ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - দৈনন্দিন যিকর ওযীফা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
তৃতীয় প্রকার যিকর - তৃতীয় পর্ব: রাতের যিকর-ওযীফা - (২) সালাতুল ইশা

ইশার সালাত থেকে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত সময়ে পালনীয় যিকরগুলি এই পর্যায়ে আলোচনা করব। প্রথমত, সালাতুল ইশার পরের ওযীফা এবং দ্বিতীয়ত, ইশার পর থেকে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত সময়ের ওযীফা।

সালাতুল ইশার পরের যিকর

ইশা’র সালাতের পরে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে আদায়কৃত ওযীফাগুলি পালন করতে হবে। পূর্বোক্ত ৭১ থেকে ৯৯ নং পর্যন্ত ২৯ প্রকার যিকর বা সেগুলি থেকে বেছে কিছু যিকর এই পর্যায়ে পালন করবেন।

ইশার পরে রাতের ওযীফা : দরুদ ও কুরআন

মুমিনের নফল ইবাদতের মূল সময় রাত। সাহাবী - তাবেয়ীগণ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দু‘আ ইত্যাদির ওযীফা নির্ধারিত করে রাখতেন। এগুলি তাঁরা যত্নসহকারে নিয়মিত পালন করতেন।[1]

ইশা’র সালাতের পরেই রাতের প্রথম অংশ। এ সময়ে যে ইবাদত করা হয় তা রাতের ইবাদত বলে গণ্য। কোনো যাকির যদি শেষ রাতে বেশি সময় পাবেন না বলে মনে করেন তাহলে তার ওযীফার একটি অংশ এই সময়ে পালন করতে পারেন। এতেও রাতের ওযীফার সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ কুরআন পাঠ, সালাত (দরুদ) পাঠ, দু‘আ ও মুনাজাত ওযীফা করে নিতে পারেন। উপরে আমরা বেশি বেশি পালন করার মতো যিকরগুলি উল্লেখ করেছি। এসময়ে সেগুলি থেকে কিছু নির্ধারিত করে ওযীফা হিসাবে পালন করা উচিত।


সালাতুল বিতর ও আনুষঙ্গিক যিকর

ইশা’র সালাত আদায়ের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিতির সালাতের সময়। বিতির সালাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় শেষ রাত্র। শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদ সালাতের শেষে বিতির আদায় করা বেশি সাওয়াবের এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আচরিত সুন্নাত। তবে কেউ শেষ রাতে উঠতে পারবেন না বলে সন্দেহ করলে তাঁর জন্য ঘুমানোর আগে বিতির আদায় করা ভালো।

আমরা সাধারণত ইশা’র সালাতের পরপরই বিতির আদায় করে নেই। এতে কোনো দোষ নেই, তবে আমরা দুটি উত্তম সময়ের কোনোটিরই বরকত অর্জন করতে পারলাম না। যারা শেষ রাতে উঠতে পারবেন না বলে ভয় পান তাদের উচিত রাত ১০ বা ১১ টা বা যখনই ঘুমাতে যাওয়ার সময় হবে, তখন ওযু করে সম্ভব হলে কয়েক রাক’আত নফল সালাত আদায় করে এরপর বিতির আদায় করে ঘুমাতে যাওয়া। এতে আমরা কয়েকটি অতিরিক্ত সাওয়াব ও ফযীলত অর্জন করতে পারি :


(ক) দ্বিতীয় উত্তম সময়ে বিতির আদায় : আমরা দেখেছি যে, ইশা’র পরে বিতির আদায় করা জায়েয, কোনো অসুবিধা নেই, তবে বিতিরের সর্বোত্তম সময় শেষ রাত্র এবং দ্বিতীয় উত্তম সময় ঘুমানোর পূর্বে।

(খ) তাহাজ্জুদের সালাতের আংশিক সাওয়াব : এ সময়ের সালাতও রাতের সালাত হিসাবে গণ্য। বিশেষত রাতের একতৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পরে সালাত ও দু‘আর বিশেষ ফযীলত আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।

(গ) ওযু অবস্থায় ঘুমানোর ফযীলত : ঘুমের জন্য ওযু অবস্থায় শয়ন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসনূন ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এজন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং এ জন্য বিশেষ দুটি পুরস্কারের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। একটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

طَهِّرُوا هَذِهِ الأَجْسَادَ طَهَّرَكُمُ اللَّهُ فَإِنَّهُ لَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَبِيتُ طَاهِرًا إِلا بَاتَ مَلَكٌ فِي شِعَارِهِ لا يَنْقَلِبُ سَاعَةً مِنَ اللَّيْلِ إِلا قَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فَإِنَّهُ بَاتَ طَاهِرًا


“তোমরা তোমাদের দেহগুলিকে পবিত্র রাখবে, আল্লাহ তোমাদের পবিত্র করুন। যদি কোনো বান্দা ওযু অবস্থায় ঘুমান, তাহলে তার পোশাকের মধ্যে একজন ফিরিশতা শুয়ে থাকেন। রাত্রে যখনই এই ব্যক্তি নড়াচড়া করে তখনই এই ফিরিশতা বলেনঃ হে আল্লাহ আপনি এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ সে ওযু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।” হাদীসটি হাসান।[2] অন্য হাদীসে মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

ما من امرئ مسلم يبيت طاهرا (على ذكر الله) فيتعار من الليل فيسأل الله من خير الدنيا والاخرة الا أعطاه اياه


“যে কোনো মুসলিম যদি ওযু অবস্থায় (আল্লাহর যিকরের উপর) ঘুমায় ; এরপর রাত্রে কোনো সময় হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে (ঐ অবস্থায় শুয়ে শুয়ে) আল্লাহর কাছে তাঁর জাগতিক বা পারলৌকিক কোনো কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তাঁকে তাঁর প্রার্থিত বস্তু দিবেনই।”[3]


যিকর নং ১২০ : সালাতুল বিতরের পরের যিকর

উবাই ইবনু কা’ব বলেন , রাসূলুল্লাহ (সা.) ৩ রাক’আত বিতর আদায় করতেন, প্রথম রাক’আতে “সাবিবহিস্মা রাব্বিকাল আ’লা”, দ্বিতীয় রাক’আতে “কাফিরূন” ও তৃতীয় রাক’আতে “ইখলাস” পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন। বিতির সালাত শেষ হলে তিনি বার বলতেনঃ

سبحان الملك القدوس


উচ্চারণঃ সুব’হা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।

অর্থঃ “ঘোষণা করছি পবিত্রতা মহান মহা পবিত্র সম্রাটের।” তিনি শেষবারে লম্বা (জোরে শব্দ) করে বলতেন। হাদীসটির সনদ সহীহ।[4]

[1] মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৬/১৪৩, মুখতাসারু কিতাবিল বিতর ১/১৭৩।

[2] সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/৩২৮, তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ১২/৪৬৬, সহীহুত তারগীব ১/৩১৭।

[3] হাদিসটি সহীহ। নাসাঈ, সুনানুল কুবরা ৬/২০২, সুনানু আবী দাউদ ৪/৩১০, নং ৫০৪২, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/২২৩, ২২৬-২২৭, সহীহুত তারগীব ১/৩১৭।

[4] সুনানু আবী দাউদ ২/৬৫, নং ১৪৩০, সুনানুন নাসাঈ ৩/২৩৫, নং ১৬৯৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬/২০৩, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪০৬, নাবাবী, আল-আযকার ১৩৪।