ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত পঞ্চম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ: যে সব কাজ হাজ্জ বা উমরাহ অবস্থায় নিষেধ করা হয়েছে তা হল তিন প্রকার:

(১) এমন কতিপয় কাজ যা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য হারাম।

(২) এমন কতিপয় কাজ যা শুধুমাত্র পুরুষদের প্রতি হারাম।

(৩) এমন কিছু কাজ যা শুধুমাত্র নারীদের প্রতি হারাম।

প্রথমত: এমন সব কাজ যা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য হারাম, তা হলো (সাতটি) :

১. মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা কিংবা উঠিয়ে ফেলা। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(وَلاَ تَحْلِقُواْ رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ )البقرة 196

আর কুরবানী যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত নিজেদের মস্তক মুণ্ডন করো না।[1]

বিদ্যানগণ শরীরের সমস্ত চুলকে মাথার চুলের উপর ক্বিয়াস করেছেন। তাই ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জন্য শরীরের কোন চুল দূর করা জায়েয নয়। আর মহান আল্লাহ পাক মাথা মুণ্ডনের ফিদয়া এ আয়াতে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ

তবে তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মাথায় যন্ত্রণাগ্রস্ত, সে সিয়াম (তিনটি সিয়াম) কিংবা সাদাক্বা (৬ জন মিসকিনকে অর্ধ সা‘ করে খাদ্য প্রদান) বা কুরবানী দ্বারা ফিদয়া দিবে।[2]

  • আর প্রিয় নাবী (সা.) স্পষ্ট করেছেন যে, সিয়ামের সংখ্যা হচ্ছে তিন দিন। আর সাদাক্বার পরিমাণ হচ্ছে তিন সা’ খাদ্য দ্রব্য ছয় মিসকীনের জন্য। প্রত্যেক মিসকীনকে আধা সা’ করে প্রদান করবে।[3] আর কুরবানী হচ্ছে একটি ছাগল, তা এমন বয়সের হবে যা হাদীর (কুরবানী) ক্ষেত্রে আবশ্যক এবং যেন তা উপরোক্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হয়। এই ফিদয়াকে ওলামায়ে কিরামগণ ‘ফিদয়াতুল আযা’ (যন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তির মুক্ত হওয়ার উপায়)। এ নাম উপরোক্ত আয়াতের অংশ থেকে নেয়া হয়েছে:

فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ

তবে তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মাথায় যন্ত্রণাগ্রস্ত হবে ..।

২. ইহরামের অবস্থায় নখ কাটা বা নখ উঠিয়ে ফেলা। এ বিষয়টিকে ওলামায়ে কিরামগণের প্রসিদ্ধ মতে মাথা মুণ্ডনের উপর ক্বিয়াস করা হয়েছে। (যা সূরাহ্ বাক্বারার আয়াত নং ১৯৬ তে উল্লেখিত হয়েছে।) হাতের নখ এবং পায়ের নখের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে যদি কোন একটি নখ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কষ্ট অনুভব হয় তাহলে কষ্টদায়ক অংশটুকু কেটে ফেলে দিলে কোন অসুবিধা নেই এবং তাতে কোন ফিদয়াও লাগবে না।

৩. ইহরাম করার পর ইহরামের কাপড়ে কিংবা শরীরে অথবা এমন কিছুতে যা শরীরের সাথে লেগে তাকে তাতে সুগন্ধি ব্যবহার করা।

এর প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.)-এর বর্ণিত হাদীস, নাবী (সা.) মুহরিম (ইহরামকারী ব্যক্তি) সম্পর্কে বলেন:

لَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ الْقَمِيصَ وَلَا الْعِمَامَةَ وَلَا السَّرَاوِيلَ وَلَا الْبُرْنُسَ وَلَا ثَوْبًا مَسَّهُ زَعْفَرَانٌ وَلَا وَرْسٌ

মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ী, পাজামা, বুরনুস (মাথা ঢাকা জামা) পরিধান করবে না এবং এমন কাপড় যাতে জা’ফরান বা ওয়ার্স নামক সুগন্ধিযুক্ত ঘাস স্পর্শ করেছে।[4]

আরো নাবী (সা.) আরাফায় অবস্থানকালে যেই মুহরিম সাহাবীকে উঁটে মেরে ফেলেছিল তাঁর সম্পর্কে বলেন: সুগন্ধি তার নিকটে নিয়ে যাবে না। আর এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন: সে কিয়ামতের দিবসে তালবিয়া (লাব্বায়কা .....) পাঠে রত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।[5] এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি লাগানো নিষেধ।

অনুরূপ ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সুগন্ধি নাকে টানা বা আরবী কফীতে (ক্বাহ্ওয়া) জা’ফরান মিশানো, যা কাহ্ওয়ার সাথে বা ঘ্রাণে প্রভাব বিস্তার করে, কিংবা চায়ে গোলাপজল বা এমন কিছু মিশানো যাতে সুগন্ধি হয় জয়েয নয়। তেমনি সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করা জায়েয নয়। তবে ইহরামের পূর্বে যে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয় তা ইহরাম করার পরে অবশিষ্ট থাকলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। কারণ, আয়িশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সিঁথিতে তাঁর ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির চমক দেখতে পেতাম।[6]

৪. নিজের অথবা অপরের বিবাহ বন্ধন করা। এর দলীল নাবী (সা.)-এর বাণী:

(لَا يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ وَلَا يُنْكِحُ وَلَا يَخْطُبُ)

মুহরিম ব্যক্তি (ইহরাম অবস্থায়) নিজে বিবাহ করবে না, কোন মেয়ের অভিভাবক বা উকীল হয়ে বিবাহও দিবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না।[7]

সুতরাং কোন মুহরিম ব্যক্তির জন্য ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার পূর্বে কোন মহিলাকে বিবাহ করা জায়েয নয় এবং কোন মেয়ের ওলী বা উকীল হয়ে বিবাহ দেয়াও জায়েয নয়। অনুরূপ কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠানোও জায়েয নয়। তেমনি কোন মহিলার ইহরামে থাকা অবস্থায় বিবাহ দেয়াও জায়েয নয়। আর যদি ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বন্ধন হয় তাহলে তা বাতিল হবে, শুদ্ধ হবে না। এর দলীল নবী (সা.)-এর হাদীস:

مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ علَيْهِ أمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

কোন ব্যক্তি যদি এমন আমল (কর্ম) করে যা আমাদের আদর্শ মুতাবিক নয় তা প্রত্যাখ্যাত হবে।[8]

৫. যৌন কামনার সাথে চুম্বন দেয়া, স্পর্শ করা কিংবা জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ )البقرة197

হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থঃ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।[9]

আর ‘রাফাস’ (স্ত্রী সম্ভোগ)-এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, সহবাস ও তার পূর্ব কার্যাবলী, যেমন চুম্বন দেয়া, খোঁচা দেয়া, কামভাব নিয়ে রসিকতা করা।

সুতরাং কোন ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জন্য নিজ স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, কামভাব নিয়ে স্পর্শ করা বা খোঁচা দেয়া বা রসিকতা করা জায়েয নয়। আর মহিলা যদি ইহরাম অবস্থায় থাকে তাহলে তার জন্য স্বামীকে এ ধরণের সুযোগ দেয়াও জায়েয নয়। এমন কি কামভাব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের দিকে তাকানোও হালাল নয়; কারণ, ইহাও স্পর্শের মতই সম্ভোগের অন্তর্ভুক্ত।

৬. সহবাস করা। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

(فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ) البقرة197

অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হজ্জ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।[10]

আর স্বামী-স্ত্রী মিলন হচ্ছে হাজ্জ ও উমরাহ অবস্থায় সর্বাধিক বড় নিষিদ্ধ কাজ। যার দুটি অবস্থা হতে পারে:

প্রথম অবস্থা: প্রাথমিক হালাল হওয়ার পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি সহবাসে লিপ্ত হয়, তাহলে তার প্রতি দুটি বিষয় আবশ্যক হবে।

(ক) ফিদয়া (গুনাহ্ হতে মুক্তিপণ) ওয়াজিব হবে। আর তা হলো, এমন একটি উঁট অথবা গরু কুরবানী করা যাতে কুরবানীর পশুর আবশ্যক গুণাবলী যেন বিদ্যমান থাকে। এই কুরবানী যবহ করে নিজে না খেয়ে সম্পূর্ণ মাংস অভাবীদের মাঝে বন্টন করে দিবে।

(খ) যেই হাজ্জে সহবাস হয়েছে সে হাজ্জ বিনষ্ট হয়ে যাবে, অতএব তাকে অবিলম্বে আগামি বছর সেই হাজ্জ কাজা করতে হবে।

ইমাম মালিক (রহঃ) মুওয়াত্তা নামক হাদীস গ্রন্থে বলেন, আমার নিকট এ হাদীস পৌঁছেছে যে, উমার, আলী এবং আবূ হুরায়রা (রা.)-কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে ইহরাম অবস্থায় নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে? তাঁরা সকলে বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে গিয়ে এবারের বাকী হাজ্জের কাজগুলি সম্পূর্ণ করবে, অতঃপর আগামি বছর হাজ্জ কাজা করবে এবং হাদী (কুরবানী) যবহ করবে।

ইমাম মালিক আরো বলেন যে, আলী (রা.) বলেছেন, আগামি বছর যখন স্বামী-স্ত্রী হজ্জ কাজা করবে তখন তারা যেন একে অপর থেকে পৃথক থাকে। এছাড়া অন্য কোন নিষিদ্ধ কাজের কারণে হজ্জ বিনষ্ট হয় না।

দ্বিতীয় অবস্থা: সহবাস যদি প্রাথমিক হালাল হওয়ার পর হয়ে থাকে, অর্থাৎ বড় জামরাকে কঙ্কর নিক্ষেপ করার এবং মাথা মুণ্ডনের পর এবং তাওয়াফ ইফাযার (যিয়ারাহ) পূর্বে হয়, তাহলে তার হাজ্জ শুদ্ধ হবে, কিন্তু তার প্রতি প্রসিদ্ধ মতে দুটো কাজ আবশ্যক হবে:

(ক) একটি ছাগলের ফিদয়া, যা যবহ করে নিজে না খেয়ে সম্পূর্ণ মাংস অভাবীদের মাঝে বন্টন করে দিবে।

(খ) হারামের সীমানা অতিক্রম করে হালাল এলাকায় গিয়ে ইহরামের নবায়ন করবে এবং সিলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করে ইহরাম অবস্থায় এসে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ইফাযা (যিয়ারাহ) করবে।

৭. ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ হল, শিকার করা।

আর শিকারী পশু হচ্ছে এমন স্থলচর প্রাণী যা খাওয়া হালাল কিন্তু তা সাধারণতঃ মানুষের পোষ মানে না। যেমন, হরীণ, খরগোশ এবং পায়রা। ইহরাম অবস্থায় স্থলচর প্রাণীর শিকার করা হারাম হওয়ার দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُماً )المائدة 96

আর ইহরাম অবস্থায় থাকা পর্যন্ত স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে।[11] আরো আল্লাহ তা’আলা বলেন:

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقْتُلُواْ الصَّيْدَ وَأَنتُمْ حُرُمٌ )المائدة 95

ওহে বিশ্বাসীগণ! ইহরাম অবস্থায় তোমরা শিকারকে হত্যা করো না।[12]

সুতরাং কোন মুহরিম ব্যক্তির জন্য আয়াতে বর্ণিত শিকারী পশু শিকার করা জায়েয নয়, তা সরাসরি হত্যা করা হোক, অথবা তার হত্যার কারণ হওয়া কিংবা ইশারা-ইংগীতের মাধ্যমে হত্যার জন্য সহায্য-সহযোগিতা করা হোক বা তা হত্যার জন্য নিজ অস্ত্র অপর ব্যক্তিকে প্রদান করাই হোক।

তবে শিকারী পশুর মাংস খাওয়া তিন ভাগে বিভক্ত হতে পারে:

প্রথম অবস্থা: কোন শিকারী পশু যদি মুহরিম ব্যক্তি নিজেই হত্যা করে কিংবা তা হত্যা করায় অংশ নেয় তাহলে উক্ত শিকারী পশুর মাংস মুহরিম ব্যক্তির এবং অন্যদের জন্যও হারাম।

দ্বিতীয় অবস্থা: শিকারী পশু যদি কোন হালাল ব্যক্তি কোন মুহরিম ব্যক্তি সাহায্য নিয়ে শিকার করে, যেমন, মুহরিম ব্যক্তি যদি শিকারী পশুর সন্ধান দেয় কিংবা শিকারকারী ব্যক্তিকে শিকার করার জন্য অস্ত্র প্রদান করে তাহলে উক্ত পশু মুহরিম ব্যক্তি জন্য হারাম তবে অন্যের জন্য হারাম নয়।

তৃতীয় অবস্থা: কোন হালাল ব্যক্তি যদি মুহরিম (ইহ্রামের অবস্থায় থাকা) ব্যক্তির জন্য শিকার করে তাহলে তা মুহরিম ব্যক্তির জন্য হারাম হবে। কিন্তু অন্যদের জন্য তা হারাম হবে না। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

صَيْدُ الْبَرِّ لَكُمْ حَلَالٌ مَا لَمْ تَصِيدُوهُ أَوْ يُصَدْ لَكُمْ

স্থলচর শিকারী পশু-পাখী তোমাদের (মুহরিম ব্যক্তির) জন্য হালাল, তবে তা যেন তোমরা নিজে শিকার না কর বা তোমাদের উদ্দেশ্যে যেন তা শিকার করা না হয়।[13]

আরো আবূ কাতাদাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি হালাল অবস্থায় একটি নীল গাভী শিকার করেন তখন তাঁর সাথীরা ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর তাঁরা তা হতে খান, কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁদের সংশয় হয়, তখন তাঁরা নাবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, উত্তরে তিনি (সা.) বলেন: কোন (মুহরিম) ব্যক্তি তাকে শিকারী পশু সম্পর্কে ইশারা-ইংগীত করেছিল বা তাকে কোন (মুহরিম) ব্যক্তি ইহা শিকার করার নির্দেশ দিয়েছিল কি? তাঁরা বললেন, না (তা কেউ করেনি)। তিনি (সা.) বললেন: তাহলে তা তোমরা খেয়ে নাও।[14]

আর যদি কোন মুহরিম ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কোন শিকারী পশুকে হত্যা করে তাহলে তাকে তার বিনিময় দিতে হবে। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(وَمَن قَتَلَهُ مِنكُم مُّتَعَمِّداً فَجَزَاء مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْياً بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَو عَدْلُ ذَلِكَ صِيَاماً لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمْرِهِ )المائدة95

আর জেনে বুঝে তোমাদের কেউ হত্যা করলে তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। যে ব্যাপারে তোমাদের মধ্যের ন্যায়পরায়ণ দু’জন লোক ফায়সালা করে দেবে, তা কা’বাতে কুরবানী করার জন্য পাঠাতে হবে। কিংবা তার কাফফারা হলো কয়েকজন মিসকিনকে খাদ্যদান অথবা তদনুরূপ সিয়াম পালন, যেন সে স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভোগ করে।[15]

সুতরাং কেউ যদি কোন পায়রাকে হত্যা করে তাহলে তার অনুরূপ হচ্ছে ছাগল। সুতরাং সে ব্যক্তি নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি আদায় করতে পারবে:

(১) একটি ছাগল যবহ করে পায়রার ফিদয়া স্বরূপ গরীব-দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ করে দিবে,

(২) ছাগলের মূল্য ধরে টাকা দিয়ে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধ সা’ করে প্রদান করবে। অথবা

(৩) প্রত্যেক মিসকীনের অন্নদানের বিনিময়ে একটি করে সিয়াম রাখবে।

আর গাছ কাটার বিষয়টি ইহরামের কারণে কোন মুহরিম ব্যক্তির প্রতি হারাম হয় না। কেননা ইহা ইহরাম সংক্রান্ত বিধান নয়। তবে যে ব্যক্তি হারামের সীমানার ভিতরে অবস্থান করবে তার প্রতি গাছ কাটা হারাম, সে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় থাক বা নাই থাক। অতএব আরাফায় মুহরিম ও যে মুহরিম নয় উভয় ব্যক্তির জন্য গাছ কাটা জায়েয। কিন্তু মুয্দালিফা এবং মিনায় উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্য গাছ কাটা হারাম। কারণ, আরাফা হচ্ছে হারাম সীমানার বাইরে পক্ষান্তরে মুয্দালিফা এবং মিনা হচ্ছে হারাম সীমানার ভিতরে।

এ সাতটি নিষিদ্ধ কাজ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য ইহরাম অবস্থায় হারাম।

আর দু’টি বিষয় এমন রয়েছে যা ইহরাম অবস্থায় শুধু মাত্র পুরুষদের জন্য হারাম। আর তা হলো:

১. মাথা ঢাকা। এর প্রমাণ নাবী (সা.)-এর বাণী ঐ মুহরিম ব্যক্তির বিষয়ে যাকে আরাফায় অবস্থানকালে তার সাওয়ারী উষ্ট্রী মেরে দিয়েছিল:

اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ وَلَا تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ

তোমরা তাকে পানি ও কুল পাতা দ্বারা গোসল দাও ও তাকে তার (ইহরামের) দুটো কাপড়েই কাফন দাও এবং তার মাথা ঢাকিও না।[16]

সুতরাং কোন পুরুষ ব্যক্তির জন্য ইহরাম অবস্থায় এমন কিছু দ্বারা মাথা ঢাকা জায়েয নয়, যা মাথার সাথে লেগে থাকে, যেমন পাগড়ী, বিভিন্ন প্রকারের টুপী ও রূমাল ইত্যাদী। তবে এমন কিছু দ্বারা মাথা ঢাকা যা মাথার সাথে লেগে থাকে না তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন ছাতা, গাড়ীর ছাদ ও তাঁবু ইত্যাদী।

এর দলীল উম্মে হুসায়ন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের বছর হজ্জ করেছি। অতঃপর তাঁকে জামরাহ আকাবায় কঙ্কর মারার সময় অতঃপর সাওয়ারীর উপর চেপে ফিরে আসার সময় দেখি। তাঁর সঙ্গে বেলাল (রা.) এবং ওসামা (রা.) ছিলেন। তাঁদের একজন নাবী (সা.)-এর সাওয়ারীর (উষ্ট্রী) রসী ধরে টানছিলেন এবং অপর ব্যক্তি নাবী (সা.)-এর মাথার উপর নিজ কাপড় উঠিয়ে রৌদ্র হতে ছায়া করছিলেন।[17]

আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী (সা.)-এর জামরাহ আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তাঁকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া করছিলেন। তবে ইহরাম অবস্থায় মাথায় বোঝা উঠানো জায়েয, যদিও তাতে মাথার কিছু অংশ ঢেকে যায়। কারণ, মাথার বোঝা দিয়ে তা ঢাকার উদ্দেশ্য করা হয় না। তেমনি পানিতে ডুব দেয়া জায়েয, যদিও পানিতে মাথা ঢেকে যাচ্ছে।

২. ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা। ইহা বিশেষ করে পুরুষদের জন্য হারাম। আর সেলাইকৃত কাপড়ের অর্থ হল, এমন কাপড় যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের গঠনে তৈরী করা হয়। তা পুরো শরীরেই থাক, যেমন মাথা ঢাকা জুববা এবং আরবী জুববা, কিংবা শরীরের কিছু অংশেই তা হোক, যেমন পাজামা, প্যান্ট, গেঞ্জী, আণ্ডার প্যান্ট, চামড়ার মোজা, কাপড় মোজা, হাত বা পায়ের মোজা।

এর দলীল আব্দুল্লাহ বিন উমারের বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন যে, নাবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, মুহরিম ব্যক্তি কোন ধরণের কাপড় পরিধান করতে পারবে? তিনি উত্তরে বলেন :

لَا يَلْبَسُ الْقَمِيصَ وَلَا الْعِمَامَةَ وَلَا السَّرَاوِيلَ وَلَا الْبُرْنُسَ وَلَا الْخِفَافَ وَلَا ثَوْبًا مَسَّهُ الْوَرْسُ أَوْ الزَّعْفَرَانُ

(ইহরাম অবস্থায়) জামা, পাগড়ী, পাজামা-প্যান্ট এবং মাথা ঢাকা জুববা পরিধান করবে না। এর এমন কাপড় পরিধান করবে না যাকে ওয়ার্স নামক ঘাসের বা জা’ফরানের সুগন্ধী স্পর্শ করেছে।[18]

তবে কোন ব্যক্তির নিকট যদি সেলাই বিহীন কাপড় এবং তা ক্রয় করার পয়সাও না থাকে তাহলে জামা ও পায়জামা পরিধান করতে পারবে। তেমনি যদি স্যান্ডেল এবং তা ক্রয় করার পয়সাও না থাকে তাহলে মোজা পরিধান করতে পারবে। আর এ জন্য তার প্রতি কোন ফিদয়া ওয়াজিব হবে না। এর দলীল আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে আরাফার খুতবায় বলতে শুনেছি: কারো যদি (ইহরাম অবস্থায়) সেলাই বিহীন লুঙ্গী না থাকে তাহলে সে যেন পায়জামা পরিধান করে। আর যদি স্যান্ডেল না থাকে তাহলে যেন মোজা পরিধান করে।[19]

কোন ব্যক্তি যদি জামা পরিধান না করে তা নিজ শরীরে জড়িয়ে নেয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। তেমনি যদি জুববা বা আলখাল্লাকে শরীরে পরিধান না করে তাকে চাদররূপে ব্যবহার করা হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপ রিপুকৃত চাদর বা লুঙ্গী পরিধান করলে কোন আপত্তি নেই। তেমনি যদি কোন ব্যক্তি নিজ ইহরামের কাপড়ে সুতা দ্বারা গিরা দেয় বা পিন ব্যবহার করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। এই ভাবে যদি কোন ব্যক্তি আঙ্গটি, হাত ঘড়ি, চশমা এবং শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করে, কিংবা নিজ কাঁধে মশক বা ব্যাগ ঝুলায় তাতে কোন অসুবিধা নেই।

অনুরূপ কেউ যদি প্রয়োজনে -যেমন খুলে পড়ার আশঙ্কা- নিজ চাদরে গিরা দিয়ে বেঁধে রাখে তাহলে কোন আপত্তি নেই। কারণ, এসব ব্যাপারে রসূল (সা.) হতে কোন বাধা-নিষেধ বর্ণিত নেই। আর যে সব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার অর্থও বহন করে না, (সুতরাং তার উপর কিয়াসও করা যাবে না।)

নাবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, মুহরিম ব্যক্তি কোন ধরণের পোশাক পরিধান করতে পারবে? তখন উত্তরে নাবী (সা.) বলেন:

لَا يَلْبَسُ الْقَمِيصَ وَلَا الْعِمَامَةَ وَلَا السَّرَاوِيلَ وَلَا الْبُرْنُسَ وَلَا الْخِفَافَ

(ইহরাম অবস্থায়) জামা, পাগড়ী, পাজামা-প্যান্ট এবং মাথা ঢাকা জুববা পরিধান করবে না।[20]

নাবী (সা.) জবাবে এমন কপড়ের কথা বলেন, যা পরিধান করা যাবে না, যা প্রমাণ করে যে, উল্লিখিত কাপড় ছাড়া সমস্ত রকমের কাপড় মুহরিম ব্যক্তি পরিধান করতে পারবে। আর নাবী (সা.) মুহরিম ব্যক্তি নিকট জুতো-স্যাণ্ডেল না থাকলে পায়ের রক্ষার জন্য মোজা পরিধান করার অনুমতি দিয়েছেন। তেমনি চক্ষুর সুরক্ষার উদ্দেশ্যে চশমা পরিধান করা জায়েয। উপরোক্ত দু‘টি নিষিদ্ধ কাজ শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য।

পক্ষান্তরে মহিলারা মাথা ঢাকবে এবং ইহরাম অবস্থায় যে কোন কাপড় পরিধান করবে। তবে তারা অলঙ্কার ও সাজ-সজ্যা প্রকাশ করবে না, হাত মোজা পরিধান করবে না, মুখমণ্ডলের উপর নিকাব (ফাটল বিশিষ্ট পর্দা) পরিধান করবে না এবং সামনে নিকটে কোন অপর পুরুষ না থাকলে মুখমণ্ডলও আবৃত করবে না। তবে পুরুষ মানুষ সামনে পড়লে মুখমণ্ডল ওড়না লটকিয়ে ঢেকে নিবে। কারণ, অপর পুরুষদের সামনে মহিলাদের চেহারা খোলা জায়েয নয়।

আর পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য ইহরাম অবস্থায় এমন কাপড় দ্বারা কাপড় বদল করা জয়েয যা তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ নয়।

আর যদি কোন ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তি উপরোক্ত নিষিদ্ধ কাজের কোন একটি করে ফেলে, যেমন সহবাস, শিকার করা বা অন্য কিছু, তাহলে তার তিনটি অবস্থা হতে পারে:

প্রথম অবস্থা: ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ ভুলে গিয়ে বা অজ্ঞাতা বশতঃ কিংবা বাধ্য হয়ে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় করে ফেলেছে, তাহলে তার উপর কোন দোষ নেই, কোন গোনাহও হবে না, কোন ফিদয়াও (ক্ষতিপুরণ) লাগবে না এবং হাজ্জ উমরাও বিনষ্ট হবে না। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا) البقرة 286

হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করো না।[21] আরো আল্লাহর বাণী:

(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ ) الأحزاب5

আর তোমাদের কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তোমাদের কোন গোনাহ্ নেই, কিন্তু (ধর্তব্য হল) তোমাদের অন্তরের সংকল্প।[22] আরো আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

(مَن كَفَرَ بِاللّهِ مِن بَعْدِ إيمَانِهِ إِلاَّ مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالإِيمَانِ وَلَـكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْراً فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ) النحل106

কোন ব্যক্তি তার ঈমান গ্রহণের পর আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে এবং কুফরীর জন্য তার হৃদয় খুলে দিলে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে আর তার জন্য আছে মহা শাস্তি, তবে তার জন্য নয় যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয় অথচ তার অন্তর ঈমানের উপর অবিচল থাকে।[23]

যখন ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যাকে কুফরী কাজে বা কথায় বাধ্য করা হয়েছে কুফরীর বিধান উঠে যায় তাহলে এর নিম্নের গোনাহসমূহের জন্য বাধ্য করা হলে তাতে অবশ্যই পাকড়াও হবে না। আর এই দলীলগুলি ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ ও অন্যান্য কাজকেও শামিল। যা প্রমাণ করে যে, অপারগ ব্যক্তির উপর থেকে বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ইহরাম অবস্থায় শিকারের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقْتُلُواْ الصَّيْدَ وَأَنتُمْ حُرُمٌ وَمَن قَتَلَهُ مِنكُم مُّتَعَمِّداً فَجَزَاء مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ) المائدة95

ওহে বিশ্বাসীগণ! ইহরাম অবস্থায় তোমরা শিকারকে হত্যা করো না। আর জেনে বুঝে তোমাদের কেউ হত্যা করলে তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু।[24]

এ আয়াতে শিকারের বিনিময় ফরয হওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করার শর্তারোপ করা হয়েছে। আর শাস্তি ও জরিমানার ক্ষেত্রে জেনে বুঝে হত্যার শর্ত যুক্তিযুক্ত বিষয়। আর জেনে বুঝে শিকার না করা হলে তাতে বিনিময়ও নেই এবং কোন গোনাহও নেই। কিন্তু যখনই মুর্খ ব্যক্তি জানতে পারবে, ভুলে যাওয়া ব্যক্তির স্মরণ হবে, ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগরত হবে এবং বাধ্যতা থাকবে না, তখন দ্রুত নিষিদ্ধ কাজ ছেড়ে দেয়া আবশ্যক হবে। আর যদি ওযর দূর হওয়া সত্ত্বেও নিষিদ্ধ কাজ করতে থাকে তবে সে গোনাহগার হবে এবং তার প্রতি ফিদয়া বা বিনিময় যা শরিয়তে নির্ধারিত হয়েছে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

উদাহরণ স্বরূপ, ঘুমন্ত অবস্থায় যদি কোন মুহরিম মাথা ঢেকে ফেলে তাহলে ঘুমে থাকা পর্যন্ত তার কোন গোনাহ নেই। তবে জেগে গেলেই তার প্রতি মাথা থেকে কাপড় সরানো আবশ্যক। ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢাকা নিষেধ জানার পরেও যদি কেউ মাথা ঢেকে রাখে তাহলে সে গোনাহগার হবে এবং তার প্রতি ফিদয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় অবস্থা: ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ করল, কিন্তু তা বৈধকারী কোন ওযরের (অসুবিধা) কারণে; তাহলে তার প্রতি নিষিদ্ধ কাজ করার কারণে ফিদয়া ওয়াজিব হবে, কিন্তু কোন গোনাহ হবে না। এর দলীল আল্লাহ তা’আলার বাণী:

(وَلاَ تَحْلِقُواْ رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ )البقرة196

আর কুরবানী যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত নিজেদের মস্তক মুণ্ডন করো না। তবে তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মাথায় যন্ত্রণাগ্রস্ত, সে সিয়াম (তিনটি রোযা) কিংবা সাদাক্বাহ (ছয় মিসকীনের খাবার) বা কুরবানী দ্বারা ফিদয়া দিবে।[25]
তৃতীয় অবস্থা: ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বিনা কোন শরিয়াতী ওযরে ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ করল, তাহলে তার গোনাহ্গার হওয়ার সাথে-সাথে তার প্রতি ফিদয়াও ওয়াজিব হয়ে যাবে।

>
[1] সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৬

[2] সূরা আল-বাক্বারা ২:১৯৬

[3]. সহীহ বুখারী ১৮১৬, সহীহ মুসলিম ১২০১।

[4]. সহীহ বুখারী ৫৭৯৪, সহীহ মুসলিম ১১১৭।

[5]. সহীহ বুখারী

[6]. বুখারী ১৫৩৮ ও মুসলিম

[7]. সহীহ মুসলিম ১৪০৯।

[8]. সহীহ মুসলিম ১৭১৮।

[9]. সুরা বাক্বারা ২ঃ ১৯৭

[10] সুরা বাক্বারা ২ঃ ১৯৭

[11]. সূরা আল-মায়িদাহ ৫ঃ ৯৬

[12]. সূরা আল-মায়িদাহ ৫ঃ ৯৬

[13]. সহীহ লি গাইরিহী: মুসনাদে আহমাদ ১৪৮৯৪, ২২৫২৬, আবূ দাউদ ১৮৫১ ও নাসাঈ ২৮২৭, তিরমিযী ৮৪৬।

[14]. মুসনাদ আহমাদ ও সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম

[15] সূরা আল-মায়িদাহ ৫: ৯৬

[16] সহীহ বুখারী ১২৬৫ ও সহীহ মুসলিম ১২০৬

[17] সহীহ মুসলিম

[18]. সহীহ বুখারী ১৪৩ ও সহীহ মুসলিম

[19]. সহীহ বুখারী ১৮৪৩ ও মুসলিম

[20]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম

[21]. সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২৮৬

[22]. সূরা আল-আহযাব ৩৩ঃ ৫

[23]. সূরা আন্ নাহল: ১০৬

[24]. সূরা মায়িদাহ ৫ঃ ৯৬

[25] সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৬