ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন ছালাতের পরিচয় (صفة صلوات متفرقة) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
৬.৫. মৃত্যু পরবর্তী করণীয় সমূহ (الأعمال بعد الموت)

মৃত্যুর পর পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। যথা গোসল, কাফন, জানাযা, জানাযা বহন ও দাফন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُوْنَهَا إِلَيْهِ، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُوْنَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ ‘তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহ’লে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও’। [65]

(১) মাইয়েতের গোসল (غسل الميت) :

(ক) গোসল ও কাফন-দাফনের ছওয়াব : উক্ত কাজ সমূহে অশেষ ছওয়াব রয়েছে দু’টি শর্তে। এক- যদি তিনি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করেন এবং বিনিময়ে দুনিয়াবী কিছুই গ্রহণ না করেন’ (কাহফ ১৮/১১০)দুই- যদি তিনি মাইয়েতের কোন অপছন্দীয় বিষয় গোপন রাখেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখলো, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’। [66]

(খ) হুকুম: মাইয়েতের দ্রুত গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া সুন্নাত।[67] গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ শালীনতা ও পরহেযগারীর সাথে কুলপাতা দেওয়া পানি বা সুগন্ধি সাবান দিয়ে সুন্দরভাবে গোসল করাবে। সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন। পুরুষ পুরুষকে ও মহিলা মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিবেন। তবে মহিলাগণ শিশুকে গোসল দিতে পারবেন। [68] স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে বিনা দ্বিধায় গোসল করাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘যদি আমার পূর্বে তুমি মারা যাও, তাহ’লে আমি তোমাকে গোসল দেব, কাফন পরাব, জানাযা পড়াব ও দাফন করব’। [69] হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এবং হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামী হযরত আলী (রাঃ) গোসল দিয়েছিলেন।[70] ধর্মযুদ্ধে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না। [71] পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে’।[72]

(গ) গোসলের পদ্ধতি : ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গ সমূহ প্রথমে ধৌত করবে। ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। পূর্ণ পর্দার সাথে মাইয়েতের দেহ থেকে পরনের কাপড় খুলে নেবে। গোসলের সময় লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না বা খালি হাতে স্পর্শ করবে না। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় সমস্ত দেহে পানি ঢালবে। গোসল শেষে কর্পূর বা কোন সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হ’লে চুল খুলে দেবে। অতঃপর বেণী করে তিনটি ভাগে পিছন দিকে ছড়িয়ে দেবে। [73]

(২) কাফন (التكفين) :

সাদা, সুতী ও সাধারণ মানের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া কর্তব্য। তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে। কেননা জীবিত মানুষ নতুন কাপড়ের অধিক মুখাপেক্ষী। পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি মাথা হ’তে পা ঢাকার মত বড় চাদর ও দু’টি ছোট কাপড়। অর্থাৎ একটি লেফাফা বা বড় চাদর। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা। বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে। শহীদকে তার পরিহিত পোষাকে এবং মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কাফনের কাপড়ের অভাব ঘটলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে। কাফনের পরে তিনবার সুগন্ধি ছিটাবে। তবে মুহরিমের কাফনে সুগন্ধি ছিটানো যাবে না।[74] মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ না থাকলে কিংবা তাতে কাফনের ব্যবস্থা না হ’লে কেউ দান করবে অথবা বায়তুল মাল থেকে বা সরকারী তহবিল থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।[75] মহিলাদের জন্য প্রচলিত পাঁচটি কাপড়ের হাদীছ ‘যঈফ’। [76]

(৩) জানাযা (الجنازة) :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মসজিদের বাইরের নির্দিষ্ট স্থানে অধিকাংশ সময় জানাযা পড়াতেন।[77] তবে প্রয়োজনে মসজিদেও জায়েয আছে। সুহায়েল বিন বায়যা (রাঃ) ও তার ভাইয়ের জানাযা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মসজিদের মধ্যে পড়েছিলেন।[78] হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর জানাযা মসজিদের মধ্যে হয়েছিল। [79] মেয়েরাও পর্দার মধ্যে জানাযায় শরীক হ’তে পারেন। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন (রাঃ) মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন।[80] মহিলাগণ একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন। গোরস্থানের মধ্যে জানাযা না করা উচিৎ।[81] সেখানে কোন মসজিদও নির্মাণ করা যাবে না।[82] তবে কেউ জানাযা না পেলে পরে যেকোন দিন গিয়ে কবরে একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন।[83] উল্লেখ্য যে, লাশ পচে গেলে এবং দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়ানো সম্ভব না হ’লে দাফন করার পরে কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া যাবে।[84] একই ব্যক্তি বিশেষ কারণে একাধিক বার জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন বা ইমামতি করতে পারেন।[85]

জ্ঞাতব্য : (ক) বর্তমান যুগে অনেকে দাফনের পরপরই পুনরায় হাত তুলে দলবদ্ধভাবে দো‘আ করেন। কেউ একই দিনে বা দু’একদিন পরে আত্মীয়-স্বজন ডেকে এনে মৃতের বাড়ীতে দো‘আর অনুষ্ঠান করেন। এগুলি নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। জানা আবশ্যক যে, জানাযার ছালাতই হ’ল মৃতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এটা ব্যতীত মুসলিম মাইয়েতের জন্য পৃথক কোন দো‘আর অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতে নেই।

(খ) জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুণ সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয়, সবটাই বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে মৃতের উপর বিলাপধ্বনি করা হয়, কবরে ও ক্বিয়ামতের দিন এজন্য তাকে আযাব দেওয়া হবে’।[86] আর এটা নিঃসন্দেহে ঐ মাইয়েতের জন্য, যে এসব কাজ সমর্থন করে এবং এসব না করার জন্য মৃত্যুর আগে অছিয়ত না করে যায়।[87]

(৪) জানাযা বহন (حمل الجنازة) :

জানাযা কাঁধে বহন করা সুন্নাত।[88] এ সময় মাথা সম্মুখ দিকে রাখবে। [89] মৃতের পরিবারের লোকেরা ও নিকটাত্মীয়গণ এর প্রথম হকদার। এ দায়িত্ব কেবল পুরুষদের, মেয়েদের নয়। জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়। এই সময় সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। ধূপ-ধুনা ইত্যাদি অগ্নিযুক্ত সুগন্ধি বহন করা যাবে না। সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়েতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে। চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না।[90] মাইয়েতের পিছনে কাছাকাছি চলাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে সম্মুখে ও ডাইনে-বামে চলা যাবে। কেউ গাড়ীতে গেলে তাকে পিছে পিছেই যেতে হবে।[91] কোন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি বা মুরববী আলেম জানাযায় যোগদানে সক্ষম না হ’লে মাইয়েতকে তাঁর সামনে এনে রাখা যাবে। যাতে তিনি একাকী হ’লেও জানাযা পড়তে পারেন। যারা জানাযার পিছনে চলবেন, তাদের ওযূ অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব। তবে আবশ্যিক নয়।

বর্তমান যুগে কোন কোন স্থানে জানাযার জন্য গাড়ীতে করে লাশ বহন করতে দেখা যায়। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নিতান্ত বাধ্য না হ’লে একাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা এটা ইহুদী-নাছারাদের অনুকরণ মাত্র। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, عُوْدُوا الْمَرِيْضَ وَاتَّبِعُوا الْجَنَائِزَ تُذَكِّرْكُمُ الْآخِرَةَ- ‘তোমরা রোগীর সেবা কর এবং জানাযার অনুগমন কর। তা তোমাদের আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেবে’।[92] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জানাযার সাথে ফেরেশতাগণ পায়ে হেঁটে চলেন এবং জানাযা শেষে তারা চলে যান। একারণে আমি বাহনে সওয়ার হইনি। এখন তাঁরা চলে গেছেন বিধায় সওয়ার হ’লাম’। [93]

(৫) দাফন (التدفين) :

মুসলিম মাইয়েতকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করতে হবে, ইহুদী-নাছারা ও কাফের-মুশরিকদের সাথে নয়। যাতে তারা মুসলিম যিয়ারতকারীদের দো‘আ লাভে উপকৃত হন। শিরক ও বিদ‘আতপন্থী ব্যক্তির পাশে ছহীহ হাদীছপন্থী মুসলমানের কবর দেওয়া উচিৎ নয়। হযরত জাবের (রাঃ) তাঁর পিতার লাশ অন্য মুসলিমের পাশ থেকে যাকে তিনি অপছন্দ করতেন, ৬ মাস পরে উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করেছিলেন।[94] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর শয়ন কক্ষে দাফন করা হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাছাড়া তাঁর পাশে তাঁর দুই মহান সাথীকে কবর দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ পৃথকভাবে তাঁর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করতে না পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমানগণ যেখানে শহীদ হবেন, সেখানেই কবরস্থ হবেন।[95] মুসলমান যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানকার মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা উচিৎ। তবে সঙ্গত কারণে অন্যত্র নেওয়া যাবে।[96]

কবর উত্তর-দক্ষিণে লম্বা, গভীর, প্রশস্ত, সুন্দর ও মধ্যস্থলে বিঘত খানেক উঁচু করে দু’দিকে ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক উঁচু করা নাজায়েয। ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবর জায়েয আছে। যাকে এদেশে যথাক্রমে ‘পাশখুলি’ ও ‘বাক্স কবর’ বলা হয়। তবে ‘লাহদ’ উত্তম। মাইয়েতকে কবরে নামানোর দায়িত্ব পুরুষদের। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তীগণ ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিগণ এই দায়িত্ব পালন করবেন, যিনি পূর্বরাতে (বা দাফনের পূর্বে) স্ত্রী সহবাস করেননি। পায়ের দিক দিয়ে মোর্দা কবরে নামাবে (অসুবিধা হ’লে যেভাবে সুবিধা সেভাবে নামাবে)। মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে। এই সময় কাফনের কাপড়ের গিরাগুলি খুলে দেবে। [97]

কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ (অর্থ: ‘আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের দ্বীনের উপরে’) বলবে। ‘মিল্লাতে’-এর স্থলে ‘সুন্নাতে’ বলা যাবে। এই সময় কোন সুগন্ধি বা গোলাপ পানি ছিটানো বিদ‘আত। [98] কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে (বিসমিল্লাহ বলে) তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেবে।[99] এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ (ত্বোয়াহা ২০/৫৫) পড়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। [100] অনুরূপভাবে আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বা-নি ওয়া মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরে... পড়ার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।[101]

দাফন চলাকালীন সময়ে কবরের নিকটে বসে কবর আযাব, জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন ও জান্নাতের সুসংবাদের উপরে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে আলোচনা করবে। এই সময় প্রত্যেকে দু’তিনবার করে পড়বে- اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে কবরের আযাব হ’তে পানাহ চাই)।[102]

দাফনের পরে মাইয়েতের ‘তাছবীত’ (التثبيت) অর্থাৎ মুনকার ও নাকীর (দু’জন অপরিচিত ফেরেশতা)-এর সওয়ালের জওয়াব দানের সময় যেন তিনি দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে সকলের দো‘আ করা উচিৎ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’। [103] অতএব এ সময় প্রত্যেকের নিম্নোক্ত ভাবে দো‘আ করা উচিৎ। যেমন,

(১) اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ ‘আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়া ছাবিবতহু’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন ও তাকে দৃঢ় রাখুন’)।[104] অথবা
(২) اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ ‘আল্লা-হুম্মা ছাব্বিতহু বিল ক্বাউলিছ ছা-বিত’ (হে আল্লাহ! আপনি তাকে কালেমা শাহাদাত দ্বারা সুদৃঢ় রাখুন)। এই সময় ঐ ব্যক্তি দো‘আর ভিখারী। আর জীবিত মুমিনের দো‘আ মৃত মুমিনের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় মাইয়েতের তালক্বীনের উদ্দেশ্যে সকলের লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠের কোন দলীল নেই। যেটা শাফেঈ মাযহাবে ব্যাপকভাবে চালু আছে।[105]

(৩) পূর্বে বর্ণিত জানাযার ২ নং দো‘আটি এবং ৩ নং দো‘আটির শেষাংশটুকুও اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرالرَّحِيْمُ (আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম) পড়া যায়। কিন্তু দাফনের পরে একজনের নেতৃত্বে সকলে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা ও সকলের সমস্বরে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।

[65]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৪৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৫।

[66]. ১০৬১. বায়হাক্বী ৩/৩৯৫; ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ; তালখীছ, পৃঃ ৩১।

[67]. বুখারী ১/১৭৬, হা/১৩১৫, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-২৩, অনুচ্ছেদ-৫১।

[68]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৮।

[69]. ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫।

[70]. বায়হাক্বী ৩/৩৯৭; দারাকুৎনী হা/১৮৩৩, সনদ হাসান।

[71]. তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩৩।

[72]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৭; নিসা ৪/৪৩; মায়েদাহ ৫/৬।

[73]. তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩০।

[74]. তালখীছ, পৃঃ ৩৪-৩৭; বায়হাক্বী ৪/৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত ৫/৩৪৩-৪৫।

[75]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭০।

[76]. আলবানী, আবুদাঊদ, হা/৩১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪।

[77]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮২।

[78]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৫৬।

[79]. বায়হাক্বী ৪/৫২।

[80]. মুসলিম হা/৯৭৩; মিশকাত হা/১৬৫৬; বায়হাক্বী ৪/৫১।

[81]. (اَلْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدٌ إِلَّا اَلْمَقْبَرَةَ وَالْحَمَّامَ) আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৭৩৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮২।

[82]. তালখীছ ৫৩ পৃঃ।

[83]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫৮-৫৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৮; বায়হাক্বী ৪/৪৪-৪৯; মির‘আত ৫/৩৯০, ৪৩৩।

[84]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮১।

[85]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫৮; ফাৎহুল বারী হা/১৩৩৬-৩৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-২৩, অনুচ্ছেদ-৬৬; মির‘আত হা/১৬৭২-এর আলোচনা দ্র: ৫/৩৯০।

[86]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৪০-৪২, ‘মৃতের উপর ক্রদন’ অনুচ্ছেদ-৭।

[87]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত শরহ মিশকাত হা/১৭৫৪-এর ভাষ্য, ৫/৪৮২-৮৫ পৃঃ।

[88]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/১৬৪৬-৪৭।

[89]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ১৭/১৬৬ পৃঃ।

[90]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৪৮।

[91]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৬৬৭।

[92]. আহমাদ হা/১১২৮৮; বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৪১০৯; তালখীছ, পৃঃ ৩৮-৪৩ ।

[93]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৬৭২-এর টীকা নং ৪, ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) হ’তে অন্য বর্ণনাও এসেছে; মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৬৬।

[94]. বুখারী হা/১৩৫২ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-২৩, অনুচ্ছেদ-৭৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০০, ৩০২।

[95]. তালখীছ ৫৯-৬০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১-০২।

[96]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০৩।

[97]. বুখারী, মিশকাত হা/১৬৯৫; মির‘আত ৫/৪২৮-২৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯০।

[98]. তালখীছ, পৃঃ ১০২।

[99]. তালখীছ, পৃঃ ৫৮-৬৫, ৬৯; মির‘আত ‘মাইয়েতের দাফন’ অনুচ্ছেদ, ৫/৪২৬-৫৭।

[100]. আহমাদ হা/২২২৪১, সনদ যঈফ; তালখীছ পৃঃ ১০২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয, টীকা দ্রঃ, মাসআলা নং ১০৬ দ্রঃ।

[101]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩, সনদ যঈফ।

[102]. আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৬৩০ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫ অনুচ্ছেদ-৩।

[103]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৩, ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কবর আযাবের প্রমাণ’ অনুচ্ছেদ-৪।

[104]. আবুদাঊদ, হাকেম, হিছনুল মুসলিম, দো‘আ নং ১৬৪।

[105]. মিরক্বাত ১/২০৯; মির‘আত ১/২৩০।