংবা সংসারে তার সদস্য সংখ্যা অনেক তথা সে পোষ্য ভারাক্রান্ত অথবা সে কুরআন মুখস্থ করেছে তাই উৎসাহ ধরে রাখতে কিছু দেওয়া ইত্যাদি। পিতা এরূপ শর‘ঈ কারণবশতঃ কোনো সন্তানকে কিছু দেওয়ার সময় নিয়ত করবে যে, অন্য কোনো সন্তানের যদি এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তাকেও তিনি তার প্রয়োজন মত দিবেন। এ কথার সাধারণ দলীল আল্লাহর বাণী:

﴿ٱعۡدِلُواْ هُوَ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ﴾ [المائ‍دة: ٨]

“তোমরা সুবিচার কর। ইহা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮]

আর বিশেষ দলীল হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস। একদা নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পিতা তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘আমি আমার এ পুত্রকে একটা দাস দান করেছি’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বললেন, ‘তোমার সকল সন্তানকে কি তার মত করে দান করেছ? পিতা বললেন, ‘না’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে উক্ত দান ফেরত নাও’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বাড়ী ফিরে এসে ঐ দাস ফেরত নেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ»

“তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী করো না। কেননা যুলুমের সাক্ষী আমি হতে পারি না”।[1]

কোনো কোনো পিতাদের দেখা যায় যে, তারা সন্তান বিশেষকে অহেতুক অগ্রাধিকার দানে আল্লাহকে ভয় করেন না। এর ফলে সন্তানদের মধ্যে মন কষাকষির সৃষ্টি হয়। তারা একে অপরের প্রতি শত্রু ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। কখনো কোনো সন্তানকে পিতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়, অন্য সন্তানকে মাতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য বঞ্চিত করা হয়। এক স্ত্রীর সন্তানকে দেওয়া হয়, অন্য স্ত্রীর সন্তানদের দেওয়া হয় না। আবার অনেক সময় তাদের একজনের সন্তানদেরকে বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়, কিন্তু অন্যজনের সন্তানদের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর কুফল অচিরেই ঐসব মাতা-পিতাকে ভোগ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঐসব বঞ্চিত সন্তান ভবিষ্যতে তাদের পিতার সঙ্গে সদাচরণ করে না।

সন্তানদের মধ্যে দান-দক্ষিনায় কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فَلَا أَشْهَدُ عَلَى شَيْءٍ، أَلَيْسَ يَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي الْبِرِّ سَوَاءً؟»

“তোমার সন্তানেরা তোমার সাথে সমান সদাচরণ করুক তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না”?[2]সুতরাং সন্তানদের প্রতি দান-দক্ষিণায় সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য।

>
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬২৩; মিশকাত, হাদীস নং ৩০৯০।

[2] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩৭৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪২।